২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কয়লার ব্যবহার : বিশ্বে কমছে, দেশে বাড়ছে

নিশ্চিত হচ্ছে পরিবেশ ধ্বংস

-

প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের দিক থেকে ফসিল জ্বালানির পরই কয়লার স্থান। সারা বিশ্বে বায়ুদূষণের একটা বড় কারণ হলো, কয়লা পোড়ানো। আর সে কয়লা ব্যবহার করেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৬৩ গুণ বেশি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে বড় ধরনের প্রভাবকের ভূমিকা রাখছে চীন, ভারত, ব্রিটেন ও জাপানের মতো বেশ ক’টি প্রভাবশালী দেশ। ‘কয়লায় শ্বাসরুদ্ধ : কার্বন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সমগ্র বিশ্ব যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করছে, বাংলাদেশ তখন আঁকড়ে ধরছে কয়লাকে।
আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিদেশী অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংখ্যা মাত্র একটি থেকে ৩০ গুণ করা হবে। এখনকার ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পরিবর্তে কয়লা দিয়ে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ উন্নীত করা হবে ৩৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটে। তখন বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড যোগ হবে বছরে সাড়ে ১১ কোটি মেট্রিক টন। এটি কার্যত ‘কার্বন বিস্ফোরণ’ এবং বিশেষত দেশের সেই জনগোষ্ঠীকে চরম হুমকিতে ফেলে দেবে, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির শিকার হয়ে আগে থেকেই দুর্দশার সম্মুখীন। আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের স্থলভাগের ১১ শতাংশই ডুবে যাবে এবং প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাবে। এতে উপকূলভাগের দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা হবে বিপন্ন। তা ছাড়া, নতুন ২৯টি কয়লানির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি আরো বেশি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, কয়লাভিত্তিক বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে। এটা আমাদের দেশের ঋণের বোঝা অনেক বাড়িয়ে দেবে এবং এতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আরো ক্ষুণœ হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশকে বার্ষিক ২০০ কোটি ডলার দামের ছয় কোটি ১০ লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হবে। এভাবে দেশ পড়ে যাবে উচ্চমূল্যে কয়লা আমদানির কয়েক দশকব্যাপী ফাঁদে। এতে নতুন করে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
জানা গেছে, বিশ্বে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ সর্বাধিক ক্ষতিকর ও ‘নোংরা’ জ্বালানি হিসেবে সমালোচিত। এটি বিষাক্ত নাইট্রোজেন-অক্সাইড, সালফার-অক্সাইড, পিএম ২.৫ (বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা), কয়লার ছাই এবং এসিড নির্গমনের দ্বারা বাতাস ও পানিকে ব্যাপকভাবে দূষিত করে থাকে। তদুপরি, পারদ, সিসা ও ক্রোমিয়ামের মতো ‘ভারী ধাতু’ নির্গত হয়। এগুলো দুরারোগ্য ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই বলা যায়, কয়লানির্ভর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিবেশের বিরাট বিপর্যয় ঘটাতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের অদূরে, বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। এর বিরুদ্ধে পরিবেশ সচেতন মানুষের ব্যাপক আন্দোলন সত্ত্বেও সরকার এই সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
বাংলাদেশ নৈসর্গিক সৌন্দর্য তথা প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে আজো অনন্য। এই পরিবেশকে ধ্বংস, বিপন্ন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়, বরং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করেই সামগ্রিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে, ক্ষতিকর ফসিল জ্বালানি এবং কয়লা পরিহার করে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সবাই সচেষ্ট হওয়া জরুরি। সরকারকে যাতে পরিবেশ ধ্বংসের দায় নিতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই। অন্যথায়, কয়লার মতো পরিবেশ দূষণকারী জ্বালানির কারণে আমাদের বিরাট ক্ষতি হওয়া অসম্ভব নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement