ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলো বিজেপি। অমিত সাহের ভার্চুয়াল জনসভার মধ্য দিয়ে।
বিধানসভা নির্বাচন আরও প্রায় নয়-দশ মাস দূরে। রাজ্যে এখন করোনায়আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিছুদিন আগেই আমফানে বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিশাল এলাকা। এখনও সুন্দরবনে অসহায় অবস্থায় ত্রাণশিবিরে বা কোনওক্রমে প্লাস্টিকের চাদরে ঢাকা ঝুপড়িতে রাত কাটাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তাদের ঘরবাড়ি জলের তলায়। এই পরিস্থিতিতেই বিধানসভা নির্বাচনের বিউগল বাজিয়ে দিলেন বিজেপি নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভার্চুয়াল সভার মধ্যে দিয়ে।
ভার্চুয়াল সভা মানে দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে বসে ভাষণ দিচ্ছেন অমিত শাহ। ফেসবুক এবং ইউটিউবে তা লাইভ দেখানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ৭০ হাজার বড় টিভি স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। সেখানে কর্মী, সমর্থকরা জড়ো হয়ে অমিত শাহের ভাষণ শুনলেন। পরিবর্তন আনার আহ্বান শুনলেন।
করোনাকালে এও এক পরিবর্তন। বিশাল মাঠে প্যান্ডেল করে মঞ্চ বেঁধে জনসভা নয়। কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাসে, ট্রেনে করে লোক আনার ব্যবস্থা করা যাবে না এখন। শহরতলির ট্রেন চলছে না। বাসও কম। তার ওপর এই পরিস্থিতিতে লোক জোগাড় করে জনসভা করতে গেলে লোকের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। আর প্রচার শুরু করার জন্য দেরি করতেও তারা নারাজ। তাই ভার্চুয়াল জনসভার পথ নিয়েছেন অমিত শাহ। সেখানেও অবশ্য সমর্থকদের এলইডি স্ক্রিনের সামনে জড়ো করতে হয়েছে।
অমিত শাহর ভাষণ থেকে বেশ কয়েকটি বিষয় সাফ হয়ে গিয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের ক্যাচলাইন হবে, সোনার বাংলা গড়তে বিজেপিকে ভোট দিন। প্রচারের অভিমুখ হবে, দুর্নীতি, হিংসা, ভাইপো-বাদ, অনুপ্রবেশ, সিন্ডিকেটরাজ শেষ করতে গেলে বিজেপিকে ভোট দিতে হবে। বিজেপি-র হাতিয়ার হবে, কট্টর হিন্দুত্ব। এ দিনই বাংলার নেতারা ভার্চুয়াল জনসভায় বারবার জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলেছেন।
অমিত শাহ সিএএ, অনুপ্রবেশের কথা বলেছেন। তুলেছেন রামমন্দিরের কথাও। আর জাগিয়ে তোলা হবে জাতীয়তাবাদ, স্বদেশী জিনিস ব্যবহারের আবেদনের মধ্য দিয়ে। যার শপথ মঙ্গলবার অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে সাধারণ নেতা-কর্মীরাও নিয়েছেন। অমিত শাহ পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার কথাও টেনেছেন। অর্থাৎ বিজেপি-র হাতে যত অস্ত্র আছে, সবই পশ্চিমবঙ্গে ব্যবাহার করা হবে।
স্বাভাবিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন শাহ। তিনি বলেছেন, সিএএ রাজনীতি মমতাকেই শরণার্থী করে দেবে। এই সংকটের সময়েও বাংলায় হিংসা হচ্ছে। করোনা ও আমফানের পরেও তৃণমূলের দুর্নীতি কমেনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনকে দিদি করোনা এক্সপ্রেস বলেছেন। ওই ট্রেনে করেই তাকে রাজ্যের বাইরে চলে যেতে হবে। মমতাদিদি চেষ্টা করেও বাংলায় পরিবর্তন ঠেকাতে পারবেন না।
অমিত শাহের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে বাংলার কৃষকদের তালিকা দিন। তাঁদেরও কেন্দ্রীয় সরকার বছরে ছয় হাজার টাকা দিতে চায়। বিজেপি সরকার গঠন করলে প্রথমেই গরিবদের জন্য বিমা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত চালু করবে।
অমিত শাহের ভার্চুয়াল সভার আগে তৃণমূল নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা টুইট করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, চীন কি ভারতের ভূমি দখল করেছে? আশা করি এই প্রশ্নের জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেবেন। তিনি তো দুঃসময়ে বাংলার জন্য কিছু করেননি। এই প্রশ্নের জবাবটা দিন। অমিত শাহ অবশ্য সেই জবাব দেননি। বরং তিনি আক্রমণ করেছেন অভিষেককে।
মাঠে এখন কার্যত কেউ নেই। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচার শুরু হলো। তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস কেউই সেই অর্থে ভোটের প্রচার শুরু করেনি। প্রচুর ঢাকঢোল পিটিয়ে, অর্থ ব্যয় করে অন্যদের থেকে এগিয়ে প্রচার শুরুর কোনও সুবিধা কি পাবেন অমিত শাহ? ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা