২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাকা দক্ষিণের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা

পরিবেশের দূষণ অনেক বৃদ্ধি করছে

-

ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহরগুলোর একটি হলেও এ শহরের অন্য অনেক অব্যবস্থাপনার মতো ময়লা-আবর্জনা ঠিকভাবে পরিশোধন করার ব্যবস্থা হয়নি। ঢাকাবাসী আরো অনেক দুর্ভোগের মধ্যে আবর্জনা নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সহযোগী একটি দৈনিক মহানগরী দক্ষিণের ময়লা-আবর্জনার অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ছেপেছে। আবর্জনা যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় এলাকাবাসী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার চেয়ে বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে, এই ময়লা-আবর্জনা স্থানীয় খালবিল ও ড্রেনগুলো ভরে দিচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে আশপাশের নদীগুলোও। ভয়াবহ ক্ষতি করছে পরিবেশের। অন্য অনেক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা পরিশোধনে ঘোষণা দেয়া হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঢাকা দণি সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় প্রতিদিন আবর্জনা তৈরি হয় তিন হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে অপসারণ করা হচ্ছে এক হাজার ৯০০ টন। বাকি এক হাজার ৬০০ টন যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে। যার ঠিকানা হয় শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পানির উৎসগুলো। ডোবানালা ও পানিপ্রবাহের ক্ষীণ ধারাগুলো এতে স্থবির হয়ে যায়। এসব আবর্জনা এক দিকে পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে, অন্য দিকে পচে-গলে পরিবেশ দূষিত করছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ছে। ডিএসসিসির প্রথম মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচনের আগে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম টেকসই মানে উন্নীত করতে চলতি বছরকে ‘পরিচ্ছন্নতার বছর’ ঘোষণা করেন। এ লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু আবর্জনা অপসারণের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে মেয়রের উদ্যোগ যে কাজে আসেনি, সেটি স্পষ্ট। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে হঠাৎ করে একটি উদ্যোগ দেখা গেছে, সেটি হচ্ছে ঘটা করে মিনি ডাস্টবিন স্থাপন। এখন বাকি ডাস্টবিনগুলো জড়ো হয়েছে ডিএসসিসির বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের সামনে। এই হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে মহানগরীর লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা শাখা নদী আবর্জনার ভাগাড় হয়ে উঠছে। এর বাইরে পুরান ঢাকার চকবাজারসহ আশপাশ এলাকার সড়কে যত্রতত্র আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। ড্রেন-ডোবানালা হয়ে অন্যান্য বর্জ্যও এসে পড়ছে বুড়িগঙ্গায়। নদীটি আমাদের বর্জ্যে ভরাট হয়ে মৃতপ্রায়। সিটি করপোরেশন যে আবর্জনা সংগ্রহ করছে, তা-ও ট্রিটমেন্ট প্লান্টে যাচ্ছে না। এরও ঠিকানা হচ্ছে বেড়িবাঁধ।
ঢাকা শহরে মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে ‘ইট-সুড়কির জঞ্জাল’। এই শহর নিয়ে নগরপিতাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। এর পরিবেশ ও শব্দদূষণের সাথে হাজারও রকম দূষণ মনুষ্যবসতির অনুপযুক্ত করে তুলছে এ শহরকে। যেখানে বিশ্বের অন্য প্রায় সব দেশেই শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সেখানে আমরা ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনাও করতে পারিনি। এর সাথে শহরের অন্যান্য দূষণ যত বাড়ছে, তাতে শহরটি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে পারে। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করে সেগুলোকে পরিবেশসহায়ক করা যায়। এ জন্য দরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টাই নগরপিতাদের কাছে অধিবাসীরা দেখতে চান।

 


আরো সংবাদ



premium cement