২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণহীন

মোকাবেলায় কি আমরা ব্যর্থ হচ্ছি?

-

ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৪ জন। জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৭০। জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৬১। গত বছর ১৮ জুলাই পর্যন্ত মারা গিয়েছিল পাঁচজন। এ বছর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। ওষুধে মশা মরছে না। এ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা নিধনে পাঁচটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির লোকজন মশা নিধনে এলাকাভেদে ওষুধ ছিটাবেন। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য এরা র্যালি করবেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা পক্ষ পালন করছে। এরা একটি কল সেন্টার চালু করেছে। ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে এরা মুঠোফোনে পরামর্শের পাশাপাশি বাসায় গিয়ে সেবা দিচ্ছে।
কিন্তু মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় বিপুল মানুষ অসহায় বোধ করছেন। মানুষের অভিযোগ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, সরকার ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।
এ দিকে গত বুধবার একটি রিটের শুনানিতে সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছিলেন, এটা (ডেঙ্গু) তো মহামারী হতে আর বাকি নেই। ওষুধের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। জনগণের করের টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, আদালতের ওই মন্তব্য ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনগুলোকে সচেতন করবে এবং দ্রুত ডেঙ্গু-সংশ্লিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ জোগাবে। এসব পদক্ষেপ ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হলেই নিতে হবে, তা নয়। বরং আগাম পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হতে না পারে। পাশাপাশি ডেঙ্গু মোকাবেলায় জনসচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, এবারের ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি তীব্রতা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এ বছর ইতোমধ্যে ডেঙ্গু নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। পরিবারের কারো ডেঙ্গু হলে আতঙ্ক নয়, চাই সতর্কতা ও সচেতনতা। বেশির ভাগই ডেঙ্গুতে প্যারাসিটামল, বিশ্রাম ও যথেষ্ট তরল পান করা ছাড়া এর কোনো চিকিৎসাই লাগে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মোড় নেয়, যা রোগীর জীবনকে বিপন্ন করে তোলে।
ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্রাম নিতে হবে, জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক খাওয়ার বেলায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। জ্বর সেরে ওঠার সময়টুকুতে বেশি সাবধান থাকতে হবে। কারণ, ওই সময় জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে। তাই জ্বর শেষ হওয়ার পরপরই কাজে না গিয়ে আরো বিশ্রাম নিতে হবে।
মোট কথা, বর্তমান ডেঙ্গুর প্রকোপ অবস্থায় সাধারণ মানুষের সতর্কতা ও সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সরকার ও সিটি করপোরেশনগুলোর আন্তরিক তৎপরতা ব্যাপক হওয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement