২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আ’লীগ নেত্রীর পর্নোগ্রাফি মামলায় জেলহাজতে কলেজ অধ্যক্ষ ও সহোদর চেয়ারম্যান

সুনামগঞ্জে আ’লীগ নেত্রীর পর্নোগ্রাফি মামলায় জেলহাজতে কলেজ অধ্যক্ষ ও সহোদর চেয়ারম্যান - ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর দায়ের করা পর্নোগ্রাফি মামলায় বিবিয়ানা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার ও তার সহোদর নবীগঞ্জ উপজেলার বড় বাখৈর ইউপি চেয়ারম্যান রঙ্গলাল চন্দ্র তালুকদারকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

সোমবার সুনামগঞ্জ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহিম সহোদর দুই ভাইকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজরানী চক্রবর্তীর পর্নোগ্রাফি মামলায় দিরাই উপজেলার ভাইটগাও গ্রামের নগেন্দ্র দাসের ছেলে আপন দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন।

সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক আব্দুর রহিম আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের উভয়কে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা বিবিয়ানা মডেল কলেজের বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাসের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী রাজরানী চক্রবর্তীর সাথে ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডের অশ্লীল ভিডিও সামজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওইদিন দুপুরের পর থেকে বিবিয়ানা কলেজ এলাকার বাসিন্দাদের একাধিক ফেসবুক আইডি হতে অধ্যক্ষের নানা অপকর্মের ফিরিস্তিসহ ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হতে থাকে। এর পর দেশ-বিদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীসহ উপজেলার সর্বত্র তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। সন্ধ্যা নাগাদ সচেতন মহলে নানা গুঞ্জনসহ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

একইভাবে চেয়ারম্যান রঙ্গলাল দাস তার আইডি থেকে রাজরাণী চক্রবর্তী ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর ছবি এডিট করে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন।

পৃথক এ দুটি ঘটনায় দিরাই থানা লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তৎকালীন ওসি গ্রহণ না করে আদালতে যেতে বলেন। পরে তিনি আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনে পিটিশন দাখিল করেন।

আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি গতবছর ১৮ অক্টোবর তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর দুই আসামি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন।

সোমবার সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের তর্ক-বির্তকের পর বিচারক আব্দুর রহিম জামিন নামঞ্জুর করে আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক পসিকিউর সোহেল আহমেদ।

এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহার নয়া দিগন্তকে বলেন, আদালতের নির্দেশ বাদীনির মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুই আসামি অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাস ও তার ভাই চেয়ারম্যান রঙ্গলালের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করি। সোমবার দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন আদালত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিরাই উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রাজরানী চক্রবর্তীর সাথে ৭-৮ বছর আগে অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র চন্দ্র তালুকদারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইউপি সদস্য থাকাকালীনই অধ্যক্ষের প্ররোচনায় স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় রাজধানী চক্রবর্তীর।

এক পর্যায়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সিলেট শহরে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেন নৃপেন্দ্র তালুকদার। তবে এই অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি রাজরানীর স্বামী দুই সন্তানের জনক মধূসুদন চক্রবর্তী।

মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন।

অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র দাসের প্ররোচনায় স্ত্রী রাজরানী চক্রবর্তী কর্তৃক দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে তিনি দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন। এ নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সময় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজরানীর স্বামী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থীও হন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে অধ্যক্ষের সখ্যতা থাকায় কোনো সমাধান হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement