২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘আমি ১০০ বারের বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

- ছবি : বিবিসি

১২ বছর বয়স থেকে ১০০ বারের বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে কোনো সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে রচডেলের এক ভুক্তভোগী।

সেখানকার সংঘবদ্ধ ধর্ষক দলের হাতে নিপীড়নের শিকার রুবি (ছদ্মনাম)। তিনি বিবিসি নিউজ নাইটকে আরো বলেন, পুলিশ তার গর্ভপাতের পর ডিএনএন টেস্টের জন্য ভ্রুণটি নিয়ে যায় তাকে না জানিয়েই।

সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ম্যাগি অলিভার বলেন, রুবি’র নিপীড়নের ঘটনার আরো অনেক বছর পরে এসেও শিশুদের যৌন নির্যাতন দেশজুড়ে ঘটেই চলেছে।

গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ যথাসময়ে ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়টাতে দুর্বল পরিষেবা ‘খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে যতদিন পর্যন্ত শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন দেশ থেকে উচ্ছেদ করা না যাচ্ছে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বাহিনীটি।

রুবি চান এরপরে যদি কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাতে আসেন, তার কথাটা যেন শোনে পুলিশ।

পুলিশের জেরার পর কাউন্সিলিং ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রচডেলের মেয়ে শিশুদের পুলিশ এবং স্থানীয় পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের উদাসীনতার কারণেই ‘পিডোফাইল গ্রুমিং গ্যাং’ বা শিশু নির্যাতনকারীদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে।

২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ১১১টি ঘটনা নিয়ে ওই পর্যবেক্ষণটি করা হয়, যাতে একের পর এক পুলিশের ব্যর্থতার নজির বেরিয়ে আসে। এখনো অন্তত এমন ৯৬ ব্যক্তির সন্ধান তারা পেয়েছেন, যারা ওই এলাকার শিশু ও কিশোরীদের জন্য একটা হুমকিস্বরূপ।

‘আমার আর কোন বোধ ছিল না'
সর্তকতা : কোনো কোনো পাঠকের জন্য প্রতিবেদনটি অস্বস্তিদায়ক হতে পারে।

রুবি (ছদ্মনাম) বিবিসিকে জানিয়েছেন, কিভাবে তার জীবনে নিপীড়নের অধ্যায় শুরু হয়েছিল।

তাকে ও তার কয়েকজন বন্ধুকে কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি তাদের ফ্ল্যাটে পানাহার ও বেড়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা এই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়। কয়েক সপ্তাহ এতেই সীমাবদ্ধ ছিল ব্যাপারটা।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু একদিন, আমরা যে ঘরে বসতাম সেখানে অন্য লোক আছে বলে জানায় তারা। আমাদেরকে ফ্ল্যাটের অন্য একটা ঘরে বসতে বলে। তারা আমাদের এক বোতল ভদকা দিয়েছিল। ফলে যখন আগের ঘরটাতে গেলাম ততক্ষণে আমরা সবাই প্রায় মাতাল।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন লোক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং তারপর শুরু হলো ধর্ষণ। একজন শেষ করে। তারপর আরেকজন আসে। সারা রাত এভাবে চলেছে।

সেদিনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চলতে থাকে বলে জানান রুবি। কারণ, গ্যাংয়ের লোকগুলো নানা হুমকি দিতো। তিনি উপলব্ধি করেন, তার আর এর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।

‘তারা আমাদের নাম্বার নিয়ে নিয়েছিল। স্কুলে আসতো। বাসার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতো। খুঁজতো সবখানে এবং খুঁজে বের করে ফেলতো।’

তিনি বলেন, চার বছরে সম্ভবত ১০০ বারের বেশি তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই পুরুষরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতো।

‘ব্র্যাডফোর্ড, নেলসন, বার্মিংহাম, ব্ল্যাকপুল- গ্যাংগুলো সবখানে নিয়ে যেত আমাদের।’

‘আমার আর কোনো বোধশক্তি ছিল না।’

২০০৮ সালে রুবি একটা সেক্সুয়াল হেলথ ক্লিনিকে যান। আর কোথাও সাহায্য না পেয়ে এক ধরনের আকুলতা নিয়েই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি।

‘স্কুলে জানিয়েছিলাম, ফলে সোশ্যাল সার্ভিস জানতো আমাদের সাথে কী ঘটে চলেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছুই হয়নি। ফলে একদিন সরাসরি সোশ্যাল সার্ভিসের অফিসেই যাই। কিন্তু তারা কিছু কনডম ধরিয়ে দিয়ে আমাদের বিদায় করে দেয়।’

রিভিউ থেকে জানা গেছে, রুবি ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন টিমের কাছে তার ‘বয়স্ক বন্ধুদের’ দ্বারা যৌন নিপীড়নের কথা জানিয়েছিল।

ওই বছরই তাকে একটা চাইল্ড প্রটেকশন প্ল্যান বা শিশু সুরক্ষা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়। ২০০৯ সালের শুরুতে পুলিশ তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে।

১৩ বছর বয়সে রুবির একটা গর্ভপাত হয়। সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার জন্য সেই ভ্রুণ পুলিশ ফরেনসিক তদন্তের জন্য নিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়, রুবিকে না জানিয়ে ভ্রুণ নিয়ে যাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে ভ্রুণের সৎকার করতে চাইলে সেটা তাদের জানাতে বলেছিল রুবিকে।

২০১০ সালে রুবি একজন সমাজকর্মীকে জানান, ওই সময়ে তিনি ছয়জন এশীয় ব্যক্তির হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

সোশ্যাল সার্ভিসের কাছে প্রায় ৬০ জন লোকের কথা উল্লেখ করে, তাদের হাতে ব্যাপক শিশু নির্যাতনের কথাও বলেছিলেন তিনি।

বছর দুই পর তার নিপীড়নকারীদের একজনকে আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় যৌন নির্যাতনের লক্ষ্যে অপহরণের অভিযোগে। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় রুবি তাকে একটি স্থানীয় দোকানে দেখতে পান। ওই আসামির জেল থেকে মুক্তির বিষয়েও তাকে অবগত করা হয়নি বলে জানান তিনি।

‘আমি দ্বিতীয়বার ফিরে তাকালাম। কারণ বিশ্বাস করতে পারছিলাম ঠিক দেখছি কিনা। তারপর যখন বুঝতে পারলাম সে সত্যিই ওখানে আছে, আমি ছুটে বেরিয়ে যাই। একছুটে বাড়িতে গিয়ে ঢুকি। পরের তিন মাস আর বাড়ি থেকে বেরোইনি।‘

রুবি বলেন, তিনি পুলিশকে ফোন করেছিলেন। তারা কোনো পদক্ষেপই নেননি উল্লেখ করে নিজের ভয়াবহ মানসিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন তিনি।

পর্যালোচনা বলছে, ওই নয় বছরের বেশি সময় ধরে শিশুদের ওপর চলা যৌন নিপীড়নের বিষয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ-জিএমপি’র করা তদন্তগুলোই বলে দেয়, বাহিনীটি এই অপরাধকে খুব একটা আমলে নেয়নি।

২০১২ সালে জিএমপি থেকে পদত্যাগ করে এসব অপরাধের ভিক্টিমদের জন্য একটা ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন ম্যাগি অলিভার।

তিনি বলেন, শিশুদের যৌন নিপীড়ন এখনো রচডেল তো ঘটছেই। তার ফাউন্ডেশন ‘সারা দেশেই’ এমন অনেক ভুক্তভোগী পেয়েছে।

মিজ অলিভার বলছিলেন, ‘আজকের ভুক্তভোগীরাও আমাকে একই কথা বলছে যা রুবি এবং অন্য শিশুরা আমাকে সেই ১২ বছর আগে বলেছিল।

অবশ্য এসব অভিযোগের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন এসেছে।

জিএমপি’র একজন প্রতিনিধি বলেছেন, তারা এখন ভিকটিমদের কথা কিভাবে শুনতে হয় এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হয় সেটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
পঞ্চগড়ে গ্রেফতার ১০ মুসলমানকে অবিলম্বে মুক্তি দিন : খতমে নবুওয়াত রামেক হাসপাতালের দুদকের অভিযান চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার নোয়াখালীতে গরমে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ল ১৮ শিক্ষার্থী থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আকস্মিক পদত্যাগ রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু বরিশালে যাত্রীবেশে উঠে চালকের গলায় ছুরি, প্রতারক দম্পতি গ্রেফতার রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে আরো ২ শিশুর মৃত্যু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার এনজিওর টাকা তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধূ নিহত ভিজিএফবঞ্চিতদের মানববন্ধনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা, আটক ২

সকল