০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তৃতীয় নয়ন

আইএমএফ : না গ্যাঁড়াকল?

আইএমএফ : না গ্যাঁড়াকল? - নয়া দিগন্ত

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির পর্যালোচনা মিশন এবার ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আমরা আজো পূরণ করতে পারিনি। কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে এই দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের প্রায় ৭০ কোটি ডলার ছাড় করার কথা। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের প্রয়োজনে আইএমএফ টিম এসেছে। তারা ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনা করবে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য দাবি করেছে, ‘আমরা আইএমএফের যুক্তি খণ্ডন করব। আশা করি, আইএমএফ দ্বিমত পোষণ করবে না।’

উল্লেখ্য, আইএমএফ এ বছর গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য আপাতত ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। এর তিন দিন পরই এই ঋণ দেয়া শুরু করে। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আইএমএফকে দেয়া তিনটি বড় শর্তই বাংলাদেশ এখনো পূরণ করেনি। এর মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া, অথচ প্রত্যেক দিনই নিট রিজার্ভ জমছে; দ্বিতীয়ত, সরকারের কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হয়নি। বাংলাদেশের আরেকটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নতুন ফরমুলা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট রিজার্ভ ডিসেম্বরে ২৬.৮১ বিলিয়ন ডলার হওয়ার কথা। আইএমএফের দেয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী, জুন মাসে থাকার কথা ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার। অথচ ছিল ২০.৪৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২০.৪৬ কোটি ডলার ছিল রির্জাভ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে আইএমএফ। অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে। এটাও সরকারের একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি, সার ও খাদ্যদ্রব্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে হয়েছে।

১৩ অক্টোবর আইএমএফ বলেছে, ২০২৩-২৪ সালের চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। এই ঘাটতি মিটাতে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হবে। অথচ এতে সরকারের ঘাটতি বাড়বে। আইএমএফের ‘ফিসক্যাল মনিটর, অক্টোবর-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আয়, ব্যয়, ঘাটতি, ঋণ এবং বিভিন্ন খাতে সরকারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যের চাপ, আর্থিক খাতের ঝুঁকি আর অনিশ্চয়তা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি আবার বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়ায় আমদানি কমে যাচ্ছে; এই মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক নীতির কার্যকর বাস্তবায়নের কথা বলেছে আন্তর্জাতিক ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকটি আর বাংলাদেশের অবকাঠামোর চাহিদা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রয়োজনে বিভিন্ন স্কিম থেকে বেশি সুদে ঋণ দিতে প্রস্তুত আছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও জাতী রাজস্ব নীতির আমূল পরিবর্তন আনা চাই।

আইএমএফের উল্লিখিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, এ দেশে কর ও জিডিপির অনুপাত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯.৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। কিন্তু এরপর এই হার কমছে। মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বা জিডিপি বৃদ্ধির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের অর্থের হারও কমে যাচ্ছে। ফলে কর ও জিডিপি অনুপাত হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৮.৯ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরে এ দেশে তা ৮.৩ শতাংশে নেমে যায়। আইএমএফ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত ছিল, প্রতি বছর জিডিপির ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব বৃদ্ধি করা। পরে তা ৭ শতাংশে উন্নীত করা। এভাবে দুই বছরের মধ্যে কর ও জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে, প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ে কর ও জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশে নিতে তিন বছর প্রতীক্ষা করতে হবে। আইএমএফ ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৫-২৬ সালে কর ও জিডিপির অনুপাত ১০.৩ শতাংশে পৌঁছানোর কথা কিন্তু তার বাস্তবায়ন ঘটছে না।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরে কিছুটা বাড়লেও খরচও বাড়বে। জিডিপির অনুপাতে সরকারের ব্যয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছিল ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর পর থেকে তা কমেছে। গত অর্থবছরে তা কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এটি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বৈকি।

রাজস্বের চেয়ে আর্থিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে ঘাটতিতে পড়বে বাংলাদেশ সরকার। চলতি অর্থবছরে এই ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরও ঘাটতি সাড়ে ৪ শতাংশে সীমিত থাকবে। তবে এর পরের বছর ঘাটতি বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের মোট ঋণ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। সাধারণত জিডিপির ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। গত অর্থবছরে সরকারের ঋণ ছিল জিডিপির ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা আরো বেড়ে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারের ঋণ আরো বেড়ে জিডিপির ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement
`দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বালাকোটের চেতনা ধারণ করে জামায়াত এগিয়ে যাবে' মির্জাগঞ্জে ঘোড়ার দৌড় দেখতে হাজারো মানুষের ঢল খাগড়াছড়ির ৪ উপজেলায় নির্বাচন বুধবার, হেলিকপ্টারে পাঠানো হলো ব্যালট দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে চারটি ঘাটতি রয়েছে : ড. দেবপ্রিয় বাল্টিক অঞ্চলের সুরক্ষা মজবুত করছে জার্মানি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাস রাজি হওয়ায় অবাক হয়েছে ইসরাইল সোনারগাঁওয়ে হাত পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি, আহত ৬ বিপদে জিম্বাবুয়ে, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আগামী সপ্তাহে পাকিস্তান সফর করতে পারেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ডেঙ্গুতে মাকে হারিয়েছি, আর কারো মা যেন না হারায় সে জন্য কাজ করবো : স্বাস্থ্যমন্ত্রী কৃষকদের হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : খাদ্যমন্ত্রী

সকল