২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দালালদের দৌরাত্ম্যে অভিবাসন ঝুঁকিপূর্ণ

আইনের আওতায় আনা জরুরি

-

অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে বিদেশগামী কর্মীদের এ দেশে দালাল ধরতে হয়; অথচ এদের দৌরাত্ম্য পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়াকেই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। তাই ন্যায়সঙ্গত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হলে দালালদের আনতে হবে আইনের আওতায়, যাতে তারা দায়বদ্ধ থাকে। ‘অভিবাসীর ইশতেহার ও নিরাপদ অভিবাসন’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এই অভিমত পোষণ করা হয়েছে।
পত্রিকার খবরে জানা যায়, অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের যদি আনা যায় আইনের আওতায়, তাহলে তাদের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং অভিবাসনের ক্ষেত্রেও সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে বৈকি। বিদেশ থেকে যেসব অভিবাসী প্রত্যাবর্তন করছেন, তাদের কাজে লাগানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা থাকাও দরকার। কোনো রাষ্ট্র নিজ নাগরিকদের মর্যাদা না দিলে বিদেশীরা তা করবেন না। সভায় জানানো হয়, দালালদের কারণে বাংলাদেশী লোকজনকে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়। দালালরা ভিসা কিনে ব্যবসায় করে; তদুপরি নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভিসার দাম বাড়িয়ে দেয়। তবুও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি বেশি কিছু করতে পারে না। একজন বক্তা বলেছেন, দেশের বহু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় না। বিদেশযাত্রার তিন দিন আগে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের একটি সনদ নিয়ে লোকজন বিদেশে পাড়ি দেন। দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়া অসম্ভব নয়। আরেকজন আলোচক বলেছেন, বিদেশ প্রত্যাগত নাগরিকদের অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে কিছু করতে চাইলেও ব্যাংকের সেবা মেলে না। অথচ রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠিয়ে তারাই জাতীয় অর্থনীতিকে গতিশীল রাখেন। তাই তাদের উদ্যোক্তায় পরিণত করতে সরকারের পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া উচিত। যাতে তারা ফিরে এসে মর্যাদার সাথে জীবন কাটাতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার ওপর জোর দিয়ে একজন আলোচক বলেন, প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর কর্মীদের ওপর প্রবাসে নির্যাতনের কথা বেশি শোনা যায় না। অথচ বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। কারণ, আমরা স্বদেশের নাগরিকদের সম্মান করি না, ওই সব দেশ তা করে।
রিফিউজিস অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) পরিচালিত সমীক্ষা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যেতে আগ্রহী, এমন কর্মীদের ৯৭ শতাংশই অভিবাসন কার্যক্রমে দালালদের ওপর নির্ভরশীল। দালালরা বিনা রসিদেই লাখ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। কিভাবে এদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা যায়, তা ভেবে দেখা দরকার। বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া তৃণমূলপর্যায়ে নিয়ে গেলে এবং স্বচ্ছ করা হলে দালালদের দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে বলে অভিমত দেয়া হয়েছে। আইএলও’র একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেসব আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করে, এগুলোর বাস্তবায়ন মূল্যায়ন করা আবশ্যক।
অনুষ্ঠানে ‘অভিবাসীর ইশতেহার’-এর খসড়ায় নিরাপদ অভিবাসনের স্বার্থে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে যেসব প্রস্তাব এসেছে, এর মধ্যে আছে শ্রম অভিবাসনের পর্যাপ্ত তথ্য অবগত এবং ইউনিয়নপর্যায়ে এই তথ্যভাণ্ডার থাকা; অভিবাসন বিষয়ে তৃণমূলপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ করা; নারীর বিশেষ সুরক্ষাসহ মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন; নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, ন্যায্য ও শৃঙ্খলাপূর্ণ করা; কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন ও প্রত্যাবর্তনসহ পুরো কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আমাদের দূতাবাসের যথাযথ ভূমিকা; অভিবাসীদের জন্য যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ; আইন ও নীতিমালার পুরো বাস্তবায়ন প্রভৃতি। তা ছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীÑ এমন রাজনৈতিক নেতাদের অঙ্গীকার ঘোষণা নিরাপদ অভিবাসনের জন্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় একটি খাত হলো বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স। অথচ বিদেশ যাওয়া-আসাসহ অভিবাসনপ্রক্রিয়ার নানাপর্যায়ে তাদের অহেতুক হয়রানি ও দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। ভিটেমাটি বিক্রি কিংবা ধারকর্জ করে হলেও দালালদের দিতে হয় লাখ লাখ টাকা। এহেন অন্যায়ের আশু প্রতিকার হওয়া জরুরি।
আমরা আশা করছি, অভিবাসনসংশ্লিষ্ট দালাল শ্রেণীকে আইনের আওতায় এনে নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে তাদের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা হবে। তাহলেই অভিবাসন ইচ্ছুক কর্মীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমবে।


আরো সংবাদ



premium cement