২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাহিরপুরে সবজি চাষে ভাগ্য পরিবর্তন

-

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বেকার যুবক, কৃষকরা নিজ উদ্যোগে শাকসবজি চাষ করে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে শত শত কৃষক। উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ব্যাপক হারে সবজি চাষের কারণে সবজি পল্লী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। সবজি চাষ করে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এই এলাকার কৃষকরা বর্তমানে শাকসবজি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। বেশির ভাগ শাকসবজি এখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত করা হচ্ছে। ফলে সবজিগুলো স্থানীয় বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করছে। এখন কৃষকদের মধ্যে চলছে যেন নীরব প্রতিযোগিতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ভাটির জনপদ তাহিরপুর উপজেলা ইরি, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ধানচাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। ইতঃপূর্বে এখানকার কৃষকরা শাকসবজির জন্য জেলার দক্ষিণাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষে আশানুরূপ ফল পাওয়ায় তারা বর্ষা মৌসুমেও অধিক হারে জমিতে শাকসবজি উৎপাদনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের আমতৈল, পুরানঘাট, ব্রাক্ষণগাও, পৈলনপুর, বারহাল, শিমুলতলা ও বাদাঘাট ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, কামরাবন্দ,নাগরপুরসহ অনেক গ্রামের জীবন-সংগ্রামী মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিষ্ফলা জমিকে ব্যক্তি উদ্যোগে বারো মাস সবজি চাষাবাদের জমিতে রুপান্তরিত করেছে। মাঠ, বাড়ির উঠান, ফসলি জমি, চর, হাওর ও পুকুরপাড় সবর্ত্র সবজি বাগান। গ্রামের শত শত নি¤œ আয়ের পরিবার ও বেকার যুবক সম্প্রতি সিম, ফুল কপি, টমেটো, করলা, বটবটি, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে অনেক গরিব কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষক জজ মিয়া জানান-উপজেলার অন্য স্থানের চেয়ে এই অবস্থান অনেকটা উঁচু হওয়ায় ও কম খরচে শাকসবজি চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা যায়। অনেকটাই কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই বাণিজিক্য ভিত্তিতে এখানে লাল শাক, মুলা, লাউ, করলা, বেগুন, শসা, সিম,বরবটি,বাঁধাকপি,ফুলকপি,আলু,পুঁইশাক,কুমড়া,তরমুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। আর এই সবজি চাষকে কেন্দ্র করে উপজেলার বাদাঘাট রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজারে বাসে হাট। বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রি ফলে লাভবান হয়েছি।
সবজিচাষিরা আরো জানান- বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে আসেন সবজি কিনতে। তারা রিকশা ও ঠেলাগাড়ি চড়ে আবার অনেক কৃষক নিজ মাথায় বহন করে সবজি বাদাঘাট বাজার, উপজেলা সদরের বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য। কিন্তু যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় তারা জাতীয় বাজার দর সম্পর্কে অবহিত হতে পারচ্ছেন না এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শাকসবজি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুটি কয়েক পাইকারদের দামের মধ্যেই তারা সীমাবদ্ধ আছে। এ কারণে তারা বেশি লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করা হলে তাহিরপুর উপজেলাসহ সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা শাকসবজি উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্বি করা সম্ভব হবে বলে তাহিরপুর উপজেলার সবজি চাষিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দোল্লা বলেন, আমরা কৃষকদের বিশমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কিভাবে সবজি চাষ করতে হবে ও পরিচর্যা করে লাভবান হবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের সব সময় পাশে থেকে দেখাশোনা করছে। কম খরছে সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায় তাই সবজি চাষে কৃষকরা ঝুঁকছে। এবার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১১ শত হেক্টর লক্ষ্যমাত্র ছিল। ১৫ শত হেক্টর চাষ হয়েছে। উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নে এবার বেশি সবজি চাষ হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement