২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তৃতীয় নয়ন

সোমালি জলদস্যুর কবলে

সোমালি জলদস্যুর কবলে - ফাইল ছবি

ভারত মহাসাগরে একদল সশস্ত্র জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ।

চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন ২৩টি জাহাজের একটি এমভি আবদুল্লাহ। এর পণ্য পরিবহন ক্ষমতা ৫৮ হাজার টন। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম জানান, জাহাজটি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংয্ক্তু আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। মোজাম্বিক থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ২৩ নাবিকের সবাই নিরাপদে আছেন বলে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বার্তা পেয়েছেন তারা। মেহেরুল করিম বলেন, তারা জাহাজের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। যোগাযোগ করা হলে নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

সমুদ্রগামী জাহাজের অবস্থান জানা যায় জাহাজ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইটে। তেমনি একটি ওয়েবসাইট ভেসেল ফাইন্ডারে দেখা যায়, জাহাজটি মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়। ১৯ মার্চ জাহাজটি আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছার কথা ছিল। মাপুতু থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর জলদস্যুদের কবলে পড়ে। উপকূল থেকে দূরে গভীর সাগরে সর্বশেষ অবস্থান দেখা যাচ্ছে জাহাজটির।

২০১০ সালে আমার একজন নিকটাত্মীয় এরকম জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর তৎকালীন সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ৮ মে আরব সাগরের গালফ অব এডেনে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জার্মান অয়েল ট্যাংকার মারিডা মারগারিটা। জাহাজের ২২ ক্রুর দু’জন ছিলেন বাংলাদেশী। তাদের একজন প্রধান কর্মকর্তা জাফর ইকবাল, অন্যজন দ্বিতীয় প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন আজম খান। প্রায় সাড়ে সাত মাস জিম্মি থাকার পর সে বছরের ২৮ ডিসেম্বর তারা মুক্তি পান।

সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছিনতাই হওয়ার আড়াই দিন পর সোমালিয়া উপকূল জলদস্যুদের আস্তানা ‘বাজহাকুন’ পৌঁছায় জাহাজটি। নোঙর করার পর আগের ছয়জন জলদস্যু ছাড়াও আরো ৫০-৬০ জন সশস্ত্র লোক জাহাজে উঠে গেল।

এর পরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে নিকটাত্মীয় জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা জাফর ইকবালের মুখে, ‘বাজহাকুন থেকে আবার জাহাজ ছুটল গারাকার উদ্দেশে। জলদস্যুদের শেষ আস্তানায় পৌঁছার তিন দিন পর একজন এলেন, জানতে পারলাম তিনি মধ্যস্থতাকারী। লোকটি শিক্ষিত, ভালো ইংরেজি জানেন। নাম আলী জামান। তিনি সবার উদ্দেশে বললেন, ‘জলদস্যুরা কারো কোনো ক্ষতি করবে না। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পেলে সবাইকে ছেড়ে দেবে। তাতে আমাদের উদ্বেগ একটু কমে।’

জাফর ইকবাল জানান, ছিনতাই হওয়া প্রতিটি জাহাজে এরকম একজন মধ্যস্থতাকারী থাকে, বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে তাকে আনা হয়। কারণ জলদসু্যুরা জাহাজ ছিনতাই করতে পারে কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের মহাযজ্ঞ কীভাবে শেষ করতে হয় তা তারা জানে না। ৩০-৪০ জন জলদস্যু পালা করে নাবিকদের পাহারা দিতো। জাহাজের উপর থেকে নিচে যেতে অনুমতি নিতে হতো, সাথে সশস্ত্র পাহারা থাকত। আর কোম্পানির সাথে যোগাযোগ ও সমঝোতার কাজ করত মধ্যস্থতাকারী।


আরো সংবাদ



premium cement