২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাফন-দাফনে বিড়ম্বনা

কাফন-দাফনে বিড়ম্বনা - সংগৃহীত

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা সীমিত হয়ে পড়ে। অনেক হাসপাতালে আউটডোর বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুন রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে স্বজনরা বিড়ম্বনা ও উপেক্ষার শিকার হলেন। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে পথেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। প্রসববেদনা নিয়ে ভর্তি হতে না পেরে গাইবান্ধায় এক মা ভ্যানগাড়িতে ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী ঢাকার কোনো হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অবশেষে মারা গেছেন খাগড়াছড়িতে। তিনি ছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ তথা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া বা জ্বর থাকলে কথাই নেই। অন্য কোনো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ডাক্তাররা রোগীর কাছে আসছেন না। বহু ডাক্তার চেম্বারও বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বেশ কিছু রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন এবং আইসিইউ-সিসিইউ সুবিধার অভাবে মারা গেছেন এবং এখনো যাচ্ছেন।

ডাক্তারদের অভিযোগ, তাদের পর্যাপ্ত পিপিই, গ্লাভস, এন-৫, এন-৯৯ অথবা সার্জিক্যাল মাস্ক, টেস্ট কিট প্রভৃতি সুরক্ষামূলক সামগ্রী সরবরাহ করা হয়নি। যেহেতু তারা সর্বদায় করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান, ফলে তাদের জীবন অতীব করোনা সন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। রাষ্ট্রকে ঘোষণা দিয়ে তাদের জীবন ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে।

ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবিও সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়। এ কথা সত্য, সরকার এ মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, রক্তের নমুনা সংগ্রহ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রভৃতি ব্যাপারে যেভাবে কড়াকড়ি আরোপ করছেন এবং চিকিৎসকদের জন্য পিপিই, মাস্ক, টেস্ট কিটসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করছেন, প্রথম দিকে সেটা ছিল শিথিল। এসব সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে বেশ বিলম্ব হয়েছে। এমনকি ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) পরিচালক ২১ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেন, ‘সম্পদের স্বল্পতার কারণে’ ডাক্তার ও নার্সদের মাস্ক সরবরাহ করা সম্ভব হবে না; নিজেদের উদ্যোগে তা সংগ্রহ করতে হবে। তা ছাড়া প্রথম দিকে ইতালি থেকে যেসব প্রবাসী দেশে ফিরেছেন তাদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা গেলে কমিউনিটি সংক্রমণের ব্যাপকতা রোধ করা সম্ভব হতো।

যেসব দেশ সতর্কতামূলক পূর্বপ্রস্তুতি নিতে দেরি করেছে, সেসব দেশে করোনা সংক্রমণের হার অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র তার প্রমাণ। আমাদের দেশে ভেন্টিলেশন ও আইসিউ সুবিধা আছে যথাক্রমে- ৫০০ ও এক হাজার ১৬৯টি। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এটা নিতান্ত অপ্রতুল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র এক হাজার ১৬৯। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৪৩২টি (ঢাকায় ৩২২, ঢাকার বাইরে ১১০), আর বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৭৩৭টি (ঢাকা মহানগরীতে ৪৯৪, ঢাকা জেলায় ২৬৭, অন্যান্য জেলায় ২৪৩)। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চার হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের দাবি। তবে এগুলোয় আইসিইউ সুবিধা নেই। এমনকি এখন পর্যন্ত এ সুবিধা প্রস্তুত করা হয়নি।

করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে যদি গ্রামে অথবা বাসায় ফিরে যান, তা হলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা শতভাগ। করোনাভাইরাস মহামারী রূপ পরিগ্রহ করছে। ফলে চিকিৎসা দিয়েও কূলকিনারা করা যাচ্ছে না। সে সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। স্ব^াস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বেনজীর আহমেদ বিবিসিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৬ কোটির মানুষের ১০ শতাংশের মধ্যেও যদি রোগটি ছড়ায়, সেটি হবে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে যদি পয়েন্ট ফাইভ, পয়েন্ট ফোর বা পয়েন্ট ওয়ান পার্সেন্ট মানুষের অবস্থা গুরুতর হয়, তা হলেও আমরা হাসপাতালে আর চিকিৎসা করতে পারব না। এত আইসিইউ, এত ফ্যাসিলিটি আমাদের নেই।’

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এ দেশের জনগণের ঘনত্ব বিবেচনায় যে মন্তব্য করে তা আঁতকে ওঠার মতো। জনগণ সচেতন না হলে এবং রাষ্ট্র পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে করোনায় ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ রিপোর্ট প্রকাশ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করে চিকিৎসাসেবা দিয়েও যেখানে সংক্রমণ রোধ করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের অবস্থা যে কী হবে, তা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।

রাষ্ট্রের পক্ষে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, টেস্ট কিটসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসাসেবা কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা তাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ জেনেও ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এর পেছনে এ দেশে চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা অন্যতম কারণ বলে তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসাসেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘যারা সেবা দেবেন তাদের জন্য থাকবে বীমা প্রণোদনা। অন্যথায় বিদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্স নিয়ে আসা হবে। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা চিকিৎসাসেবা দেবেন না, তারা ডাক্তারি করতে পারবেন কি না, দেখা হবে।’ ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার উন্নতি কতটুকু হলো তা দেখার জন্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

অন্য দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা করোনা উপসর্গ তথা সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের কাফন ও দাফন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বজনরা আতঙ্ক, বিড়ম্বনা ও অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন।

কবরস্থানে দাফন করতে, এমনকি মসজিদের লাশ বহনকারী খাটিয়া দিতেও অস্বীকার করা হচ্ছে। ঢাকার খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের বাইরে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে, এখানে যেন করোনা আক্রান্ত কোনো মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা না হয়। সংবাদপত্রের ভাষ্যমতে, বগুড়ার শিবগঞ্জ ও জামালপুরের বকশীগঞ্জে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের লাশ দাফন নিয়ে একশ্রেণীর লোক বাধার সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা আতঙ্কের কারণে লাশ সৎকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লোকজন ভীত হচ্ছে এবং অনীহা প্রকাশ করছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কোনোক্রমেই কারো দোষ হতে পারে না। যেকোনো বয়সের যেকোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন, এমনকি এতে মারাও যেতে পারেন। জীবিত থাকতে যে মানুষ সম্মানিত, মৃত্যুর পরও তিনি মর্যাদাবান। তাকে ধর্মীয় রীতি ও বিধিমতে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা জীবিত স্বজনদের গুরুদায়িত্ব। মৃতের প্রতি অমানবিক ও নির্দয় আচরণ কারো কাম্য না হলেও এই পরিস্থিতির পেছনে গুজব, অজ্ঞতা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব অনেকাংশে দায়ী বলে অভিজ্ঞমহল মনে করে।

একশ্রেণীর মিডিয়া টকশো করে করোনা আক্রান্ত লাশ পুড়িয়ে ফেলার ওপর জোর দিয়েছে। কোনোক্রমেই ভাইরাসে মারা যাওয়া একজন মুসলিমকে দাহ করা যাবে না। এটা শরিয়াহসিদ্ধ কোনো পদ্ধতি নয়। গত দেড় হাজার বছরে এর কোনো নজির নেই। এমনকি এর কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই। রীতি অনুসারে জানাজা ও দাফন করতে হবে; তবে অধিক জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির লাশ থেকে বাতাসে কি ভাইরাস ছড়ায়? কেউ কাছে গেলে, ছুঁলেই কি তিনি আক্রান্ত হবেন? পাড়া বা মহল্লার গোরস্থানে কবর দিলে সেই কবর থেকে আপনা-আপনি বাতাসে পুরো এলাকায় ভাইরাস ছড়াবে কি? এ জাতীয় ভুল ধারণা ও ভুল প্রচারণা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই নিশ্চিত করেছেন, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস ছড়ানো বা কোনো ক্ষতি করে না। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: মুশতাক হোসেন বলেছেন, লাশ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায়। আমরা একটা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছি- কিভাবে লাশের জানাজা, দাফন ও সৎকার করা যায়। এটি অনুসরণ করলেই যথেষ্ট।

গত ২৪ মার্চ Infection Prevention and Control for the safe management of a dead body in the context of COVID-19 শিরোনামের একটি নিবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত ব্যক্তিদের পুড়িয়ে ফেলা উচিত- এমন গুজব চালু রয়েছে। তবে তা সত্য নয়। যথাসম্ভব দ্রুত লাশে সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যেতে হবে। লাশ পরিবহনে বিশেষ গাড়ির কিংবা সমাধিক্ষেত্রে পাঠানোর সময় লাশের ওপর জীবাণুনাশক ছিটানোর প্রয়োজন নেই। রীতি মেনে লাশ সৎকারের আগে স্বজনরা শেষবারের জন্য প্রিয়জনের মুখ দেখতে পারেন। তবে লাশ স্পর্শ করা বা চুমু খাওয়া যাবে না (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১১ এপ্রিল)।

থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিক্যাল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর Dr. Somsak Akhasilp ব্যাংকক পোস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, হোস্ট (মানব শরীর) মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার দেহের ভেতরে থাকা ভাইরাসেরও মৃত্যু ঘটে। সে আর বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। এ ভাইরাসটি এয়ারবোর্ন (বায়ুবাহিত) নয় যে, বাতাসে উড়ে এদিক-ওদিক যাবে। এটি কেবল সর্দি, কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। মৃত ব্যক্তি যেহেতু হাঁচি বা কাশি দিতে পারে না, ফলে ড্রপলেট আসার সুযোগও থাকে না। আর ড্রপলেট না বেরোলে ভাইরাস ছড়াবে কিভাবে? শরীরের চামড়া ভেদ করে কোনো জীবাণু বাইরে আসে না। আবার লাশটি হাঁচি-কাশিও দেবে না আপনার মুখের ওপর। তা হলে? জীবাণুগুলো একটি লাশের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে মাত্র। মৃত ব্যক্তির ফুসফুসের ভেতরেই সেগুলো আবদ্ধ হয়ে থাকে। শরীরের অন্যান্য জায়গায় যেমন- হাত-পায়ের ভেতরের পেশি তা থাকে না। আরো একটি জিনিস বুঝতে হবে, তা হলো ভাইরাস সবসময় জীবিত প্রাণীর দেহের জীবিত কোষে প্রবেশ করে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। মৃত কোষের ভেতরে সেও মৃত ভাইরাস (সেরিন ফেরদৌস, প্রবাসী সাংবাদিক ও কানাডায় কর্মরত নার্স, দেশ রূপান্তর, ঢাকা, ৭ এপ্রিল, ২০২০)।

যারা লাশটি নাড়াচাড়া করবেন, তাদের অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে প্রয়োজনীয় পিপিই (গ্লাভস, মাস্ক, গগলস/শিল্ড, গাউন) পরে নিতে হবে। মারা যাওয়ার সাথে সাথেই শরীরের ছিদ্রগুলো অথবা কাটা জায়গা (মুখ, নাক, পায়ুপথ, কান, ইনজেকশন পয়েন্ট প্রভৃতি) তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। সব ধরনের বাড়তি জিনিস যেমন- মাস্ক, অক্সিজেন, ক্যাথেটার, আইভি অথবা গয়নাপত্র প্রভৃতি খুলে ফেলতে হবে। এগুলো খোলার পর যথাযথ গার্বেজ বা গয়নাগুলো সাথে সাথে সাবানপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ সময়ে রোগীকে বারবার নাড়াচাড়া না করা ভালো। লাশকে পরিষ্কার কাপড় বা পলিথিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং দাফনের আয়োজন করতে হবে (প্রাগুক্ত)। আশার খবর হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় কলেজ ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং সন্দ্বীপের আজিজিয়া ইসলাম প্রচার সংস্থা, ঢাকার ‘পাথওয়ে’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ঢাকার আল মারকাজুল ইসলামীসহ বেশ কিছু এনজিও ও সেবা সংস্থা করোনায় মারা যাওয়া মানুষদের কাফন-দাফনে এগিয়ে এসেছে। তাদের কাছে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স, পর্যাপ্ত পিপিই ও মাস্ক। উপজেলা বা অঞ্চলভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যদি মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়ে লাশের কাফন-দাফনে এগিয়ে আসে, তা হলে আতঙ্ক ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটতে পারে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ বের করার জন্য বিশে^র বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওষুধ বাজারে আসতে সময় লাগতে পারে। ততদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সতর্কতার সাথে। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে কোয়ারেন্টিন জীবন কাটাতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গণি এমইএস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম

 

 


আরো সংবাদ



premium cement