২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জীবাণু প্রতিরোধক কাগজ উদ্ভাবন

বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময়

-

আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে কাগজে জীবাণুর সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ করা সম্ভব। ক্ষতিকর জীবাণুর প্রতিরোধী এ ধরনের কাগজ খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের কাজ করবে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও বইপুস্তক প্রকাশের ক্ষেত্রেও এই কাগজ ব্যবহৃত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা মনে করেন।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বুয়েটের শিক্ষক শফিউল আজমের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী জীবাণু প্রতিরোধী এই কাগজের উদ্ভাবক। সিলভার ন্যানো কণা ¯েপ্র করে কাগজে মিশিয়ে দেয়ার এই প্রযুক্তির ফলাফল গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রসায়ন সমিতির জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। সাময়িকীটির নাম ‘সাসটেইনেবল কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি’ (টেকসই রসায়ন ও প্রযুক্তি)।
অপেক্ষাকৃত কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে পণ্যমোড়ক এবং প্রকাশনা শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে কাগজ ব্যবহার করা হয়। এর ব্যাপক প্রচলন দেখা যায় বিশেষত খাদ্য, প্রসাধন এবং ওষুধ প্যাকেজিংয়ের বেলায়। তা ছাড়া বইপত্র, টাকার নোট, অফিস সামগ্রী, ওয়ালপেপারের ক্ষেত্রেও কাগজ খুব প্রয়োজনীয় উপকরণ। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, কাগজ কিংবা এ দিয়ে তৈরি করা প্যাকেজিং সামগ্রীর সাহায্যে জীবাণু এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। অনেক সময় এই জীবাণু হতে পারে মারাত্মক কোনো সমস্যার কারণ। তাই জীবাণুরোধক কাগজ এই দিক দিয়ে একান্ত অপরিহার্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
বিশেষ ধরনের এই কাগজ উদ্ভাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও চীনের মোট পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরা জীবাণু প্রতিরোধী কাগজ উদ্ভাবনের কৃতিত্ব অর্জন করে ফেলেছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে ছিলেন কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষক। টিম লিডার শফিউল আজম জানান, ‘এটি একটি মৌলিক উদ্ভাবন। কাজ চলছে বাস্তবে এই গবেষণার ফলাফল প্রয়োগের বিষয়ে। এই কাগজের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং তা ব্যবহারের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে।’
আলোচ্য গবেষণার ব্যাপারে ২০১৫ থেকে তিন বছরে বেশির ভাগ কাজ হয়েছে বুয়েটেই। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রাসায়নিক পরীক্ষা করতে হয়েছে কানাডায়। জীবাণুরোধক কাগজ তৈরি করার কাজে সমুদ্রের শামুক ও ঝিনুকের একটি বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব প্রাণীর মধ্যে বিশেষ ধরনের একটি যৌগ থাকায় এরা প্রবল ঢেউ সত্ত্বেও পাথর ও সমুদ্রপৃষ্ঠে আটকে থাকতে সক্ষম হয়। এ যৌগটি ন্যানো কণাগুলোকে কাগজের সাথে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। ফলে ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী বৈশিষ্ট্য বহু দিন অুণœ থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, চিংড়িসহ মাছে সংক্রমিত হওয়া সব রকম জীবাণুর বিস্তার উল্লিখিত কাগজ প্রতিহত করতে সক্ষম। ছত্রাকও এ ধরনের কাগজের প্রতিরোধে টিকতে পারে না। এই প্রেক্ষাপটে আশা করা হয়েছে, এমন কাগজের প্যাকেজিং মূল্যবান পণ্য, ওষুধ, খাদ্য প্রভৃতি বহু দিন সংরক্ষণ করবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম ইলিশের জীবনরহস্য সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন। এই বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘উন্নত দেশগুলো ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে নানা ধরনের উদ্ভাবনে সফল হচ্ছে। সেগুলোকে শিল্প উৎপাদন এবং পণ্য তৈরির কাজে লাগাচ্ছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এই কাগজ সার, কীটনাশক, রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতির মোড়ক হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।’
এই গবেষণায় বুয়েট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস ও কানাডার সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাকাডেমিক রিসার্চ কাউন্সিল সহায়তা দিয়েছে।
আমরা আলোচ্য উদ্ভাবনের অনন্য কৃতিত্বের জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানাই। জীবাণু প্রতিরোধী কাগজের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং এর ব্যাপক ব্যবহার শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সর্বোপরি দেশবাসীর খাদ্য ও স্বাস্থ্যসহ জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement