২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সড়ক নিরাপত্তায় নয়া টাস্কফোর্স

এবার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে কি?

-

সড়কে নিরাপত্তা তথা রোড সেফটির বিষয়টি বাংলাদেশে বরাবরই একটি ধূম্রজালময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। যদিও কয়েকবার উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকটি কমিটি করা হয়েছে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিধানের জন্য। এর বাইরে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালত থেকে এসেছে নানা নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের অবিস্মরণীয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলনের পর। কিন্তু এর পরও সড়কে লাশ পড়া রোধ হচ্ছে না। গতকালের পত্রপত্রিকায় খবর এসেছেÑ ঢাকায় আবার বাসের বেপরোয়া ধাক্কায় নিহত হয়েছেন দু’জন। গত পরশু রাজধানীসহ ১০ জেলায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন।
বিদ্যমান এ প্রেক্ষাপটে সরকার গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান নিয়োগ করে এ সম্পর্কিত একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বলা হয়েছে, এই টাস্কফোর্স ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে এনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি এই সুপারিশমালা প্রণয়ন করে।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা অবশ্য টাস্কফোর্সের এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সড়কে এখন চলছে পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলাহীনতা। এর মধ্যে এসব বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। তারা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা এর জন্য দায়ী। উদাহরণত, পরিবহন খাতের দীর্ঘ দিনের সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য খাত থেকে লোক এনে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়। তা ছাড়া আমাদের বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির এবং সীমিত। এ কথা স্বীকার করেছেন পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৭তম সভায়। গত বৃহস্পতিবার এ সভায়ই গঠন করা হয়েছে নতুন টাস্কফোর্স। তিনি এ-ও স্বীকার করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রণয়ন করেছেন অনেক উচ্চাকাক্সক্ষী প্রতিবেদন, কিন্তু প্রস্তাবিত মাত্রায় এগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার ৯ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ উপ-কমিটি গঠন করেছিল। এর প্রধান ছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক এম আনোয়ার হোসেন। ওই বিশেষজ্ঞ উপ-কমিটি ৫২টি স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ প্রণয়ন করে। অপর দিকে, ২০১৮ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে আছে দীর্ঘমেয়াদে পরিবহনের ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের প্রতি ৫ ঘণ্টা পরপর বদল করার নির্দেশনা। ড্রাইভারদের ও তাদের সহকারীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি, সিটবেল্ট ব্যবহার ইত্যাদি নির্দেশও ছিল। মজার ব্যাপার হলো, এসব নির্দেশনা নতুন কিছু নয়। মোটর যান অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ -তে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৯ ও ট্রাফিক আইনগুলোতে এসবের উল্লেখ রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এসব নির্দেশনার কথা বারবার নানাভাবে প্রচার করলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি যথাযথভাবে। এর পরও আরো অনেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি নানা সুপারিশ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আমাদের আশঙ্কা, নব সৃষ্ট টাস্কফোর্সের ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে। এগুলো বাস্তবায়ন করবে কি না, না আগের সুপারিশগুলোর ভাগ্য বরণ করবে, সেটিই এখন প্রশ্ন। আমরা চাই, আমাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে সুপারিশগুলো নবগঠিত টাস্কফোর্স বাস্তবায়ন করুক, সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, ফিরে আসুক সড়কে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

 


আরো সংবাদ



premium cement