০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবছে না ইসি

সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবছে না ইসি - সংগৃহীত

আলাদা কোনো বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনী মাঠে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে তিন ধরনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৫২ জন, যুগ্ম জেলা জজ থাকবেন ২৪৪ জন। আর জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট থাকবেন ৬৪০জন। তারা নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত মোট ৪ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া এক হাজারের মতো নির্বাহী ম্যাজিট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এরাই মূলত ভোটের মাঠে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন। সেনা সদস্যদের ম্যাজেট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব এসব কথা বলেন।

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশন ভবনে শুক্রবার বিকেলে তার নিজের দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব এমন ব্যাখ্যা দেন। ইসি সচিব বলেন, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।

সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে যে প্রস্তুতি চলেছে তা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন শুধুমাত্র আমাদের মাঠ পর্যায়ে প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ। বাকি সব ধরনের প্রশিক্ষণ আমাদের শেষ হয়ে গেছে। আরেকটি প্রস্তুতি ভেতরে আছে- ব্যালট পেপার তৈরি করা। আমরা আশা করছি, নির্বাচনের ৭ দিন আগে ব্যালট পেপার তৈরি ও তা নির্বাচনী তিনশ’ আসনের পৌঁছাতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায় হাইকোর্ট থেকে কিছু নির্দেশনা আসছে। এই নির্দেশনাগুলোকে সমন্বয় করে ব্যালট পেপার তৈরি করতে হবে। তারপরও নির্বাচনের ৭ দিন আগে ব্যালট পেপার পৌাঁছে যাবে। এরই মধ্যে আমরা ব্যালট পেপার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, রিটার্নিং অফিসারদের কাছে ৭ দিন আগেই ব্যালট পেপার পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।

সচিব জানান, আগামীতে কমিশনারগণ মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কিছু কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেবেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে তিন পার্বত্য জেলার নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসি সমন্বয় সভা করবে। একই দিন বিকালে চট্টগ্রামেও একই ধরনের সমন্বয় সভা হবে।

প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ইসিতে এসে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে যে, তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। এ ধরণের অভিযোগের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, যে সকল প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি অভিযোগই আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আমলে নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠাচ্ছি। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছেও পাঠাচ্ছি। তারা এ সব বিষয় তদন্ত করে দেখছে। বেশ কয়েকটি তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতেও এসেছে। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচেছ, অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই। আর যে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারের আইনশৃঙ্খলা সভায় কমিশনাররা খুব কড়া করে বলছেন, কাউকে অহেতুক কোনো হয়রানি না করা হয় এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে যেন গ্রেফতার না করা হয়।

বিএনপির অভিযোগের সাথে বাস্তবতার কোন মিল কি পাওয়া যাচ্ছে না প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, কমিশন ঐভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, যদি কোন পেন্ডিং ওয়ারেন্ট থাকে এবং তা তামিলে আদালতের কোনো তাগিদ থাকে তাহলে তাদের গ্রেফতার করা যাবে। আসলে ওয়ারেন্টভুক্তরা অনেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। এখন ভোটের মাঠে তারা দৃশ্যমান হয়েছেন। এ কারণে হয়তো পুলিশ তাদের ধরছে বা ধরার চেষ্টা করছে।

সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত পর্যবেক্ষকদের জন্য (স্থানীয় ও বিদেশি) আলাদা আলাদা নীতিমালা রয়েছে। তবে সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের কোন নীতিমালা ইসির নেই।

বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভায় কমিশনাররা বলেছেন, সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। ছবি তুলতে পারবেন। এমনকি ভোটারদের মতামতও নিতে পারবেন। এসব ব্যাপারে কোনা নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধ্যবাধকরা রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানাবো।

ড. কামাল হোসেনের উপর হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কমিশনে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে ইসি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

ভোটের দিনে সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে কিনা প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে যে, ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে ফোন থাকবে এবং পুলিশ ইনচার্জ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যান্যদের কাছে ফোন থাকতে পারে তবে তারা ভোট কক্ষে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে একটা ভীতি আছে। সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন। তবে তা কেন্দ্রের ভেতরে ব্যবহার না করে বাইরে ব্যবহার করতে পারবেন। ভেতরে ব্যবহার করলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন তারাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে উৎসাহী হতে পারে। এ ব্যাপারে একটা বিধি-নিষেধ থাকা প্রয়োজন।

মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে আসলে ভয়টা কোথায়- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ভয়টা কোন বিষয় নয়। এটা হলো যে, নির্বাচনকে যেন কেউ বানচাল না করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। আপনারা জানেন, এবার একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হচ্ছে। সকল রাজনৈতিক দল এতে অংশ গ্রহণ করছে। একটি রাজনৈতিক সরকার আছে। সকল কিছু মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে


আরো সংবাদ



premium cement