২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ ও বাস্তবতা

প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ ও বাস্তবতা - ফাইল ছবি

ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু উদ্বোধনী প্রস্তুতি পর্বের আগে প্রধানমন্ত্রী একটি অভ্যন্তরীণ সভায় আক্ষেপ করে এমনটাই বলেছিলেন যে, এত কাজ করলাম, তবুও কি মানুষ ভোট দেবে না, যা তার ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। রাজনৈতিক মতবিরোধ যতই থাক না কেন, তারপরও বলতে চাই, পদ্মা সেতু জাতির জন্য একটি অর্জন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১(১) মোতাবেক এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্রোপারটি, যা জনগণের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রাক্কলন ও নির্মাণব্যয় নিয়ে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ শুরু থেকে থাকলেও সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সেতু নির্মাণের কারণে একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১) এবং (২) তে যা নির্দেশনা রয়েছে, তা নিম্নরূপ-

‘১৯ (১) ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।’ ১৯ (২) ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধা দান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার জনগণ যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ছিল অবহেলিত, এ সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রশ্নে তাদের ‘সুযোগের সমতার’ দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেয়া বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল প্রভৃতি। বাংলাদেশের বাস্তবতা এই যে, একদল নির্মাণ করে, অন্য দল উদ্বোধনী ফিতা কেটে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজেরা নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা শুরু করে। ঐতিহাসিক যমুনা সেতু নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছিল বিএনপি আমলে যার উদ্বোধনী ফিতা কেটেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সাংবিধানিক পদ্ধতি বিলোপ করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার কারণে নির্মাণ ও উদ্বোধন এ দুটোই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্যে বেশি জুটেছে, তারপরও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট পাওয়ার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর এ আক্ষেপ কেন?

কারণ তিনি ও তার দল জনগণকে বিভিন্নভাবে তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যে অনেক কথা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি কথা খুবই প্রণিধানযোগ্য। যে যেভাবেই আলোচনা বা সমালোচনা করুক না কেন, কথা দু’টি আমার মনঃপূত হয়েছে, কারণ তিনি বাস্তব ও সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

তিনি বলেছেন, ১. এ দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন পদ্ধতি পচে গেছে; ২. ভোটকেন্দ্রে তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করবেন। রাজনীতি ও নির্বাচন পদ্ধতি পচে যাওয়ার কথাটি গোটা বাংলাদেশের অধিকারবঞ্চিত জনগণের মনের কথা। এ কথাটির সত্যতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলেই এর যথার্থ উত্তর পেয়ে যাবেন এবং একই সাথে এ মর্মে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কতটুকু অবদান রেখেছেন তারও উত্তর পাবেন প্রত্যাশা করি।

অন্য দিকে, ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য সিইসি তলোয়ারকে প্রতিরোধ করতে রাইফেল হাতে নেয়ার কথা বলার সময় তলোয়ার ও রাইফেল উভয়ই যে প্রধানমন্ত্রীর দখলে সে কথা হয়তো তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। এ মর্মে ভারতীয় সিনেমায় পুলিশের একটি সংলাপ মনে পড়ে গেল। পুলিশ বলেছে, ‘আমি মরলে হবে মার্ডার কেইস, তুমি মরলে হবে অ্যানকাউন্টার।’ পুলিশ রাইফেল দিয়ে গুলি করলে হবে বৈধ, বড়জোর একটি বিভাগীয় ইনক্যুয়ারি। অন্যদিকে ভোটার বা জনগণ রাইফেল বা অস্ত্র হাতে নিলেই হবে অস্ত্র আইনের ১৯ক এবং ১৯চ ধারায় মামলা, যার সাজা যাবজ্জীবন ও অজামিনযোগ্য। এ জন্য বিরোধী দলের পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের জোর দাবি উঠেছে, যদিও এ দাবির জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রথম সোচ্চার ছিলেন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তিনি নিজেই এ পদ্ধতিকে মাটিচাপা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অপমৃত্যু ঘটিয়েছেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো টেনশন থাকার কথা নয়। কারণ সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি জায়েদুল আলমের মতো ৬৩ জেলায় ৬৩ জন এসপি পোস্টিং দিতে পারলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৬ জানুয়ারি ২০২২, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে এসপি সাহেব ঠাণ্ডা মাথায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর নেতা-কর্মীদের প্রার্থীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অকাতরে ৩৪ জন গ্রেফতার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের দিন প্রার্থীর ও চিফ এজেন্টের ব্যবহারের জন্য যে ড্রাইভারের লাইসেন্স ও গাড়ির ব্লু বুকের ফটোকপি নির্বাচন কমিশনের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসে জমা দেয়া ছিল সে দু’জন ড্রাইভার (আহসান উল্লাহ ও আবু তাহের) গ্রেফতার এবং গাড়ি আটক করেছিলেন এসপি জায়েদুল আলম। অনুরূপ পারদর্শিতা জাতীয় নির্বাচনে এসপিরা দেখালে নৌকার বিজয় ঠেকাবে কে? এ কারণে এটি জোর গলায় বলা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশে ভোটাররা তাদের কাক্সিক্ষত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না।

সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীই রাষ্ট্রের সর্বাধিকনায়ক। সিনিয়র ডিঙ্গিয়ে আমলাদের প্রমোশন, লোভনীয় পদে পোস্টিং, অবসর গ্রহণের পর চুক্তিভিত্তিক উচ্চপদে নিয়োগ- সব কিছুই প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। ফলে জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীকে রাজি খুশি করাটাই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আমলাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, যা পৃথিবীর অন্য কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই, যা রয়েছে ডিকটেটরশিপ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কষাঘাতে সরাসরি দেশের গণমানুষ জর্জরিত ছাড়াও প্রতিটি সংসদীয় আসনে সরকারদলীয় এমপি ও নেতাদের নেতৃত্বে একটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে যাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে থানা-পুলিশ, টেন্ডার, ব্যবসায়-বাণিজ্য, হাট-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসার নিয়ন্ত্রণসহ সব প্রকার নিয়োগ- যার পেছনে রয়েছে বাণিজ্য আর বাণিজ্য। এ ছাড়াও রয়েছে বাসস্ট্যান্ড, টেক্সিস্ট্যান্ড, টেম্পোস্ট্যান্ড, রিকশাস্ট্যান্ড, হকার প্রভৃতি সব কিছুই এমপি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। বাড়িঘর, মার্কেট নির্মাণ, জমি বিক্রি, সব কিছুতেই এ বাহিনীকে বখরা দিতে হয়। জেলখানা ও পুলিশ রিমান্ডে যেমন- সংবিধান, মানবতা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলি, আইন-কানুন আংশিক কার্যকর, সব কিছুই জেল কর্তৃপক্ষ ও তদন্তকারী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধীন, ঠিক তেমনি সংসদীয় এলাকার সব কিছুরই গডফাদার হলেন এমপি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ বিভিন্ন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কারা দায়িত্বে থাকবে তা-ও একতরফাভাবে এমপি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে পেট মোটা হচ্ছে এমপি বলয়ের লোকজনের। অন্য দিকে, বঞ্চিতদের আর্তনাদ জমা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। এভাবেই এমপি বলয়ে দুর্দান্ত প্রতাপে দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ তৈরি হচ্ছে।

গায়েবি মোকদ্দমার সংস্কৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে প্রধানমন্ত্রীর আমলে। ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা এজাহার মুদাফিদা ও কার্যকর করেছেন, আসামি করা হয়েছে এমপি ও স্থানীয় সরকারি দলের নেতাদের নির্দেশনায়। বিএনপি করে না, কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, পঙ্গু, ভিক্ষুক, মৃত্যুবরণ করেছে অথচ সরকারি দলের নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব রয়েছে বা ছিল তাদেরও এমপির নির্দেশে আসামি করা হয়েছে, রিমান্ডে নিয়েছে, নিম্ন আদালত জামিন দেয়নি, হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন দেয়ার পরও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করেছে, জামিন হওয়ার পর জেলগেটে পরবর্তী গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করে একটি অরাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয়েছে। যে সব আমলার দ্বারা গায়েবি মামলার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে বিধাতার দরবারে তাদের পাওনা তারা অবশ্যই পেয়ে যাবেন, তবে ইতিহাসের মানদণ্ডে প্রধানমন্ত্রীই অভিযুক্ত হয়ে থাকবেন।

মানি লন্ডারিং বাংলাদেশের একটি বিষফোঁড়া। এ বিষফোঁড়ায় অভিযুক্ত হয়েছে ফরিদপুরের প্রভাবশালী পরিবার যার সাথে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়তা আছে। আত্মীয়ের অপকর্মের ফলে সৃষ্ট জনরোষের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। তা ছাড়া এ সরকারের আমলেই ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটেছে বেশি। সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিরাই ব্যাংক লুট ও মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত। সরকারের কিছু নেতা বিশেষ করে সেতুমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী অতিমাত্রায় বিরোধী দলের নেতাদের সম্পর্কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও বিদ্রুপ করে যা জনগণ কষ্ট পায়। সরকারের মন্ত্রী বা নেতাদের বিদ্বেষমূলক কথার রেশ মন্ত্রীদের অ্যাকাউন্টে নয় বরং প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে।

অন্য দিকে, কোনো কোনো এমপি শরিকদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে, কিন্তু পাওনার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করে মিউটেশন করে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এ মর্মে আইন আদালতের আশ্রয় নিতে পারে না। কারণ এমপির নির্দেশে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের ও এসিল্যান্ড থেকে মিউটেশনের সই মুহুরি নকল দেন না। এ কথাগুলো আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, কারণ আমি নিজে ভুক্তভোগী। উপজেলা পর্যায়ে আমলারা পাবলিক সার্ভেন্ট নন, বরং এমপিদের ব্যক্তিগত চাকরে পরিণত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমলাদের মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা আমলা করে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করার জন্য নয়, বরং প্রধানমন্ত্রীর আনুক‚ল্য পেয়ে নিজেদের আকাশচুম্বী ভাগ্য গড়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ দু’জনের পরিবারই সময়ে সময়ে মর্মান্তিক দুঃসময় অতিক্রম করেছে ও করছে। দুই পরিবারের অভিভাবক ও রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনী হাতে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় খুন হয়েছেন। দুঃসময়ে আমলারা এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়নি, বরং তাদের আনুক‚ল্যের কথা অস্বীকার করেছে। তাদের দুঃসময়ে আমলারা তো দূরের কথা স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী ও দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগও এগিয়ে আসেনি। আমলাতন্ত্রের নীতি হলো- সুসময়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ, দুঃসময়ে অস্বীকার। প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু। ইসলাম একটি অসা¤প্রদায়িক ধর্ম। তবে কিছু কিছু উগ্রবাদ যেমন- মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায় যা অত্যন্ত নগণ্য, তেমনি হিন্দু ধর্মেও উগ্রবাদী রয়েছে। বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ যাদের মধ্যে মুসলমান নামধারী নাস্তিক রয়েছে, তারা ইসলাম ধর্মবিরোধী কথাবার্তা বলে যারা সরকারের ছত্রছায়ায় পালিত হচ্ছে বলে জনগণ মনে করে।

বিএনপি আমলে নিয়োগ পাওয়া আপিল বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণকারী একজন বিতর্কিত বিচারপতি এবং মাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া সরকারি ঘরানার একজন আইনজীবী যার বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, দেশের প্রখ্যাত আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নাস্তিকতা এ দেশের মানুষ পছন্দ করে না। এ বিষয়টিও জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে, যা প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্টেই জমা হচ্ছে। তিনি যখন সার্বিক ব্যালেন্সশিট মেলাবেন, তখন তিনি নিশ্চয় বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।

দেশে আইনের শাসন আছে, কিন্তু সুশাসন নেই। সরকারি নেতাদের জন্য আইন প্রয়োগ হয় একভাবে, অন্যদের জন্য হয় ভিন্নভাবে। আইন প্রয়োগে বিচার বিভাগও অভিযুক্ত হয়ে পড়েছে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’-এ মতবাদ আগেও ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। দুঃসময়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা প্রতিবাদ করতে পারে না, মনে মনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনো পন্থা খোলা আছে কি? এ ধরনের নানাবিধ কারণে ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট লৌহকণা জমাটবদ্ধ একটি লৌহপিণ্ডে পরিণত হচ্ছে। এটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হতে পারে। একদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য জাতিসঙ্ঘ ও বিদেশীদের চাপ- অন্য দিকে আমলা ও দলীয় এমপিদের কর্মকাণ্ডে জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভের কারণে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ক্ষমতায় ফিরে আসা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার অবস্থা আঁচ করতে পেরেই আক্ষেপ করে বর্ণিত কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উপলব্ধি তার জন্য কল্যাণকর হওয়ার কথা যদি বিষয়গুলো সময় থাকতে ঠাণ্ডা মাথায় একটু চিন্তা করেন।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী
(অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail : taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement