২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নৌপথে নিষিদ্ধ নৌযান

চলাচল রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

-

আমাদের দেশে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মাধ্যম রেলপথ, সড়কপথ ও নৌপথ। আকাশপথে এ দেশের লোকজন খুব বেশি চলাচল করে না। স্বল্পসংখ্যক যাত্রী আকাশপথ ব্যবহার করে থাকেন। এর প্রথম কারণ, দেশে আকাশপথে চলাচল ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ হওয়ায় আকাশপথ ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। খুব কম টাকায় ভ্রমণের সুযোগ থাকায় রেলপথও যাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তবে দেশের সব স্থানে রেলপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই।
সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা খানিকটা আধুনিক হওয়ায় স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আবার সড়কের চেয়ে নৌপথে চলাচল তুলনামূলক নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। শুধু বর্ষা মওসুমে দেশের নৌপথগুলোতে চলাচল একটু ঝুঁকিপূর্ণ। স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে নৌপথে চলাচল জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। পাশাপাশি আগের তুলনায় নৌযানগুলো বিলাসবহুল হওয়ায় আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য সচ্ছল ও উচ্চবিত্তের মানুষ নৌপথে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নৌপথে চলাচল তাদের জীবনের একটি অংশ বলে মনে করে। অথচ সড়কের মতো দিন দিন নৌপথও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এখন নৌপথেও দুর্ঘটনায় দেশে বহু লোক প্রাণ হারাচ্ছে। তুলনামূলক নিরাপদ নৌপথে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নিষিদ্ধ নৌযানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন।
নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়Ñ দেশের নদ-নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ নিষিদ্ধ নৌযান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ কারণে একের পর এক ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। বড় বড় নদীতে যেসব নৌযান চলাচল করার কথা নয়, সেখানেও ওই সব নির্বিঘেœ চলছে। আর যাদের দায়িত্ব এ কাজ তদারকির, তারা নির্বিকার। সম্প্রতি মেঘনায় যে নৌযানটি ডুবেছে, তা ওই নদীতে চলাচলেরই কথা নয়। ১৪ জানুয়ারির ঘটনা। রাত ৩টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যাচ্ছিল একটি মাটিভর্তি ট্রলার। সেখানে ৩৪ জন শ্রমিক ছিলেন। নৌযানটি গজারিয়ার মেঘনায় অন্য একটি বড় নৌযানের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে ১৪ শ্রমিক সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও অন্যরা নিখোঁজ হন। এর মধ্যে গত রোববার একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সাঁতরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় বেপরোয়া গতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনা যা-ই ঘটুক, মূল দোষ ওই ট্রলারওয়ালার। সন্ধ্যা ৬টার পর এসব ট্রলার ওই নৌপথে চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাতে চলার সময় তো দেখা যায় না। কারণ, এগুলোতে থাকে না কোনো আলোর ব্যবস্থা। বলা হচ্ছে, তেলের ট্যাংকারের সাথে ধাক্কা লেগেছে। যদি অন্য নৌযানটি তেলের ট্যাংকার হয়; তবে ওটির সামনে ট্রলারটি কিছুই নয়। ট্রলারটি কাছ থেকেও দেখার কথা না অয়েল ট্যাংকার চালকের।
রাতে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে এভাবে শত শত নিষিদ্ধ নৌযান চলাচল করছে। সরকারি আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তা অমান্য করে এসব নৌযান রাতে চলাচল করে, যেন তা দেখার কেউ নেই। এমন ২০ হাজারের মতো নৌযান রয়েছে, যার কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের সাথে যোগসাজশে এগুলো চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও নৌপরিবহন অধিদফতরের ইন্সপেক্টরদের এগুলো তদারকি করার কথা। নৌপরিবহন অধিদফতরের লোকবল সঙ্কট রয়েছে; কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ’র কোনো সঙ্কট নেই। এগুলো দেখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’তে নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ নামে একটি শাখাই রয়েছে। তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আগামী বর্ষা মওসুমের আগেই অবৈধ, নিষিদ্ধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ নৌযান শনাক্ত করে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তুলনামূলক নিরাপদ নৌপথে চলাচল নির্বিঘœ করার উদ্যাগ এখনই নিতে হবে। সাথে সাথে যারা অর্থের বিনিময়ে এসব অবৈধ নৌযান চলাচলের পথ করে দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement