২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবারো করোনার সংক্রমণ

আবারো করোনার সংক্রমণ - ছবি : সংগৃহীত

আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে মানুষ মারাও যাচ্ছে। তবে এটিকে মানুষ নিছক সর্দিজ্বর বলে মনে করছে। নেহায়েত প্রয়োজন না হলে অনেকে পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে ওষুধের দোকান হতে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। টিকা নেয়া থাকায় অনেকে এবারের করোনা সংক্রমণকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও বেশির ভাগ মানুষ সে নির্দেশনা মানছেন না। ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষের ঘরে ফেরা, ফিরতি যাত্রা, রাস্তাঘাট, শপিংমল, লঞ্চ, বাস ও রেলস্টেশন ও পশুর হাটসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেয়। মাস্ক ছাড়াই সর্বত্র মানুষের অবাধ চলাচল। ভয়টা এখানেই। এই বেপরোয়া মনোভাব জনজীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সাধারণ জনগণ তো বটেই, সরকারিভাবেও এ ব্যাপারে একটা গাছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রচারমাধ্যম ও চিকিৎসকেরা দায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন। সবাই কেন জানি চুপচাপ। অথচ মাত্র ক’দিন আগেই চীনের সাংহাই শহরের ঘটনার কথা আমরা সবাই জানি। সেখানে এখনো তার জের চলছে।

ইউরোপ-আমেরিকাও করোনার নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি। সেখানেও থাবা মেরেছে করোনা। আমাদের পাশের রাষ্ট্র এর ব্যতিক্রম নয়। সেসব দেশের সরকার, স্থাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্যকর্মীরা জনগণকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে তার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। চতুর্থ ডোজের টিকা দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এদিক থেকে আমাদের অগ্রগতি খুব একটা স্বস্তিকর নয়। শিশুদের জন্য মাত্র ৪০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। কতজনকে এটুকু দিয়ে সামলানো যাবে সেটি ভাবার বিষয়। চতুর্থ ডোজ টিকার কোনো ব্যবস্থার কথা জানা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জনসাধারণের সচেতন এবং সাবধান হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। মাস্ক ছাড়া বিয়ে অনুষ্ঠান, জুমার নামাজ, হাটবাজার, শপিংমল, ব্যাংক এবং রেস্টুরেন্টসহ ব্যাপক জনসমাগমের জায়গায় না যাওয়াই উচিত।

এবার করোনা সংক্রমণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন শিশুরা নিরাপদ। তাদের করোনা হয় না। এটি নিছক ভুল ধারণা। কারণ শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা শিশুদের সর্দিজ্বরকে ডেঙ্গু মনে করে অন্যভাবে চিন্তা করছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। মনে রাখা দরকার করোনা নিজেই ঘাতক ব্যাধি। এর সাথে যোগ হয়েছে ডেঙ্গুর উপদ্রব। সুতরাং যেকোনো জ্বর, সর্দি-কাশিকে সহজভাবে নেয়ার কোনোই অবকাশ নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বর, সর্দি ও কাশি কোনোভাবে অবহেলা করা উচিত নয়। আক্রান্তদের অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। না হলে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারটি আবারো চালু করা প্রয়োজন। মাস্ক ছাড়া লিফটে ওঠানামা না করাই ভালো। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করা দরকার। ঘন ঘন জিবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে হাত পরিষ্কার করা উচিত। এ সময় ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার ভালো সুরক্ষা দেয়। আমাদের খাদ্যের মেন্যু তৈরির ক্ষেত্রে এটা খেয়াল রাখা দরকার। প্রতিদিন বাড়ির ছাদে বা ঘরে ৩০ মিনিটের মতো শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। বাইরের খাবার সর্বতোভাবে এ সময় পরিত্যাজ্য। জ্বর, সর্দি, কাশির ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে কোভিড পরীক্ষা করা জরুরি। না হলে নিজের সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশীদের ভেতরে এটি দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মোট কথা, করোনার চতুর্থ ডোজ টিকার জন্য বসে না থেকে সবারই উচিত স্বাস্ব্যবিধি মেনে চলা। একমাত্র এটিই করোনার বিরুদ্ধে প্রাথমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ রিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement