২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনা মহামারী ও শ্রমিক সমাজ

করোনা মহামারী ও শ্রমিক সমাজ - ফাইল ছবি

২০১৯ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া করোনা মহামারী বাংলাদেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। তবে শ্রমিকসমাজের ওপর এর প্রভাব পড়েছে বেশ মোটা দাগে। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই প্রভাব আরো তীব্রতর হয়েছে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের সর্বসাম্প্রতিক তথ্য মতে, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের বিপুল শ্রমশক্তি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে এই মহামারীর সময়ে দেশে নতুন করে গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশে ১০ লাখ ৮০ হাজার দিনমজুর এই করোনার সময়ে কাজ হারিয়েছে। এরা কাজ করছিল নির্মাণ ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে। করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ এই সংখ্যা আরো বাড়িয়ে তুলবে বলেই মনে হয়। এর আগে গত বছর করোনার প্রভাবে যে ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছিল, তারাও এখন পর্যন্ত কাজে ফিরে আসতে পারেনি। সমীক্ষা রিপোর্টে আরো বলা হয়, মহামারীর সময় শ্রমিকদের মজুরি কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দেশে সার্বিকভাবে শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ৩৭ শতাংশ, ঢাকায় ৪২ শতাংশ আর চট্টগ্রামে ৩৩ শতাংশ।

গত ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত এই সমীক্ষা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০২১ সাল শেষে দেখা যাবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ ও অনানুষ্ঠানিক খাতেই সর্বাধিক সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হবে। সন্দেহ নেই, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের শ্রমিকসমাজ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এক অভিশাপ হয়েই দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত এই যৌথ সমীক্ষায় এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও, ‘ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন দ্য লেবার মার্কেট: পলিসি প্রপোজালস ফর ট্রেড ইউনিয়ন অন এমপ্লয়মেন্ট, জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ফর সাসটেইনেবল রিকভারি’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে অংশগ্রহণমূলক সামাজিক সংলাপের তথা পারটিসিপেটরি সোশ্যাল ডায়ালগের ওপর। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের ৯৬ শতাংশ শ্রমিকই ইউনিয়নভুক্ত নয়।

সমীক্ষায় উঠে আসা ফলাফল সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল ডায়ালগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়। এ সময় অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। অংশীজনদের মধ্যকার এই যোগাযোগশূন্যতা কমিয়ে আনার জন্য ত্রিপক্ষীয় সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘একজন সুখী শ্রমিকই হতে পারে ভালো শ্রমিক’। এ কথা বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কিন্তু যে শ্রমিক প্রতিদিন ৩-৫ মাইল হেঁটে কারখানার কাজে আসে, তার কাছ থেকে আমরা কতটুকু উৎপাদনশীলতা আশা করতে পারি? তা সত্ত্বেও ৬০ শতাংশ কারখানার কোনো ওয়ার্ক অর্ডার নেই। তারা এখনো তাদের আগের পাওনা পায়নি। তা না হলে শ্রমিকদের জন পরিবহনের ব্যবস্থা করা খুব কঠিন কাজ ছিল না।’

সিপিডি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, ‘শ্রমিক হেঁটে এসে কারখানায় কাজ করে। এরা এই লকডাউনের সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজে আসে। তাদের উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।’ তার পরামর্শ, ইউনিয়নগুলোকে শ্রমিকদের কাছে গিয়ে জানতে হবে কারখানার মালিকরা কর্মস্থলে তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিচ্ছে কি না।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এতে তিনি শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি শ্রমিকদের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে ত্রিপক্ষীয় সংলাপের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

দেশে ৮,৫৫১টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বেশির ভাগ শ্রমিকই ইউনিয়নভুক্ত নয়। মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৪.২ শতাংশ শ্রমিক ইউনয়নের সদস্য হিসেবে সক্রিয়। মাত্র কয়েকটি খাতে ট্রেড ইউনিয়নিজম সক্রিয় রয়েছে। পরিবহন খাতের মোট শ্রমশক্তির ৩৫.২ শতাংশ শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট; তৈরী পোশাক শিল্পের ১১.৬ শতাংশ, নির্মাণ খাতের ৬.৯ শতাংশ এবং পাট খাতের ৪.৬ শতাংশ শ্রমিক ইউনিয়নভুক্ত। কোভিডের সময় শুধু এসব খাতেই ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকাণ্ড কিছুটা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের বিভাজিত ট্রেড ইউনিয়নিজম অব্যাহত থাকলে দেশের শ্রমিকদের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না। এমন অভিযোগও পাওয়া যায়, ৫০ শতাংশ তৈরী পোশাক কারখানায় কেনো রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন নেই। মাত্র ১০০টি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকর আছে। ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ফেডারেশনের একটি দাবি হচ্ছে: সরকারকে আইএলও কনভেনশন ’৯৭ ও ’৯৮-এ অনুস্বাক্ষর করতে হবে এবং এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। উল্লেখ্য, এই কনভেনশনে নারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বন্ধের কথা রয়েছে।

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে শ্রমিকরা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার নতুন হুমকির মুখে পড়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় যৌথ উদ্যোগ জরুরি। এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে অন্যান্য দেশের কৌশলগুলোর ওপরও নজর দেয়া দরকার। কোন দেশ কী ধরনের সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে কতটুকু সফল হয়েছে, সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমাদের সহায়তা কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তা ছাড়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জালকের কৌশলের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। একই সাথে, কারখানাগুলোকে টেকসই করে তোলার উদ্যোগও নিতে হবে। কারণ, কারখানা টিকে থাকলে শ্রমিকদেরও টিকে থাকার পথ পরিষ্কার হবে।

এ তো আমাদের দেশে কর্মরত শ্রমশক্তির কথা। কিন্তু এর বিপরীতে রয়েছে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক। এরা বিদেশে নানা প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও দক্ষিণ এশিয়ার একটি বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হওয়ার পেছনে এদের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকদের বেশির ভাগই দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স বাজারে একটি সফল দেশ। ১৯৭০-এর দশক থেকে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কাজ করছে। এরাই আমাদের রেমিট্যান্স অর্জনে প্রধান ভূমিকা রাখে। প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ অভিবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যায়।

চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর সূচনা ঘটে ২০১৯ সালে নভেম্বরে; চীনের উহানে। কোভিড-১৯-এর সূচনার আগে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে আসছিল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় ২,১৮০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে এই অঙ্ক নেমে দাঁড়ায় ১৪০০ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

নিঃসন্দেহে এই রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ কমায়। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যেই নানা ঘটনা রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ শ্লথ করে দেয়। তেমনি একটি ঘটনা চলমান মহামারী। এই মহামারী আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের ওপরও বড় ধরনের নেতিবাচক আর্থসামাজিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তা রূপ নিয়েছে নানামাত্রিক সঙ্কটে। এ সময় অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে থাকা পরিবার নিদারুণ অর্থকষ্টে পড়ে। রেমিট্যান্সের প্রভাবে বাংলাদেশের যেসব জেলায় দারিদ্র্য কমে আসছিল, সেসব জেলায় আবার দারিদ্র্য বাড়তে শুরু করেছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এর ফলে দেশে নতুন করে সৃষ্টি হওয়া দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেশির ভাগই কাজ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পর্যটন, সেবা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণ খাতের শ্রমিক হিসেবে। এসব দেশে করোনা মহামারীর বিরূপ প্রভাবে এসব খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় এরই মধ্যে লে-অফ ঘোষিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এর পরেও ‘সেইজ জার্নালে’ প্রকাশিত এক তথ্য মতে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রবাসী আয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে হঠাৎ করে ৫৪ শতাংশ বেড়ে যায়। ২০২০ সালে অভিবাসী শ্রমিক রফতানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৬৭ সংখ্যা কমে গেলেও এ বছর প্রবাসী আয় বাড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ (বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন; বিএমইটি অনলাইন)। প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার পেছনে তখন ভূমিকা ছিল সরকারের একটি সিদ্ধান্তের: সরকার এ সময় সিদ্ধান্ত নেয়, যারা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে পাঠাবে তাদের প্রণোদনা দেয়া হবে। তা ছাড়া করোনার কারণে অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ চাকরি সম্পর্কে যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তারা এ সময় তাদের জমানো টাকার বেশির ভাগটাই দেশে পাঠিয়ে দেয়। পাশাপাশি বেকার হয়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের সঞ্চয়ের পুরো টাকা নিয়ে ফিরে আসে। তাই প্রবাসী আয়ের এই সাময়িক বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি নয়।

যেহেতু মহামারী এখনো গোটা বিশ্বে চলমান, তাই ধরে নেয়া যায়, ভবিষ্যতে তা প্রবাসী আয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সেটা কত দিন চলবে তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। তাই সরকারের জন্য জরুরি দায়িত্ব হয়ে পড়েছে দেশের ভেতরের ও বাইরে এখনো কর্মরত শ্রমশক্তি ও শ্রমবাজারের ওপর গভীরভাবে নজর রাখা। তাদের বিদেশে কর্মসংস্থানের হার কী করে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে যথাযথ নীতি-পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল নিয়ে এখন থেকে আমাদেরকে মাঠে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর অভিবাসী শ্রমিক একান্ত বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে এসেছে। এদের কর্মসংস্থান আমরা করতে পারিনি। জানা যায়, অনেক দেশ করোনার কারণে বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অপ্রত্যাশিত নয়া চাপ। এমনিতেই গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলা লকডাউন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত সৃষ্টি করে। এর ওপর এরই মধ্যে চলতি বছরের চলমান লকডাউন আমাদের অর্থনীতিতে এসেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে। লকডাউনের ফলে শুধু গত বছরেই আমরা হারিয়েছি ৫০ লাখ থেকে সোয়া কোটি লোকের কর্মসংস্থান। সামনে হারাতে হয় কী পরিমাণ কর্মসংস্থান তা এখনো আমাদের অজানা। দেশ আজ বেকার জনগোষ্ঠী ও দেশে ফেরত আসা কর্মহীন অভিবাসী শ্রমিকের ভারে ন্যুব্জ। চলমান করোনা সংক্রমণের এই দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ শ্রমশক্তি নিয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থির মুখোমুখি হতে পারে।

সরকার করোনা মহামারী মোকাবেলায় দেশের শ্রমিকসমাজের সহায়তার যে নীতি অবস্থান নেবে, তা হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। সেখানে বিবেচনায় আনতে হবে, দেশে কর্মরত শ্রমিক ও দেশে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি। তাদের জন্য প্রয়োজন কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা। এর মাধ্যমে দেশের গোটা শ্রমিকসমাজকে অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট করতে হবে, যাতে এরা নিজেরা পরিবারের অর্থকষ্ট দূর করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারে। বিদেশে কাজ হারিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে দেশে ফিরে এসে এরা কার্যত অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাদের যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কাজের জগতে ফিরিয়ে আনা দরকার। তবে এটিও সত্য, এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা এই মহামারী কালে সম্ভব হবে না। তাই যাদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে না, তাদের জন্য ভাবতে হবে আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা জোগানের ব্যাপারে।

দেশে একটি অতি দক্ষ এনজিও খাত রয়েছে। এরা ক্ষুদ্রঋণসহ সামাজিক উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে নিয়োজিত। এদের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় শ্রমিকদের সুপরিকল্পিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা ও স্থানীয়ভাবে কাজ হারানো শ্রমিকদের বেশির ভাগই কৃষক পরিবারের সন্তান। তাই স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠু কৃষিঋণ বিতরণের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে কৃষিকাজে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নজর রাখতে হবে কোনো অকৃষক যেন এই ঋণ না পায়। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা কামনা করতে পারে। এভাবে শ্রমিকসমাজের পুনর্বাসন করার চরম সময় এখনই।


আরো সংবাদ



premium cement