২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১০ মাসে ৪২২ বিচারবহির্ভূত হত্যা

গণতন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়

-

মানবাধিকার সংস্থা অধিকার চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। মানুষের জীবনের অধিকার সুরক্ষার কথা গণতান্ত্রিক সমাজে রয়েছে, বাংলাদেশে যেন উত্তরোত্তর বর্ধিতহারে তা লুণ্ঠিত হচ্ছে। এ ধরনের অধিকার হরণের অভিযোগ খোদ সরকারের বিরুদ্ধে যায়। যারা মানুষের জানমাল রক্ষা করবেন তারাই এমন কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশে চলতি বছরে প্রথম ১০ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৪২২ জন। এদের মধ্যে ক্রসফায়ারে ৪১৫ জন, গুলিতে দু’জন এবং নির্যাতনে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে বাহিনীগুলো একেবারে দায়হীন। তাদের বিরুদ্ধে কোনোভাবে অভিযোগ আনা যায় না। এমনকি বাহিনীর মধ্যে এসব ব্যাপারে তদন্ত করার সুযোগ দেখা যায় না। আদালতের পক্ষ থেকেও এসব ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশের নাগরিকদের একটা অংশের জীবনহানি একেবারে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এই সময়ে গুমের শিকার হয়েছেন ৭১ জন। প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। জানুয়ারিতে ১৯, ফেব্রুয়ারিতে ৭, মার্চে ১৮, এপ্রিলে ২৯, মে ১৫১, জুনে ৫০, জুলাইয়ে ৬৯, আগস্টে ২৪, সেপ্টেম্বরে ৩৬ এবং অক্টোবরে ১৯ জন এমন হত্যার শিকার হন। সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন ৭১ জন। এর মধ্যে আহত ৪৪, লাঞ্ছিত ১৮ ও হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন আরো ৯ জন। এ ছাড়া প্রথম ১০ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৬৮ জন এবং আহত হয়েছেন তিন হাজার ৩৬৫ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই ধরনের আইনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সময় ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। দেশের অভ্যন্তরে নাগরিকরা যখন এভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তখন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফও নানাভাবে বাংলাদেশীদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অধিকারের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী বিএসএফের হাতে আট বাংলাদেশী নিহত, ২০ জন আহত ও ১২ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। অধিকার তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। ২০১৪ সালে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দলটির নেতৃত্বাধীন জোট আবার ক্ষমতায় এলে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চলেছে। আর মাত্র দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এ অবস্থায় সরকারের একগুঁয়ে অবস্থানের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। আবারো ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য বিরোধী শক্তিগুলোর ওপর সরকার চরম নির্যাতন-নিপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়া হলেও সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেয়ার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় বিরোধীরা তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হলে বিচারবহির্ভূত হত্যার আশঙ্কা আরো বাড়বে। যদিও সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু আচার আচরণের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখছে না। আমরা মনে করি, সরকার তার অবস্থানের পরিবর্তন করবে। অন্ততপক্ষে অগণতান্ত্রিক আচরণ থেকে ফিরে আসবে। সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করায় আন্তরিক ভূমিকা রাখবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement