২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কবিতা

-

আল মুজাহিদী
স্বাধীনতা স্বাধীনতা

স্বাধীনতা স্বাধীনতা
পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে
হও, হও ভ্রাম্যমাণ;
বিষুবীয় জলবায়ু আজ
স্বতপ্লব বহমান।

মানুষের কণ্ঠে কোরাস গাও-
স্বাধীনতা, প্রিয় স্বাধীনতা!
তুমি বিজয়ের গান গাও-

স্বাধীনতা স্বাধীনতা
কণ্ঠে কণ্ঠে তুমি স্বকণ্ঠে করো উচ্চারণ
মানব জাতি সতত মহান
( স-ই মহাবাণী)
প্রাচীকল্পে কম্পমান
প্রাচীকল্পে কম্পমান


নির্মলেন্দু গুণ
ইসক্রা

অস্ত্রের বিকল্প নয় সমালোচনার অস্ত্র,
প্রয়োজন আছে এই দুটোরই।
তত্ত্ব পারে না পথের পাথর সরাতে,
পাথর সরাতে পারে না পাথরই।
তবে কি না তত্ত্ব সে-ও ঢের শক্তি ধরে,
যদি তা পৌঁছুতে পারে মনের ভিতরে।


মুহম্মদ নূরুল হুদা
ক্ষমতার গন্ধ পেলে

কাটা জিব কথা বলে,
পূর্ণ চিব কিছুই বলে না;
নির্বোধ সুবোধ সেজে পথ চলে,
সুচতুর চলেও চলে না;

মূলত নির্বোধ নয়, মূলত চতুর
বাগে পেলে বাগে নিতে করে না কসুর;
যদিও রয়েছে জানা নিজের সীমানা,
অপরের ঠিকানায় নিত্য দেয় হানা;

ঘর থেকে ঘরে যায়, চর থেকে চরে,
ভিটি ছেড়ে মাটি ছেড়ে নগরে-বন্দরে;
বদলপ্রবণ তার মন, দৃষ্টিজুড়ে ময়ূর-আসন
ক্ষমতার গন্ধ পেলে নির্বিকার দখলপ্রবণ।

 

হাসান হাফিজ
জাগরণ প্রত্যয়ের উদযাপন

আগুনে বারুদে ঝাঁঝে বিস্ফোরণে
অনন্য ভাস্বর হয়ে আছো তুমি
মৃত্তিকা ও সবুজে শ্যামলে শস্যে
উদার নিঃসীম নভোনীলে
সর্বত্রই স্বাগত নন্দিত শুদ্ধ
তোমার উত্থান অস্তিত্ব তোমার
সাড়ে সাত কোটি প্রাণ একাত্তরে
ঐকতানে বেজে উঠেছিল
বিজয়ের মহতী ঝঙ্কারে
আত্মশক্তি উদ্বোধনে
অর্জিত হয়েছে শেষে মাটি ও মায়ের মুক্তি
অগণন তাজা প্রাণ বিসর্জনে
সম্ভ্রমের বিনিময়ে
আমরা পেয়েছি শুদ্ধ রক্তেভেজা দেশ
কখনো কিছুতে এই
অর্জনের লয় নেই
অহংয়ের ক্ষয় বলতে কিছু নেই
আছে শুধু জাগরণ, আছে শুধু প্রত্যয়ের উদযাপন...

 

আবদুল হাই শিকদার
সঞ্চয় সংক্রান্ত

সূর্যের দিন গড়াতে গড়াতে গড়াচ্ছে সন্ধ্যায়,
খুব কাছাকাছি ঘুমিয়ে পড়ার কড়া নাড়া শোনা যায়।

তবুও যেটুকু আলোক এখনো দুই চোখ জুড়ে আছে,
যা কিছু রুজি ভ্রমণের পুঁজি রয়েছে বুকের কাছে,
কাতরতা আর আতরতা মাখা প্রেম প্রীতি বিদ্বেষ,
সেই আয়োজন যতো প্রয়োজন দিনে দিনে নিঃশেষ,
তার কিছু আঁকাআঁকি পরিশোধহীন বাকি,
যেভাবে ব্যস্ত ছিলাম মাংস মাছে,
যে আবেগ আমি রেখেছি প্রতিটি গাছে।

তার সবটুকু
হৃদয় ও রুকু
যাত্রা পথের ধূলায় কাঁকরে চড়াই ও উতরাই,
- পথের দু’পাশে এবং বাতাসে আমার কাহিনী রেখে যাই।

আমার কাহিনী হয়তো বা কিছু নয়,
অবহেলা আর অনাদরে হবে ক্ষয়।
তবুও কখনো হঠাৎ একদা ভোরটোর যদি হয়,
তাহলে ধন্য আমার আষাঢ় ফেলে আসা সঞ্চয়।

 

রেজাউদ্দিন স্টালিন
মৌমাছির শোকগাথা

বসন্তে মৌরাণী বিজ্ঞাপন দিয়ে- সংগ্রহ করেন সৈনিক
প্রজাপতিদের পরাগায়ন মুছে দিয়ে
ভোমরার হুলবিষ পার হয়ে
সরিষার শঙ্খ
আমের মঞ্জুরি
লিচুর লোধ্র থেকে
দিন রাত আনতে হবে টন টন মধু
শর্ত-বিশুদ্ধ মধু আনতে ব্যর্থদের মেনে নিতে হবে শির-েদ
শোধনাগারে প্রতিদিন বুক থেকে মণ-মণ মধু নিঙড়ে নিচ্ছে আর
আত্মত্যাগকারী মৌমাছিদের কান্নায় কেঁপে উঠছে পৃথিবী
মধু খেকোরা কি জানে মৌমাছির রক্ত ছাড়া বসন্ত আসে না।

 

মোশাররফ হোসেন খান
জীবন নীরবে ঝরে

মাটির শানুক পড়ে গেলে ভেঙে যায়, শব্দ হয়
কাচের গ্লাস পড়ে গেলে ভেঙে যায়, শব্দ হয়
বজ্রপাতের বিকট শব্দ আছে
মেঘের গর্জন আছে
বাতাসের শব্দ আছে
সমুদ্রের গর্জন আছে
শব্দ আছে অনেক কিছুর।
কিন্তু বেদনার কোনো শব্দ নেই
মৃত্যুর কোনো শব্দ নেই।
সকল কিছুর শব্দ থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।
জীবন সে তো বরফ বটে... শখ করে কে আর পকেটে ভরে?
শিশিরের মতো জীবন নীরবে ঝরে...!

 

মাহফুজুর রহমান আখন্দ
নতুন দিনের চরকা

করতোয়া নদীর মতো মরে যাচ্ছে তোমার হৃদয়-যমুনা
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন-শেকড়ের জাল
তালুবন্দী হয়েছো তুমি পৃথিবীর ছবির মতো

কম কথার মধ্যে বোকামির চেহারা ভাসে
বিদ্বান প্রমাণ করতে বাচাল হয়োনা তুমি
তানপুরার সুরেও থাকে জয়-পরাজয়ের ইঙ্গিত

কলিকালের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ কি বলো
বিষাদের অমাবস্যায় হারালে খুশিই হবে কৃষ্ণগহ্বর
তার চেয়ে নতুন দিনের চরকা ঘুরাই চলো

কই মাছ উজানোর কায়দা দেখে
বিক্ষুব্ধ হৃদয়ে স্বপ্ন জাগাও
তাকধিনাধিন নেচে উঠবে বিজয়ের স্বপ্নতন্ত্রী
ঘরে ফিরবেই সবুজের স্বাধীনতা।


আরো সংবাদ



premium cement