১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


আগৈলঝাড়ায় সেচ সঙ্কটে ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হয়নি

-

বরিশালের আগৈলঝাড়ার অভ্যন্তরীণ খালগুলো পুনঃখনন না হওয়ায় তীব্র সেচ সঙ্কটে পড়ে অন্তত ৫০০ হেক্টর জমিতে এ বছর ইরি-বোরো চাষ করতে পারেননি কৃষকেরা। উপজেলার ২৮টি প্রকল্পের আওতায় ১১০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন দুই যুগেও আলোর মুখ না দেখায় পানি সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইরি-বোরো আবাদ কমতে থাকায় উপজেলায় খাদ্য উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদ থেকে কৃষি ও সেচের জন্য ১০ ভাগ বরাদ্দের টাকায়ও এখন পর্যন্ত কোনো খাল পুনঃখনন করা হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, চলতি বছর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ছয় হাজার ৫৪৭ হেক্টর ও উফসী তিন হাজার ১১৬ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩১৩ টন চাল। উপজেলার খালগুলো পলি পরে ভরাট হয়ে গেলেও দীর্ঘ দিনে পুনঃখনন না হওয়ায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে খালগুলোতে নৌকা চলা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দুই দশক আগেই।
চলতি ইরি-বোরো মওসুমে জমিতে পানি সেচ দিতে না পারায় গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট, বড়ইতলা, ভদ্রপাড়া ও পূর্ব সুজনকাঠী এলাকার তিনটি ইরি ব্লকের অন্তত ২০০ একর জমি চাষ করতে পারেননি চাষিরা। একইভাবে রাজিহার ইউনিয়নের বিশ্বব্লক খ্যাত চৌদ্দমেধা বিল, গোয়াইল, মাগুড়া, রাংতা ও বাকাল ইউনিয়নের অন্তত ৩০০ একর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। ফলে এসব এলাকার জমির মালিক ও চাষিরা তাদের পরিবারের খাদ্যের যোগান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সেচ সঙ্কটে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় অনেক চাষি এখন রবিশস্য আবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জনিয়েছেন সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল।
সূত্র মতে, উপজেলার খালগুলো পুনঃখননের জন্য কৃষি অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস থেকে যৌথ উদ্যোগে সমন্বিত প্রকল্প নিজ নিজ বিভাগে দাখিল করা হলেও খাল পুনঃখননের জন্য সরকারের কোনো বিভাগ থেকেই গত দুই যুগে কোনো সাড়া মেলেনি।
দাখিল করা সমন্বিত খাল পুনঃখনন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল রাজিহার ইউনিয়নে ২২ কিলোমিটার, বাকাল ইউনিয়নে ১৭ কিলোমিটার, গৈলা ইউনিয়নে ২২ কিলোমিটার এবং রতœপুর ইউনিয়নে ২৫ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের জন্য ২৭টি প্রকল্পের আওতায় ৮৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন। পরে আরো একটি প্রকল্পের আওতায় ২৪ কিলোমিটার খাল যুক্ত হয়ে ১১০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস খাল ভরাট হওয়ায় পানি সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উন্নয়ন বাঁধের কারণে বড় ৩০ থেকে ৩৫টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে। চাষিদের জন্য বাঁধের বিষয়ে তিনি বরিশাল সওজ কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপির সহযোগিতায় সমন্বয় করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আগামী জুলাই মাসে জেলা প্রশাসকের জেলা উন্নয়ন সম্মেলনে উত্থাপনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলার খাল পুনঃখনন প্রকল্পের তালিকা ইতোমধ্যেই পাঠিয়েছেন তিনি। খালগুলো পুনঃখনন না করতে পারলে কৃষকেরা কৃষি উৎপাদন থেকে পিছিয়ে পড়বেন এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল