২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি চুম্বনেই প্রভাবশালী ব্রিটিশ মন্ত্রীর পতন

- ছবি সংগৃহীত

একটি চুম্বন দৃশ্য এ সপ্তাহে ব্রিটিশ রাজনীতিতে যে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে এবং পরিণামে এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর পতন ডেকে আনে আর তা সব ব্রিটিশ সংবাদপত্রের প্রথম পাতা দখল করেছিল।

দু’জন নারী-পুরুষের এই চুম্বন দৃশ্য ধরা পড়েছিল ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সিসিটিভি ক্যামেরায়। ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে থাকা দুই নারী-পুরুষ কোনো সাধারণ মানুষ নন। এদের একজন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক আর অপরজন তারই বান্ধবী ও সহকর্মী। যাকে তিনি নিজেই নিয়োগ দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপদেষ্টা হিসেবে।

একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা, দ্য সান, গত শুক্রবার ম্যাট হ্যানকক ও তার সহকর্মীর এই চুম্বন দৃশ্য ফাঁস করার পর এটি ব্রিটিশ রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র ওয়েস্টমিনস্টারে যেন রীতিমত ভূমিকম্প ঘটিয়ে দেয়।

ম্যাট হ্যানকক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রিসভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের একজন।

কোভিড মহামারী শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সরকারের অন্যতম কাণ্ডারি। এই মহামারী মোকাবেলায় গত ১৮ মাস ধরে যেসব নীতি এবং পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন তার জন্য বার বার তিনি ছিলেন বিতর্ক এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু গত ১৮ মাসে নানা বিতর্ক ও ব্যর্থতার জন্য বার বার তার পদত্যাগের দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগে বাধ্য হলেন শুধুমাত্র একটি চুম্বনের জন্য। এই চুম্বন কেবল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেই বিপর্যয় ডেকে আনেনি বরং তার পারিবারিক জীবনেও সঙ্কট তৈরি করেছে।

মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি হ্যানকক তার স্ত্রীর সংসার ছেড়েও বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। খবরে বলা হয়, ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সান, যারা প্রথম চুম্বন দৃশ্যের খবর ফাঁস করেছিল, রোববার তাদের প্রথম পাতা জুড়ে একটাই শিরোনাম: ‘ম্যাট ফিনিশড’, অর্থাৎ ম্যাট হ্যানকক শেষ হয়ে গেছেন।

আরেকটি টেবলয়েড দ্য মিররও হুবহু ওই একই শিরোনামে এই খবর ছেপেছে।

দ্য ডেইলি মেইলের শিরোনাম ছিল, ‘হ্যানকক কুইটস হিজ জব অ্যান্ড ম্যারেজ। অর্থাৎ হ্যানকক তার চাকরি ছেড়েছেন। বিয়েও ভেঙ্গেছে তার।

যেভাবে পদত্যাগে বাধ্য হলেন
ম্যাট হ্যানকক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন শনিবার। কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ডাউনিং স্ট্রীট বলে যাচ্ছিল তার প্রতি বরিস জনসনের যথেস্ট আস্থা আছে। বলা হচ্ছিল হ্যানকক নিজেই যেহেতু এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন, তাই ‘দ্য ম্যাটার ইজ ক্লোজড’, অর্থাৎ ব্যাপারটা এখানেই মিটে গেছে। কিন্তু এই ঘটনা ব্রিটিশ রাজনীতিতে এবং জনমনে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে, শেষ পর্যন্ত হ্যানকক পদত্যাগে বাধ্য হন। শনিবার লন্ডনে যেসব লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, সেখান থেকেও তার পদত্যাগের দাবি ওঠে।

ম্যাট হ্যানকক বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। সরকারি দফতরের করিডোরে যার সাথে তাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ এবং চুম্বনরত অবস্থায় দেখা গেছে, তার সেই উপদেষ্টা জিনা কোলাডেনজেলোও বিবাহিত।

ব্রিটিশ মন্ত্রীদের পরকীয়া প্রেম এবং এ নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নিজেরও একাধিক পরকীয়া প্রেমের কাহিনী এর আগে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। তবে ম্যাট হ্যানকক যে পদত্যাগে বাধ্য হলেন, তার কারণ এই পরকীয়া প্রেম নয় বরং তার নিজেরই তৈরি করা করোনা কালের লকডাউনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের অভিযোগ।

হ্যানকক তার নিজের দফতরে তার সহকারীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেছিলেন ৬ মে। তখন পর্যন্ত ব্রিটেনে যে লকডাউন বিধিনিষেধ জারি ছিল তাতে নিজের পরিবারের বাইরের সবার সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। কাউকে চুমু খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

দ্য সান পত্রিকার কলামিস্ট জেইন মুর বিবিসির অ্যান্ড্রু মার শোতে বলেন, ‘মানুষ হিপোক্রেসি পছন্দ করে না। একদিকে আপনি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলিয়ে বলছেন, কোভিডের সময় তাদের কি আচরণ করতে হবে, কিভাবে চলতে হবে, অথচ অন্যদিকে আপনি নিজেই সেই নিয়ম ভঙ্গ করছেন। সেই নিয়ম তো আপনাকেও মেনে চলতে হবে।

সংবাদাতা নিকোলাস ওয়াট বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তাকে বরখাস্ত করতে পারছিলেন না, কারণ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিজেও সাধু-সন্ন্যাসী নন। আর তিনি জনদাবির মুখে কাউকে বরখাস্ত করা পছন্দ করেন না। কিন্তু দলের ভেতর থেকেই এমন চাপ তৈরি হলো যে, শেষ পর্যন্ত হ্যানকককে সরে দাঁড়াতে হলো।’

ম্যাট হ্যানককের ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। যারা যারা কোভিড রুল ভঙ্গ করেছিল, তাদের ম্যাট হ্যানকক কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু লোকে বলছে, আপনি মুখে এক কথা বলবেন, আর নিজে উল্টোটা করবেন, সেটা তো চলতে পারে না।

চুম্বন দৃশ্য ফাঁস হলো যেভাবে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো জায়গায়, যেখানে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে, সেখানে কিভাবে নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা এই ভিডিও বাইরে ফাঁস হলো, সেটা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।

ব্রিটিশ সরকার বলছে, এমন এক গোপন ভিডিও কিভাবে ধারণ করা হয়েছিল, তা বের করতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালানো হবে। উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইস নিশ্চিত করেছেন যে কীভাবে হ্যানককের অফিসে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ও কিভাবে তা ফাঁস করা হলো স্বাস্থ্য বিভাগ তা তদন্ত করে দেখবে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, নিরাপত্তার দিক থেকে ব্যাপারটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং সম্ভবত বিষয়টি পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত।

ব্রিটেনের ডেইলি মেইল পত্রিকা লিখেছে, সম্ভবত ম্যাট হ্যানককের নিজের দফতরের কোনো কর্মীই এই ভিডিওটি ফাঁস করে দিয়েছে। তবে হ্যানককের ঘনিষ্ঠজনরা সন্দেহ করছেন এর পেছনে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা এমনকি কোনো বিদেশী শক্তির হাত থাকতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না

সকল