২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশে শিÿার্থীদের ঝরে পড়া

দারিদ্র্য একটি বড় কারণ

-

যেকোনো দেশের টেকসই উন্নয়নে প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে শিÿিত জনগোষ্ঠী। অন্যান্য প্রধান দেশের মতো আমাদের দেশেও শিÿিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা ও ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। বিনামূল্যে বই দেয়া, উপবৃত্তি, স্কুলে মিড-ডে মিল প্রভৃতি কর্মসূচি চালু রয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এক কোটি ৪০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। মাধ্যমিক ¯Íরে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এর পরও থামানো যাচ্ছে না ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা। ২০১৭ সালে যারা জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল, তারাই আগামী পয়লা ফেব্রæয়ারি এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে গেছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছেন, এ বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে এসএসসি এবং সমমানের পরীÿায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩। সেই তুলনায় এক বছরেই ৮৭ হাজার ৫৫৪ জন পরীক্ষার্থী কমেছে। এর মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৮ জন ছাত্র ও ৪১ হাজার ৪৭৬ জন ছাত্রী। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ শিক্ষার্থী অংশ নেবে। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩৬ ছাত্র এবং ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ জন ছাত্রী। দেখা যায়, চলতি বছর নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ শিÿার্থী। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করেছিল ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৮ জন। অর্থাৎ, দুই বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০০ জন শিক্ষার্থী। অন্য দিকে, ২০১৭ সালে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন। সে হিসাবে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পর্যন্ত আসতে পারেনি তিন লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৩ জন।
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’সহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ ভাগ মেয়ে এবং ৩৩ ভাগ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এ প্রতিবেদনে উলেøখ করা হয়েছে, স্কুল থেকে ঝরে পড়া এসব শিশুই আসলে সবচেয়ে বেশি অধিকারবঞ্চিত। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে। এই শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। তারা মূলত জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত হলেও এসব শিক্ষার্থী মূলত অর্থনৈতিক কারণেই স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
শিÿাজীবন থেকে শিশু-কিশোরদের ঝরে পড়ার নানা কারণের মধ্যে দারিদ্র্য একটি বড় কারণ। বহু বাবা-মা লেখাপড়ার চেয়ে তাদের সন্তানরা উপার্জন করার দিকে বেশি মনোযোগী। এ চিন্তা থেকে তারা সন্তানদের স্কুলে পড়তে দেন না। অনেকসময় শিশুরা বোঝে না, মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষে তারা কী করবে। তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য থাকে না। ফলে পড়াশোনায় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মেয়েদের ঝরে পড়ার একটি বড় কারণÑ বিয়ে হওয়া বা মেয়েশিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হয়রানির শিকার হওয়া বা নিরাপত্তার অভাব।
পরিস্থিতিদৃষ্টে বলা যায়, শিশুদের শিÿা থেকে ঝরে পড়া রোধে শুধু বই দেয়া কিংবা উপবৃত্তির মতো কর্মসূচি থাকলেই এই প্রবণতা বন্ধ হবে না। এর জন্য দেশের আর্থ-সামাজিক ÿেত্রে আয়বৈষম্য কমিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনেতিক কাঠামো গড়ে তোলা খুবই জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ে। আর দরিদ্র শিশুদের অভিভাবকদের আয় বাড়লে তারা সন্তানদের স্কুলগামী করতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement