২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দূষণের সূচকে শীর্ষে আবার ঢাকা

বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করতে হবে

-

আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অবাসযোগ্য নগরী হিসেবে বেশ কিছু দিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। ইদানীং এই ঐতিহাসিক শহরটি বারবার অভিহিত হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত বায়ুর পাদপীঠরূপেও। কিছু দিন আগের মতো গত বৃহস্পতিবারও ঢাকার বাতাস ছিল পৃথিবীতে সবচেয়ে দূষিত। মূলত মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালুর উপস্থিতির দরুন এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
নয়া দিগন্তের নিজস্ব প্রতিবেদনে প্রসঙ্গক্রমে জানানো হয়, বেশ কিছু দিন ধরে ঢাকায় নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে বাড়ছে ক্ষতিকর ধুলাবালু। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজুয়াল’ তাদের পরিমাপের নিরিখে ঢাকাকে শীর্ষ দূষিত শহর হিসেবে গণ্য করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের বায়ুমান অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় বাতাসের মানের সূচক ছিল ২৩৪। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া নগরী। তবে এর সূচক ছিল ঢাকার চেয়ে ৭৯ কম, অর্থাৎ ১৫৫। তখন তৃতীয় অবস্থানে ছিল সাম্প্রতিককালে চরম বায়ুদূষণের কারণে ব্যাপকভাবে আলোচিত ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি নগরী। বৃহস্পতিবার দুপুরের বাতাসে ধুলাবালু, অর্থাৎ দূষণের মাত্রা আরো বেশি ছিল বলে ধারণা করা হয়েছে। এদিন বিকেলে ঢাকার চেয়ে কলকাতার বাতাস ছিল অধিক দূষিত। সে সময়ে ঢাকার বায়ুমান ১৬৩, আর কলকাতার ছিল ১৮৮। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বায়ুমানের যে সূচক অনুসরণ করে থাকে, সেখানে র্যাংকিং করা হয় বিভিন্ন দেশের। সে মোতাবেক, বৃহস্পতিবার সর্বাধিক দূষণ ঘটেছে লাতিন আমেরিকার মেক্সিকোর বাতাসে।
এটা অনস্বীকার্য, ঢাকার বাতাস এখন খুবই দূষিত। বায়ুমানের ক্ষেত্রে ঢাকার সূচক ১৬৩ হওয়া সম্পর্কে জানা গেছে, বাতাসের মান এত বেশি নেমে গেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে, স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বাতাসের অবস্থা ঢাকার মতো দূষিত হলে বিশেষ করে হাঁপানি রোগীদের বেশি সময় ধরে ঘরের বাইরে না থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান নগরী, ঢাকার বায়ুদূষণ এমন ভয়াবহ মাত্রা পরিগ্রহ করার ব্যাপারে পরিবেশ বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্যÑ প্রধানত ৪টি কারণে ঢাকার বায়ু ক্রমবর্ধমান হারে দূষিত হচ্ছে। এগুলো হলোÑ এই নগরের চার পাশে পরিবেশের প্রতিকূল ইটের ভাটা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট ধুলাবালু, যন্ত্রযান থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ এবং কলকারখানার কেমিক্যাল ও দূষিত ধোঁয়া। জানা যায়, ইটের ভাটাগুলোতে নি¤œমানের কয়লা, কাঠ, রাবার প্রভৃতি পোড়ানোর ফলে সালফার ও ধোঁয়া ছড়িয়ে দূষণ ঘটাচ্ছে। এখানে যানবাহনের জ্বালানি থেকে ছড়াচ্ছে সিসা ও সালফার। প্রতিদিন রাজধানীর নানা জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ চলছে, যা নিত্যনিয়ত সৃষ্টি করছে মারাত্মক বায়ুদূষণ। ঢাকার বাতাস এত বেশি দূষণের শিকার যে, সামান্য বৃষ্টিপাতে এর মাত্রা হ্রাস পায় না। কারণ, মুষলধারে বর্ষণ ছাড়া বাতাসে ভাসমান ধুলাবালু নিচে তেমন নেমে আসে না।
মনে করা স্বাভাবিক যে, খোদ রাজধানীতেই যদি পরিবেশ দূষণ এমন ভয়াবহ মাত্রায় অব্যাহত থাকে বছরের পর বছর, তাহলে দেশের অন্যান্য বড় শহরের অবস্থাও ভালো নয়। সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে বায়ু দূষণরোধসহ পরিবেশের সামগ্রিক ও স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে। দূষণের সব উৎস চিহ্নিত করে সেগুলো রোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বিশেষ করে ঢাকার বায়ুমান উন্নত করার স্বার্থে পরিবেশসম্মতভাবে ইট পোড়ানো এবং রাস্তা-ড্রেন-ভবন-স্থাপনা নির্মাণ, যানবাহন ও কলকারখানা থেকে সর্বপ্রকার দূষণ রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি প্রয়োগ প্রভৃতি পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
দেশবাসীর প্রত্যাশা, ঢাকা মহানগরীসহ প্রতিটি জনপদের জন্য নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে সরকার আর বিলম্ব করবে না।


আরো সংবাদ



premium cement