২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হোমে কতটা সফল ক্লাবগুলো?

ঘরোয়া ফুটবল
-

হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে খেলতে হবে। এই শর্তেই এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) ২০০৭ সালে বাংলাদেশে পেশাদার লিগ চালুর নির্দেশ দেয়। শুরুতে শুধু ঢাকার বাইরের ক্লাবই তাদের হোম ভেনুতে খেলতে। ঢাকার সব ক্লাবই হোম ভেনু করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে। প্রথম দুই বছর এই লিগে রাজধানীর বাইরের ক্লাব ছিল মাত্র তিনটি। চট্টগ্রাম আবাহনী, চট্টগ্রাম মোহামেডান ও খুলনা আবাহনী। তাদের বিপক্ষে এই অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে যেতে কত বাহানা ঢাকার ক্লাবদের। এমন নোংরামিও ছিল, জোটবদ্ধ হয়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল ঢাকার বাইরের ক্লাবদের। এই ক্লাবগুলো থাকলে যে ঢাকার বাইরে খেলতে যেতে হবে। এই যাওয়া আসাতে অনেক টাকা খরচ। তবে এখন পাল্টে গেছে সেই পরিস্থিতি। গত বছর থেকে ঢাকার ক্লাবদের ব্যাপক হারে রাজধানীর বাইরে হোম ভেনু নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। অব্যাহত আছে তা এবারো। অবশ্য তা এএফসি কড়া নির্দেশনার পর। কিন্তু এই হোম ভেনুতে কী আশানুরূপ রেজাল্ট পাচ্ছে ক্লাবগুলো।
করোনাভাইরাসের কারণে বাফুফে সভাপতি লিগের সব খেলা দর্শকশূন্য একটি ভেনুতে আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি ক্লাবগুলোর আপত্তিতে। তারা তাদের হোমের সুবিধা নিতে চায়। অন্যের হোমে সব ম্যাচ খেলতে নারাজ। যে কারণে এক ভেনুর বদলে সাত ভেনুতেই লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্তে বহাল লিগ কমিটি। অবশ্য এখন এই করোনার জন্য লিগই স্থগিত অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
ঢাকার ক্লাবদের মধ্যে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব প্রথমে নরসিংদী স্টেডিয়ামকে ভেনু করে। অবশ্য কয়েক ম্যাচ খেলেই নরসিংদীর হোম ভেনু বাতিল করে বুড়িগঙ্গা পাড়ের দলটি। তা আর্থিক লোকসানের কারণে। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র গোপালগঞ্জের শেখ মনি স্টেডিয়ামকে, বিজেএমসি টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামকে তাদের হোম ভেনু বানায়। ২০১৭তে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দর্শক টানতে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ভেনুতে খেলা আয়োজন করে লিগ কমিটি। তবে তা কোনো দলের হোম ভেনু ছিল না। এক ভেনুতে সব দলই এক রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছে। এতে ক্লাবগুলোর খরচ বেড়ে যাওয়ায় পরের বছর এই সিদ্ধান্ত বদল লিগ কমিটির। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সাথে দূরত্বও ছিল আরেকটি কারণ।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম একসাথে সব দল হোম বানালে মাঠের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। যে কারণে এই পেশাদার লিগ সেই উদ্দেশ্যও নস্যাৎ। এরপরেই হোম ভেনু বিষয়ে পেশাদারি আচরণও শুরু ক্লাবের মধ্যে। সাথে যোগ হয় ভেনু বৃদ্ধিতে এএফসির নির্দেশ। এর পরেই ঢাকার বাইরে ভেনু বেড়েছে। গতবার ছিল রাজধানীর বাইরে পাঁচ ভেনু। এবার তা ছয়ে উন্নীত।
তবে এই হোম ভেনুতে তেমন সাফল্য পায়নি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তাদের হোম ভেনু ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন স্টেডিয়ামে গতবার কমই জয় পেয়েছে ক্লাবটি। বরং অ্যাওয়েতে জয় বেশি তাদের। তথ্য দেন ক্লাবের এমডি ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন। তার মতে, ‘আমরা আসলে ম্যাচের দুই দিন আগে আমাদের হোমে যেতাম। তা অতিথি দলের মতোই। ফুটবলারা মাঠটির সাথে মানিয়ে নিতে পারত না।’ এবার তারা এই মাঠে চার ম্যাচের তিনটিতে অপরাজিত। জিতেছে প্রথম দুই ম্যাচ। তবে আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্ঘ গত বছর তাদের পাওয়া ১০ জয়ের ৯টিই পেয়েছে হোম ভেনু রফিকউদ্দিন স্টেডিয়ামে। জানান, গতবারের কোচ মারুফুল হক। উল্লেখ্য, গতবার আরামবাগ ও সাইফ যৌথভাবে হোম করেছিল এই স্টেডিয়ামকে। এবার আর্থিক সঙ্কটে আরামবাগ তাদের হোম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
গত বছরের মতো এবারো সিলেট স্টেডিয়ামে অতিথি দলকে আতিথ্য দিচ্ছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। গতবার তারা এই হোমে ১১টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল। জানান কোচ সাইফুল বারী টিটু। এবার অবশ্য তিন হোম ম্যাচে দলটির মাত্র একটি জয়। ড্র প্রথম খেলায়। গতবার হোমে সাফল্যের কারণ জানিয়ে টিটু বলেন, আমরা ম্যাচের তিন দিন আগে সেখানে যেতাম। এক সাথে অনেক ম্যাচ সেখানে খেলায় ফুটবলাররা মানিয়ে নিয়েছিল। আর অতিথি দলতো ম্যাচের আগের দিনও পৌঁছাত।
এ বছর বসুন্ধরা কিংস তাদের হোম নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের একটিতে জয় এবং অপরটিতে পরাজিত হয়। তবে গতবার এই ভেনুতে কোনো ম্যাচেই হারেনি। বিগ বাজেটের এই ক্লাব যে স্টাইলে খেলে সে মোতাবেকই মাঠ বানিয়েছে। তাই সাফল্য। জানান কোচ অস্কার ব্রুজন।
গত সিজনে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামকে হোম বানায় নোফেল স্পোর্টিং ক্লাব ও বিজেএমসি। কিন্তু হোমের সুবিধার বদলে উল্টো এই দলই নেমে যায় প্রিমিয়ার থেকে। মুক্তিযোদ্ধা এ বছর হোমে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি।


আরো সংবাদ



premium cement