২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমকালীন প্রসঙ্গ

দুর্ভোগ-দুর্দশা কেন আসে, কেন যায়

দুর্ভোগ-দুর্দশা কেন আসে, কেন যায় - নয়া দিগন্ত

মহামতি সেনেকা ও মার্কাস অর্লিয়াস দু’জনেই আমার অতিশয় প্রিয় ব্যক্তিত্ব। দু’জনেই ছিলেন মহান রাজপুরুষ এবং পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা দার্শনিক। সম্্রাট মার্কাস অর্লিয়াস রোম শাসন করেন ১৬১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০ অব্দ পর্যন্ত। অন্যদিকে, সেনেকা ছিলেন সম্রাট ক্লডিয়াসের বন্ধু এবং মন্ত্রী। পরবর্তীকালে তিনি রাজপুত্র নিরোর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সেনেকা ও মার্কাস অর্লিয়াসের সফলতা-শ্রেষ্ঠত্ব এবং মহাকালের ইতিহাসে কিংবদন্তি হওয়ার নেপথ্যে তাদের জীবনের দুর্ভোগ দুর্দশা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল- তার সাথে আজকের নিবন্ধের শিরোনামের যথার্থতার সম্মিলন ঘটাতেই নাম দুটোর কথা মনে এলো। সফলতা-ব্যর্থতা, দুঃখ-দুর্দশা মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসব দ্বারা আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ পৃথিবীতে কোনো কালে ছিল না। কিন্তু যারা সফলতা-ব্যর্থতা, দুর্ভোগ-দুর্দশা ইত্যাদি সমন্বয় করতে পেরেছেন তারাই নিজেদের জীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছেন। আর যারা পারেননি তারা হারিয়ে গেছেন কিংবা সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমার বন্ধু মজনু মিয়ার সফলতা কিংবা অন্য বন্ধু ধলা মিয়ার ব্যর্থতার গল্পের চেয়ে মানুষ সাধারণত রাজা-বাদশাহদের কাহিনী শুনতে পছন্দ করবে বিধায় মজনু ও ধলা মিয়ার পরিবর্তে মহামতি সেনেকা ও মার্কাস অর্লিয়াসের জীবনকাহিনী উপলক্ষ করে আজকের নিবন্ধ শুরু করলাম।

সেনেকার জ্ঞান-গরিমা এবং দার্শনিকতা সক্রেটিস, প্লেটো অথবা কনফুসিয়াসের পর্যায়ে ছিল। অধিকন্তু রাজনীতিতে তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন, অথচ তিনি সারা জীবনের সাধনা দিয়ে যাকে শিক্ষিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন সেই ছাত্রই তাকে হত্যা করেছিল। কুখ্যাত রোমান সম্রাট নিরো যখন তার শিক্ষক সেনেকাকে বিষপানে আত্মহত্যার নির্দেশ দিলেন তখন সেনেকার স্ত্রী এগিয়ে এসে নিরোকে নিবেদন করলেন, সেনেকার সাথে বিষপান করে সহমরণে শরিক হওয়ার জন্য। সম্রাট হাসিমুখে অনুমোদন দিলেন এবং মহামতি সেনেকা সস্ত্রীক বিষপানে আত্মাহুতি দেয়ার আগে যেভাবে হেসেছিলেন তা দেখে অত্যাচারী নিরোর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল।

মার্কাস অর্লিয়াসের মৃত্যু ছিল আরো করুণ। নিজের কুপুত্র কমোডাসের হাতে সাম্রাজ্যের দায়িত্ব অর্পিত হলে পুরো রোমান সাম্রাজ্য যে কত বড় অভিশাপের কবলে পড়বে তা তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে নিজ কন্যার সাথে সেনাপতি ম্যাক্সিমাসের বিয়ে দিয়ে তার হাতে সাম্রাজ্যের দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য তিনি যখন যুদ্ধের ময়দানে তাঁবুতে বসে কোনো এক রাতে নিজের পরিকল্পনার কথা সেনাপতিকে বলছিলেন, তখন সেনাপতি কমোডাস প্রথমে ভয় ও আতঙ্কে কেঁপে ওঠেন। তিনি সম্রাটকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, রাজকীয় প্রথা অনুযায়ী যুবরাজ জীবিত থাকলে এটি কোনোমতেই সম্ভব নয়। সম্রাট অর্লিয়াস জানালেন, এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুমি এবং আমি জান নিয়ে ফিরতে পারব না যদি কমোডাস জীবিত থাকে অথবা অনাগত দিনে সে যদি সিংহাসনে বসে তবে নিয়তির অপেক্ষা না করে সে আমাকে হত্যা করবে এবং পরবর্তীতে তোমাকেও।

সম্রাট ও সেনাপতি যখন কথা বলছিলেন তখন তাঁবুর আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কিছু শুনছিলেন কমোডাস। সেনাপতি বের হয়ে যাওয়ার পর তিনি পিতার তাঁবুতে ঢোকেন এবং পিতাকে আলিঙ্গন করার ছলে কিভাবে সম্রাট মার্কাস অর্লিয়াসকে খুন করেন তা যদি কেউ দেখতে চান তবে হলিউডের অস্কারজয়ী সিনেমা গ্লাডিয়েটর দেখে নিতে পারেন। মার্কাস অর্লিয়াসের সাথে আজকের শিরোনামের কি সম্পর্ক রয়েছে তা বলার আগে মহামতি সেনেকা এবং তার বন্ধু সম্রাট ক্লডিয়াস সম্পর্কে কিছু ইতিহাস বর্ণনা আবশ্যক।

সম্রাট ক্লডিয়াস রোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন ৪১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে এবং ১৪ বছর রাজত্ব করার পর ৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর রাতে নিজ স্ত্রী সম্রাজ্ঞী এগ্রোপিনার হাতে নিহত হন। তিনি ছিলেন অতিশয় জ্ঞানী-ন্যায়বিচারক ও সুবিবেচক। সাম্রাজ্যের উন্নয়ন এবং বিস্তৃতিতে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয় এবং তার জমানায় রোমান বাহিনী ইংল্যান্ড জয় করে। তার জীবনে নিয়তি-পরিণতি-চেষ্টা এবং জ্ঞান-গরিমা যেভাবে রাজনীতিকে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল তা মূল্যায়ন করতে পারলে অনেকের জীবনের সফলতা ও সার্থকতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাবে।

সম্রাট ক্লডিয়াস ছিলেন রাজকীয় পরিবারের সদস্য। শৈশব থেকেই তিনি আংশিক বিকলাঙ্গ ছিলেন এবং কানেও কম শুনতেন। ফলে রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারীর তালিকা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয় এবং তার স্থলে প্রথমে সম্রাট টাইবেরিয়াস এবং পরে কুখ্যাত সম্রাট ক্যালিগুনা সিংহাসনে বসেন। উভয় সম্রাটই ক্লডিয়াসকে নিতান্ত দুর্বল এবং অসহায় ভাবতেন। ফলে তারা রাজ পরিবারের বহু সদস্যকে হত্যা করলেও অসহায় এবং অপারগ বিবেচনায় ক্লডিয়াসকে বাঁচিয়ে রাখেন। সামরিক অভ্যুত্থানে সম্রাট ক্যালিগুলা নিহত হওয়ার পর রাজকীয় দেহরক্ষী বাহিনী যাদের উপাধি ছিল প্রিটোরিয়ান গার্ড তারা ক্লডিয়াসকে সিংহাসনে বসান যখন তার বয়স ছিল ৫১ বছর।

সম্রাট ক্লডিয়াস ছিলেন অনভিজ্ঞ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-দীক্ষাবর্জিত। তার সবচেয়ে বড় সফলতা ও বিচক্ষণতা ছিল যে, তিনি তার দুর্বলতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে জানতেন আর ওই কারণে তিনি তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি সেনেকাকে খুঁজে বের করেছিলেন এবং সেনেকার পরামর্শে একের পর এক বিস্ময়কর সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি এগ্রোপিনা নামক এক দুষ্ট মহিলার খপ্পরে পড়েন যিনি ছিলেন রাজ পরিবারের সদস্য। তিনি দেখতে মোটেও সুন্দরী ছিলেন না। অধিকন্তু চরিত্রহীনতা-নিষ্ঠুরতা এবং বহু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে তার কুখ্যাতি ছিল সীমাহীন। তিনি নিরো নামক এক জারজ সন্তানের জননী ছিলেন এবং রোমান রাজ প্রাসাদের ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়ে সম্রাট ক্লডিয়াস তার দুশ্চরিত্রা ভাতিজিকে বিয়ে করতে বাধ্য হন এবং তার জারজ সন্তানকে আপন পুত্র এবং ভবিষ্যৎ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী রূপে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

সম্রাট ক্লডিয়াস বুঝতে পারেন যে তিনি নিয়তির খপ্পরে পড়েছেন। সুতরাং তিনি জীবনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেন। এগ্রোপিনা এবং নিরো দ্বারা যেন রোমান সাম্রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ জন্য নিরোকে সর্বোত্তম শিক্ষা দেয়ার জন্য মহামতি সেনেকাকে মনোনীত করেন। অন্য দিকে, পারিবারিক বন্ধনের জাল থেকে নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রেখে জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত একের পর এক সফলতার মাইলস্টোন স্থাপনের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে গিয়ে একবার শয্যশায়ী হয়ে পড়েন- আর সেই সুযোগে এগ্রোপিনা তাকে হত্যা করে নিজের বালক পুত্র নিরোকে সিংহাসনে বসিয়ে পর্দার আড়াল থেকে সমস্ত কলকাঠি নাড়তে থাকেন।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে মহামতি সেনেকা নিরোর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধ্য হন। কিন্তু নিরো বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ মাকে হত্যা করেন এবং শিক্ষক সেনেকাকে নির্বাসনে পাঠান। সেনেকা জানতেন যে, তার অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু এবং তা নিরোর দ্বারাই নিষ্ঠুরভাবে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত দর্শনশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন এবং নির্বাসনকালীন সময়ে যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলো মানবজাতির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা সৃষ্টি কর্মরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে সংক্ষেপে কিছু বলে তারপর প্রসঙ্গের সাথে মার্কাস আর্লিয়াস ও সেনেকার জীবনের উপাখ্যান মেলানোর চেষ্টা করব। মানুষের জীবনে দুর্ভোগ-দুর্দশা কেন আসে। যারা দুর্ভোগের কবলে পড়েন তারা প্রায় সবাই দ্বিতীয় পক্ষ তৃতীয় পক্ষ কিংবা পরিবেশ-পরিস্থিতি অথবা সময়কে দায়ী করেন। যেসব দুর্ভোগের সাথে দৈব-দুর্বিপাক যেমন ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা, খরা, বজ্রপাত, দুর্ঘটনা, রোগ-জরা-মৃত্যু ইত্যাদিকে দায়ী করা হয় সে সবের জন্য অনেকে ক্রোধান্বিত হয়ে স্বয়ং আল্লাহ-রাব্বুল আলামিনকে দায়ী করে বসেন। অথচ পবিত্র কালামে পাকে আল কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যে, তোমাদের জীবনের যত দুর্ভোগ-দুর্দশা তার সব কিছুই তোমাদের দুই হাতের কামাই। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও প্রায় একই বক্তব্য হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে।

দুর্ভোগ দুর্দশার দুটো রূপ রয়েছে। প্রথমটি বক্তিগত ও পারিবারিক। দ্বিতীয়টি সামাজিক-রাজনৈতিক। এই দুটো ভাগকে যদি আপনি আর্থিক, শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্ভোগে বিভক্ত করেন তবে দর্শনশাস্ত্রের গভীর জ্ঞান অর্জন ছাড়া সব কিছুর কার্যকারণ অনুধাবন অসম্ভব। আপনার জীবনে যেসব দুর্ভোগ আসে তার প্রধান কারণ আপনার অলসতা-কাপুরুষতা এবং দক্ষতার অভাব। দ্বিতীয় স্তরে আপনার অনুভূতি-সহানুভূতি-মহানুভবতা-বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং কমনসেন্সের অভাবের কারণে দুর্ভোগ দুর্দশার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। আপনার অসততা, মোনাফিকি, অকৃতজ্ঞতা, অধৈর্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং খারাপ মানুষের সংস্পর্শের কারণে দুর্ভোগ-দুর্দশাগুলো প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে আপনার জীবনের সব কিছু তছনছ করে দেয়। আপনার লোভ-লালসা-কামনা-বাসনা-কুচিন্তা অনেকটা চৌম্বক শক্তির মতো দুর্ভোগ-দুর্দশাকে আপনার কাছে টেনে নিয়ে আসে। আর আপনি যদি চরিত্রহীন-বিবেকহীন-বেকুব প্রকৃতির হন তবে দুর্ভোগ-দুর্দশার আগুনে ঝাঁপ দেয়ার জন্য আপনার শরীর-মন-মস্তিষ্কে এক ধরনের অসুরের শক্তি পয়দা হয়ে যাবে।

আপনার জীবনে যে কারণে দুর্ভোগ-দুর্দশা আসে, আপনি যদি তা অনুধাবন করতে পারেন এবং আপনার মধ্যে যদি অনুতাপ ও অনুশোচনা প্রবল হয় তবে প্রাকৃতিক নিয়মে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার মন-মস্তিষ্কে এবং শরীরে দুর্ভোগ-দুর্দশা তাড়ানোর শক্তি-বুদ্ধি-কৌশল চলে আসবে। শরীরে পরিশ্রম-সাধনা এবং স্বার্থত্যাগের দৃঢ়তা নিয়ে কেউ যদি তওবা করে সঠিক পথে চলার প্রত্যয় নিয়ে নতুন করে পথ চলা আরম্ভ করে তবে দুর্ভোগ-দুর্দশার ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্ভোগ-দুর্দশার সঙ্গে নিজের কুকর্মের-কুচিন্তার সংযোগ স্থাপন করতে না পারবেন এবং অন্যকে দায়ী করার প্রবণতা ত্যাগ করতে না পারবেন ততদিন পর্যন্ত দুর্ভোগের আগুন থেকে রেহাই পাবেন না। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, কিছু দুর্ভোগ-দুর্দশার দায় এড়ানো সম্ভব নয়- কিছু কর্মের ফল ভোগ না করে মানুষ ইহলোক ত্যাগ করতে পারে না এবং পরিস্থিতি যদি এমনতর পর্যায়ে পৌঁছে তবে আপনি সেনেকা এবং মার্কাস অর্লিয়াসের মতো চেষ্টা করে নিজের জীবনকে দুর্ভোগের জাল থেকে আলাদা করে জীবনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলুন। এক ভাগ রেখে দিন দুর্ভোগ পোহানোর জন্য এবং অপর অংশ দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান পৃথিবীর বুকে ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement