২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভারতে বাংলাভাষীদের বিতাড়নের দাবি

বাংলাদেশের এখন থেকে সতর্ক হওয়া উচিত

-

ভারত থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার নতুন আলামত শুরু হয়েছে। আসামে নাগরিক নিবন্ধনের নামে প্রায় ৪০ লাখ বাংলাভাষীর নাগরিকত্ব হরণের ঘোষণার মধ্যে দিল্লিতে নতুন করে বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে অভিযানের দাবি করছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির কিছু নেতাও এমন দাবি করেছেন। এর আগে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের অভিযান চালিয়ে ছিন্নমূল বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে রাখার ঘটনা ঘটেছে। অতীতে রাতের আঁধারে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের পুশব্যাক করেছে। ভারতে নতুন করে বাংলাভাষী নাগরিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযানে বাংলাদেশের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। কারণ, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে।
আসামে যে ৪০ লাখ বাংলাভাষীর নাগরিকত্ব হরণের প্রক্রিয়া চলছে, তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হবে বলে ভারত সরকার ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসামে বাংলাভাষীদের নাগরিকত্ব হরণের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, বাংলাভাষীদের বিতাড়নের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব হরণের এ ধরনের প্রচেষ্টার ভয়াবহতা সম্ভবত উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং এর প্রভাব পশ্চিম বাংলার ওপর পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসামের এই বিপুল বাংলাভাষীকে রোহিঙ্গাদের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এই সঙ্কট রোহিঙ্গা সঙ্কটের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী এ বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। আসামের বাংলাভাষীদের নাগরিকত্ব হরণ বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আটকে রাখার পরিকল্পনা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভারতীয় এই নাগরিকদের আসামের রাজনীতিক ও গণমাধ্যমে বাংলাদেশী হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই মানুষের বিরাট একটি অংশ ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমান।
একই সময়ে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরুর দাবি উঠেছে, তা-ও বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ঢল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রায় ১১ লাখ মানুষের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। আসাম ও দিল্লিসহ ভারতে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে এখন থেকে সতর্ক থাকা উচিত। রোহিঙ্গাদের মতো বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিকেরা যেন বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। কারণ, ভারতের হিন্দুত্ববাদী ও ইসলামোফোবিক সরকার এমন নীতি গ্রহণ করবে না, যার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র দাবি করলেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের নীতিকে ভারত সমর্থন দিয়েছে। এ দিকটি আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement