২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিসরে বই পড়া অপরাধ!

- ছবি : সংগৃহীত

মিসরের এনডাওমেন্ট মন্ত্রণালয় আবারো ঘোষণা করেছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের বইপত্র মসজিদে নিতে বাধা দেয়া হবে। এনডাওমেন্ট মন্ত্রী মোখতার গোমা মসজিদের গ্রন্থাগারে রক্ষিত প্রকাশনা পরীক্ষা করবেন এবং ‘চরমপন্থী মতাদর্শ’ বা ‘চরমপন্থী দলের, সোজা কথায় ব্রাদারহুড সম্পর্কিত যেকোনো বই বা ম্যাগাজিন অপসারণ করবেন। তাছাড়া মন্ত্রণালয় বড় বড় গ্রন্থাগার, ইসলামী কেন্দ্র ও পাবলিক পাঠাগারগুলোকে ‘বিশুদ্ধ’ ও ‘পবিত্রকরণেরও’ আহ্বান জানিয়েছে। আন্ডার সেক্রেটারি গাবের তাঈ সরাসরি বলেন, ‘সালাফিস্ট বা মুসলিম ব্রাদারহুডের রচিত যেকোনো বই অপসারণ করা হবে।’

২০১৩ সালে জেনারেল সিসির ক্ষমতা দখলের পর থেকে মসজিদে মুসলিম ব্রাদারহুডের বইয়ের ওপর বিভিন্ন ধাপে নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে থাকে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে, শাসকরা এ দলটিকে নিষিদ্ধ করে, তিন মাস পরে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা হয়, এর গাইডেন্স অফিস এবং শূরা কাউন্সিলের সিনিয়র সদস্যদের গ্রেফতার করে। সামরিক, বিচার বিভাগ, এনজিও, মিডিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কাতারের ব্রাদারহুড সমর্থকদের নানা অজুহাতে ধৃত করেছে। সন্ত্রাসী সংগঠনের অংশ হওয়ার অভিযোগে সদস্যদের সম্পদ হিমায়িত করে। তাদের পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন শুরু হয় এবং চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। সামরিক শাসনের বিরোধিতা করলে, সে যে ধর্ম ও বর্ণের হোক না কেন, তাকে ব্রাদারহুড ‘সন্ত্রাসী দল’-এর সম্পৃক্ততায় পাকড়াও করা হয়। চলতি বছর জুলাইতে ২৪ জন আসামিকে ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্টতায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ব্রাদারহুড সদস্যদের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই করার আইনের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফলে হাজার হাজার পরিবার এখন আরেক দুর্যোগের মুখোমুখি। অথচ অস্ট্রিয়ার একটি আদালত মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হবে না’ মর্মে রায় দিয়েছে! মিসরে তাদের বইয়ের বিরুদ্ধে দমননীতি আরো বেড়েছে। এবার হাতে লেখা স্ক্রিপ্ট পুড়িয়ে ফেলাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বই তো আছেই। নিরাপত্তা বাহিনী পর্যটন শহর হুরঘাদার পাবলিক লাইব্রেরিতে রক্ষিত ব্রাদারহুডের শত শত বই, সাহিত্য ও পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে দিয়েছে। ড. মুরসির এক বছরের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দান করা ৩৬টি বইও পুড়িয়ে দেয়ার তালিকায় রয়েছে।

সরকার জানায়, ধ্বংস হওয়া উপকরণের মধ্যে ‘বোমা তৈরির বই’, ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা ‘হাসান আল-বান্না’র বই ও ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রশংসামূলক’ বইও রয়েছে। আবদেল ফাত্তাহ সিসি বলেছিলেন, তার শাসনামলে ব্রাদারহুডের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে।

যেকোনো স্বৈরশাসক যার প্রকৃত জনসমর্থন নেই, সে শাসক ইমেজ রক্ষার জন্য সেন্সরশিপের পিঠে ভর করে সমালোচনার চারাগাছে সেন্সরশিপের কাঁচি চালিয়ে দেয়।

সিসি ক্ষমতা গ্রহণের পর জনপ্রিয় মুসালসালাতের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ শুরু করেন এবং প্রায় ৫০০টি সংবাদ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেন। আরব বিশ্ব ও মিসরের জনগণের কাছে মুসালসালাত খুবই প্রিয়। সমাজের নানা সমস্যা ও কাহিনী নিয়ে যেসব সিরিজ বহু দশক ধরে তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে মিসরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মিশ্রিত রয়েছে।

মূলত মুসালসালাত আরবি ইউটিউব হাব যেখানে পাঁচ শতাধিক আইকনিক আরবি টেলিভিশন সিরিজ পাওয়া যায়; যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ১৯৬২ সাল থেকে সেরা সিরিজগুলোকে সজ্জিত করা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা ইউটিউবে সাত হাজার ঘণ্টারও বেশি আরবি সিরিজ ব্রাউজ করতে পারে। হাবটি এই শো অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াকে দেশ অনুসারে শ্রেণিবদ্ধও করেছে। ফলে ব্যবহারকারী সহজে মুসালসালাতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সেখানে ইসলামের ঐতিহ্য, সমাজ ও পারিবারিক সৌন্দর্য, ইসলামী সমাজব্যবস্থার মাহাত্ম্য, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, বীরত্ব-জেহাদ এসব বেশি ফোকাস করা হয়েছে বিধায় জান্তার গাত্রদাহ দেখা দিয়েছে।

মুসালসালত ‘কিউরেট’ করার সময় ইউটিউব বেশ কয়েকজন সম্প্রচার অংশীদারের সাথে কাজ করেছে যারা এসব অনুষ্ঠানের মালিক, যেমন কায়রোর মিসরীয় টেলিভিশন, রেডিও ইউনিয়ন ও সিরিয়ার ওয়াতান নেটওয়ার্ক। মুসালসালাত প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত ২৫০টিরও বেশি অনুষ্ঠান সিরিয়ান, যেমন ‘তারাফ আল আরব’, এইটি ১৯৮২ সালে লোককাহিনীর ঐতিহাসিক কমিক সঙ্কলন এবং জনগণ প্রশংসিত প্রথম সিজন ‘বাব আল হারা’।

এক বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী, ইউটিউবের মুসালসালাত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে যে কেউ, যেকোনো জায়গায় বিশ্বব্যাপী ও স্থানীয় বিনোদনের জন্য ‘অ্যাক্সেস’ করতে পারে। এসব শো গত ৫০ বছরে লাখ লাখ লোককে হাসি, কান্না ও আনন্দ দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো মুসালসালাতের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের একটি অংশকে ডিজিটাইজ করা গেছে। ইউটিউবে আরবি চলচ্চিত্রের আরেক চ্যানেল হলো ‘আফলাম।’ মুসালসালাত ও আলফামের ভিউ সংখ্যাও পাঁচ মিলিয়নের বেশি।

গত বছর, ২০২০ সালে মিসর কর্তৃপক্ষ কায়রোর বেলুন থিয়েটারে সায়েদ দারভিশ রচিত নাটক থেকে ‘ইয়া বালাহ জাগলুল’কে নিষিদ্ধ করে, কারণ প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে ‘বালহা’ ডাকনাম দেয়া হয়েছে। মিসরে ‘বালহা’ এমন একজনকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যিনি নিজেকে জ্ঞানী বলে দাবি করেন কিন্তু আসলে তা নয়।

সরকারি মিডিয়াও বসে নেই। চলতি বছরের শুরুতে সরকার পরিচালিত একটি রমজান সিরিজ আল-ইখতার, ‘আমার পছন্দ’ ২০১৩ সালের আগস্টের রাবা হত্যাকাণ্ডের পক্ষে যৌক্তিকতা দেখিয়ে তৈরি করা হয় এরকম হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জনগণের জন্য কল্যাণকর বিষয় হিসেবে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মসজিদে বইয়ের বিষয়ে ইমামদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইমামরা গ্রন্থাগারে আনা যেকোনো শিরোনামের বই রাখার ব্যাপারে অনুমতি দেবেন যে, সেখানে উগ্রপন্থী কোনো মতবাদ নেই। যারা এতে অবহেলা করবেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। যেমন ইমামতি বা চাকরি থেকে বের করে দেয়া। রাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা জেনারেল মিসরীয় বুক অর্গানাইজেশনে এই ‘আদর্শগত’ মেয়াদ স্থির রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক ও প্রকাশনা প্রকল্পের চেয়ারম্যান সোহেইর আলমাসাদফা বলেন, ‘যে বইটি প্রকাশ করছি তা নিশ্চিত করতে হবে যে, এমন কোনো ধারণা নেই, যা জঙ্গিবাদের দিকে পরিচালিত করে।’ সরকার দেশের এক লাখেরও বেশি মসজিদ তত্ত্বাবধান করে। এসব মসজিদে আল-আজহারের স্নাতকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব মসজিদের ইমামরা এনডাওমেন্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলে এবং ভালো অঙ্কের মাসিক বেতন পায়। তাদের খুতবা ও ধর্মীয় প্রচার মনিটর করা হয়। অনেক সময় লিখিত খুতবা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়।

আরব বসন্তের পর যখন চার দিকে মনে করা হয়েছিল যে স্বাধীনতার এক নতুন যুগ ফিরে এসেছে, তখন জর্জ অরওয়েল ও মিলান কুন্ডেরার মতো লেখকরা বইয়ের তাকগুলোতে ফিরে আসার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু আট বছর ধরে এই নতুন স্বাধীনতাগুলো আবার বন্ধ হয়ে গেছে এবং কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলায় পুলিশ কিছু পাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেন্সরশিপ ও দেশে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরে আঘাত করার জন্য মোটা লাঠি নিয়ে ঘুরছে। আক্রমণ আসে সব দিক থেকে। ২০১৬ সালে মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী দারাস সালাম পাড়ায় এবং এর তিনটি শাখার গ্রন্থাগারে অভিযান চালিয়ে তাদের বই বাজেয়াপ্ত করে, দেশদ্রোহীদের তালিকায় নাম ওঠানো হয়।

কায়রোর ব্যস্ত অথচ দরিদ্র দারাস সালাম এলাকার আল-কারামা লাইব্রেরিতে স্কুলের শিশুরা ঘুরে বেড়াত। বস্তি জীবনের দূষিত পরিশ্রম থেকে পালাতে, মূলত হোমওয়ার্ক শেষ করে নিরাপদ জায়গার খোঁজে ওখানে যেত, বলা চলে। চার বছর আগে পাঠাগারটির দরজা বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

গ্রন্থাগারটির প্রতিষ্ঠাতা গামাল ঈদ একজন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী হওয়ায় সরকারের রোষানলে পড়েন। তার পরিণতি এটি। আরো ক্ষতির ভয়ে তিনি বিভিন্ন স্থানে শাখা গ্রন্থাগারগুলোও বন্ধ করে দেন। গ্রন্থাগারগুলো হাজার হাজার শিশুদের সেবা করে। নিরাপত্তাবাহিনী সেগুলোকে আঘাত করল। মানবাধিকারকর্মী হওয়ায় গামাল ঈদ অন্যায়ভাবে কারাবন্দী মিসরীয়দের রক্ষা করতে দিন কাটান। তার সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে, গামালের টুইটারে অনুসারী ১০ লাখ অতিক্রম করেছে। সবই আল সিসির নির্দেশে হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসে সিসি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু সে প্রতিশ্রæতি পূরণ হচ্ছে না; ভর্তুকি হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কায়রোর দার মেরিট পাবলিশিং হাউজে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় অভিযান চালিয়েছে, বইয়ের দোকান এল বালাদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যোগসূত্র থাকার অভিযোগে বইয়ের দোকান চেইন আসলেফ তার ৩৭টি শাখা বন্ধ করে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোনা প্রিন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি সুয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জন মিল্টনের ‘প্যারাডাইস লস্ট’ ছাত্রদের পড়ানোর পর অভিযোগ উঠে যে, তিনি ‘শয়তানকে গৌরবান্বিত’ করেন ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ধ্বংসাত্মক ধারণা ছড়িয়ে’ দিয়েছেন। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়। কার্ল মার্কসের ‘মূল্য ও মুনাফা’র একটি অনুলিপি রাখার দায়ে গামাল আবদেল হাকিম নামে একজন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে দোকানের মালিকের কথিত যোগসূত্র সন্দেহে বাণিজ্যিক বইয়ের চেইন দোকানের ‘আলেফ’ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। আহমেদ নাজি, একজন ‘পেন’ পুরস্কার বিজয়ী ঔপন্যাসিক, তার প্রশংসিত উপন্যাস ‘ইউজিং লাইফ’ ব্যাপক প্রচার পাওয়ার পর তাকে কারাবন্দী করা হয়। কিছু যৌন শব্দ চয়ন ও নৈতিক পতনের ভীতিকে গ্রেফতারের কারণ বলে প্রচার করা হয়। তাকে বছরখানেক জেল খাটতে হল।

এনডাওমেন্ট মন্ত্রণালয় ইসলামী দুনিয়ায় সমাদৃত মুসলিম স্কলারদের বইপুস্তকও নিষিদ্ধ করেছে, বই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্কলারদের মধ্যে আছেন : শেখ মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব, ইমাম ইবনে তাঈমিয়া, শেখ ইবনে বাজ, শেখ ইবনে উসাইমিন, শেখ ইউসুফ আল কারজাভি, শেখ ওয়াজদি আল গুনিম, শেখ মোহাম্মদ আল মাকসুদ, ইয়াসির আল বুরহামি, শেখ আবু ইসহাক আল হুইআইনি, শেখ মোহাম্মদ হুসেইন ইয়াকুব, শেখ মোহাম্মদ হাসান প্রমুখ।

আল-সিসি মুসলিমপ্রধান দেশ মিসরে ইসলামিক পাঠ্যপুস্তকে কুরআনের আয়াত সীমাবদ্ধ করার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের আদেশ দিয়ে আরেক বিতর্কের সৃষ্টি করছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী হেগাজি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সদস্যদের বলেন, ‘এর লক্ষ্য উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং উগ্রপন্থী শিক্ষার্থীদের ধর্ম শেখানো থেকে বিরত রাখা।’ সিসি শিক্ষা ও ধর্মীয় কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে সুন্নি ইসলামিক শিক্ষার সর্বোচ্চ আসন আল-আজহারকে বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম সংস্কার এবং ধর্মীয় বিষয়বস্তু থেকে ‘বই পরিষ্কার’ করতে বলেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা স্কুলগুলোর সংখ্যা ৫০ সহস্রাধিক। এগুলোতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের ওপর জোর দেয়া হয়, আর আল-আজহারের স্কুল এবং ইনস্টিটিউট ৬৫ হাজার; এসব স্কুল ধর্মীয় অধ্যয়নের ওপর চাপ দেয়। জরিপ মতে, দেশব্যাপী প্রায় ২৩ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় যার অর্থ হলো, প্রায় প্রতিটি মিসরীয় বাড়িতে একটি স্কুলছাত্র রয়েছে। সমস্যাটি কত বিরাট ও ব্যাপক এই হিসাব থেকে বোঝা যায়।

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সদস্য ফ্রেডি আলবাইতি বলেছেন, ‘অধর্মীয় পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর উপস্থিতি বিপজ্জনক’, ‘অযোগ্য স্কুলশিক্ষকরা আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবে’। অধর্মীয় পাঠ্যপুস্তকে কুরআন থেকে আয়াত বা নবী আ:দের কথা থাকা উচিত কি না তা নিয়ে যুক্তিতর্কে মিসর বেশ সরগরম। মরহুম রাষ্ট্রপতি মুরসির উপদেষ্টা আহমেদ আবদেল আজিজ বলেছেন, ‘সিসি মিসরীয় সমাজকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে চান, আল-আজহারের ঐতিহ্য মুছে ফেলতে চান, ব্রাদারহুডকে কবর দিতে চান।’ রক্ষণশীলদের মতে, বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা হ্রাস করার আহ্বানকে মিসরীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর ইসলামিক পরিচয়ের বিরুদ্ধে এক আক্রমণ বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সিসি ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার কৌশল নেন। নিরাপত্তা সংস্থা এবং সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী করেছেন, যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনি তার বিশাল নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহার করে ব্রাদারহুডসহ বিরোধী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যদি অর্থনীতির পরিবর্তে দমননীতির দিকে মনোনিবেশ করেন, তা হলে মিসর বিস্ফোরিত হবে।
ইসলামের প্রতি সিসির দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সেন্সরশিপ মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের পেছনে যাওয়ার পাশাপাশি সিসি হাজার হাজার যুবক ও অন্যান্য ভিন্নমতাবলম্বীকে তালাবদ্ধ করেছেন। তার নির্মম অভিযান বিভিন্ন রাজনৈতিক স্ট্রাইপের ৪০ সহস্রাধিককে ফাঁদে ফেলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের একজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিসরের খালেদ ফাহমি আশাবাদী যে, বর্তমান দমনমূলক সময়কাল এরই মধ্যে সমালোচনামূলক প্রতিরোধের স্থান তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ‘পড়ার জনসাধারণ প্রসারিত হয়নি কিন্তু গভীর হয়েছে।’ কিন্তু সাধারণের কাছে পড়ার উপাদান কোথায়?
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement