০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জীবননগরে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি হুমকিতে ফসলি জমি ও বাড়িঘর

ধোঁয়ায় নষ্ট পরিবেশ
-

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় প্রতি বছর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কৃষি জমিকে অকৃষি জমি দেখিয়ে এবং জনবসতি এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠায় ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিবর্ণ হয়ে উঠছে। এ কারণে জনস্বাস্থ্য,পরিবেশ, কৃষি ও কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরস্পর যোগসাজশে কৃষি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে, তিন ফসলি জমিকে এক ফসলি দেখিয়ে এবং জনবসতি এলাকাকে জনশূন্য হিসেবে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই দিনের পর দিন গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটার কারণে কৃষি ও কৃষক উভয়ই মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর দাবি অবৈধ ইটভাটার কারণে আশপাশে ধান, সবজি, আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এতে এক দিকে কৃষির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। ইটভাটার কারণে অনেক জনবসতি এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মাঝে মধ্যে সোচ্চার হলেও তারা প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় এক সময় পিছু হটতে বাধ্য হয়। অন্য দিকে ইটভাটা মালিকেরা কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়াচ্ছেন। আইন অমান্য করে জমি মালিকদের টাকার প্রলোভন দিয়ে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এত কিছু চোখের সামনে ঘটলেও প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকেন।
সংিিশষ্ট সূত্র জানিয়েছে উপজেলায় ২৪টি ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জীবননগর-কালীগঞ্জ ও দেহাটি-সন্তোষপুর মহাসড়কের পাশে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নেই। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। উপজেলার বাঁকা, আন্দুলবাড়ীয়া ও কেডিকে ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম চলছে। এসব অবৈধ ইটভাটার অধিকাংশের মালিক ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বেশির ভাগ ইটভাটা ফসলি জমি, জনবসতি ও প্রাতিষ্ঠানিক এলাকায় গড়ে উঠেছে।
জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়রুল বাসার শিপলু বলেন, অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে এলাকায় দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। আর ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষি ও কৃষক। এসব অবৈধ ইটভাটার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর দায়ী।
জীবননগর বিশ্বাস ব্রিকসের মালিক আবদুল হালিম বিশ্বাস বলেন, আমার জানামতে উপজেলার বিবিএম, আউয়াল ব্রিকস, মাসুম ব্রিকস, এএনজেএম ব্রিকস, লতিফ ব্রিকস, ভাই ভাই ব্রিকস ও মোল্যা ব্রিকস ইটভাটায় কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র, প্রশাসনের অনুমতি এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে ইট উৎপাদন করছে। আমার ইটভাটা পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলায় এলাকার পরিবেশ ও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। অবৈধ ইটভাটাগুলো কিভাবে চলছে, তা আমার জানা নেই। যারা চালাচ্ছে শুধু তারাই বলতে পারবেন।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কমৃকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া এবং পরিবেশসম্মত না হলে ইটভাটা নির্মাণ করা যায় না। জনবসতি ও কৃষির ক্ষতি না হয় এমন স্থানে ইটভাটা গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement