৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জার্মান লিগে লেভারকুসেন যুগের শুরু

বহু প্রতীক্ষিত বুন্দেসলিগার ট্রফি জয়ের পর এভাবেই মাঠে ঢুকে পড়ে লেভারকুসেনের সমর্থকরা : ইন্টারনেট -

বায়ার্নের ১১ বছরের আধিপত্য খর্ব
১২০ বছরে প্রথম শিরোপা
লিগে ২৯ ম্যাচ অপরাজিত
সব আসর মিলে ৪৩ ম্যাচে কোনো হার নেই

জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। অপেক্ষার অবসান হবে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসের। প্রথম জার্মান লিগ বুন্দেসলিগার শিরোপা জেতা হবে তাদের। এমন ম্যাচে নিজ মাঠে লেভারকুসেন যখন ৮৩ মিনিটে ৪ গোলে এগিয়ে গেল ওয়েডার ব্রেমেনের বিপক্ষে তখন হোম দর্শকদের আর তো সইছিল না। তারা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে মাঠে। সে যাত্রায় এই জার্মান ক্লাবের সমর্থকদের ফের গ্যালারিতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হলেও ৯০ মিনিটের ৫ম গোলের পর আর সম্ভব হয়নি। তারা আর ফুটবলাররা মিলে করতে থাকে প্রথম পরম কাক্সিক্ষত শিরোপা উৎসব। ৫-০ গোলের জয় দিয়ে তারা একই সাথে ছেদ টানলো বায়ার্ন মিউনিখের টানা ১১ বার শিরোপা জয়ের ধারায়। সে সাথে ২৯ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ৫ ম্যাচ হাতে রেখেই হয়ে গেল জার্মান লিগের নতুন রাজা। দলটি একই সাথে সব আসর মিলে টানা ৪৩ ম্যাচে এখনো হারেনি। ২৯ ম্যাচে ৭৯ পয়েন্ট তাদের। জার্মান লিগ ইতিহাসে ২৯ ম্যাচ পর এটাই সর্বোচ্চ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্নের পয়েন্ট ৬৩। এতে জার্মান ফুটবলে হলো নতুন সূর্যোদয়। বায়ার্ন মিউনিখের আধিপত্য ভেঙে নতুন মুকুট উঠলো লেভারকুসেন ক্লাবে।
এই সাফল্যে ক্লাবের ইতিহাসের খাতায় চলে গেলেন কোচ জাভি আলোনসো। এই স্প্যানিশ কোচের অধীনেই যে প্রথম এত বড় ট্রফি জয়ের কৃতিত্ব। ক্লাব কোচ জাভি আলোনসোর সম্মানে শহরের বিমসার্ক স্ট্রিটটি সমর্থকরা সাময়িকভাবে ‘জাভি আলোনসো স্ট্রিট’ নামে আখ্যায়িত করেছে।

পরশু রাতে ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার বে এরেনা যেন রূপান্তরিত হলো লাল-কালো সমুদ্র। সেখানে ঢেউ উঠেছিল শুরু থেকে। ছোট ছোট ঢেউ সুনামিতে রূপ নিলো ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে। সমর্থকরা নেমে গেলেন মাঠেও। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছেন, চেনা হোক কিংবা অচেনা। আর স্পিকারে ভেসে আসা গানের সঙ্গে নেচে যাচ্ছেন। শুধু শিরোপা খরা যে কাটিয়েছে তা নয়, মৌসুমের শুরু থেকে সবচেয়ে লম্বা সময় অজেয় থাকার রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে তারা বায়ার্নকে পেছনে ফেলে।
ক্লাবের মাইলফলকের এই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে ভিক্টর বোনিফেস ২৫ মিনিটে লেভারকুসেনকে এগিয়ে দেন। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে তারা। ৬০ মিনিটে গ্রেনিথ জাকা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। তার পর ফ্লোরিয়ান রিটজের ঝলক। ৬৮ মিনিটে তার কল্যাণে দলের তৃতীয় গোল করেন। ৮৩ মিনিটে স্কোর ৪-০ হয় তার দ্বিতীয় গোলে। ৯০ মিনিটে রিটজ সিনিয়র ক্যারিয়ারে প্রথমবার হ্যাটট্রিক করে দলকে বড় জয় এনে দেন।
বুন্দেলিগায় এ পর্যন্ত ক্লাবটির অর্জন ছিল পাঁচবার রানার্সআপ হওয়া। আছে দুটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব। তা ১৯৯২ সালের আগে। তবে কখনো লিগ শিরোপা জিততে না পারার জন্য তাই দলটির উপাধি জুটেছিল কুখ্যাত ‘লেভারকুসেন’। এবার সেই তকমা থেকেও সরে আসতে সমর্থ হয়েছে। শিরোপা জয়ের আনন্দে পরশু ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগেই উচ্ছ্বসিত সমর্থকরা উদযাপন শুরু করে দেয়। একে একে তারা সাইডলাইনে জড়ো হতে শুরু করে। যদিও ম্যাচ তখনো চলছিল। লেভারকুসেনের খেলোয়াড়রা এক পর্যায়ে তাদের অনুরোধ জানায় গ্যালারিতে ফিরে যেতে। ৯০ মিনিটে পর পুরো স্ট্যান্ডই খালি হয়ে যায়, তখন সবাই ছিল মাঠের ভেতর। আবেগাপ্লুত সমর্থকরা এ সময় খেলোয়াড়দের সাথে তাদের এই বিজয় উৎসব উপভোগ করতে থাকে।

ম্যাচের হ্যাটট্রিকম্যান রিটজ বলেন, ‘এটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমি বলতে পারবো না আমরা কী করেছি। আমার এখন ড্রেসিং রুমে ফিরে গিয়ে শান্ত হয়ে বসতে হবে। ইতোমধ্যেই আমরা সমর্থকদের সাথে পার্টি শুরু করে দিয়েছি।’ শিরোপা জয় নিশ্চিত হবার পর লেভারকুসেনের এখন মূল লক্ষ্য বৃহস্পতিবার ইউরোপা লিগে লন্ডনে ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে ম্যাচটি। ঐ ম্যাচকে সামনে রেখে পরশুর ম্যাচে মূল একাদশে সাতটি পরিবর্তন এনেছিলেন আলোনসো। এ কারণে বদলি বেঞ্চে ছিলেন রিটজ, জেরেমি ফ্রিমপং ও এ্যালেক্স গ্রিমালডো। এদের মধ্যে মৌসুমে এই প্রথম শুরুতে খেলার সুযোগ পাননি গ্রিমালডো। আদিলের পরিবর্তে মাঠে নামেন রিটজ।
একটা সময় তাদের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘দ্বিতীয় স্থানের রাজা’! পাঁচবার দ্বিতীয়স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। জার্মান কাপ ফাইনালে হেরেছে তিনবার! অনেকের মুখে তো এটাও বলতে শোনা গেছে- ‘ক্লাবটা বোধ হয় অভিশপ্ত’। ১২০ বছরের খরা কাটানোর পর তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন কোচ জাবি আলোনসো, ‘এখনো আমাদের সব পাওয়া শেষ হয়ে যায়নি। এখন যা কিছু বাকি আছে সেগুলো জিততে চাই।’ মুহূর্তটা ক্লাবটির জন্য বিশেষ কিছু। ক্লাবটির ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বুন্দেসলিগা জয় মানে আসলেই অসাধারণ কিছু।’ উল্লেখ্য এখনো জার্মান কাপ ও ইউরোপা শিরোপা তাদের সামনে।

 


আরো সংবাদ



premium cement