০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাঠুরিয়া ও দৈত্য

-

জলসুখা গ্রামে বাস করে এক গরিব কাঠুরিয়া। তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে ছোট্ট অভাবের সংসার। অভাবের তাড়নায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেনি। ঠিকমতো দু’বেলা ডাল-ভাত খাওয়ানোর সামর্থ্য কাঠুরিয়ার নেই বললেই চলে। কাঠুরিয়া রোজ বনের মরা বৃক্ষ কেটে বাজারে বিক্রি করে, একবেলা ডাল-ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। আরেক বেলা উপোস থেকে কাটিয়ে দেয়। কাঠুরিয়া একদিন একটু দেরি করে বনে যায়। গিয়ে দেখে চতুর্দিকে পাখির অনাবিল গুঞ্জন। বনের প্রত্যেকটা গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। কাঠুরিয়া এদিকে ওদিকে চায়; দেখে কোনো গাছ পাখিবিহীন আছে কি না! কিন্তু না, বনের সব গাছ পাখিদের দখলে। কাঠুরিয়া একটু গাছের নিচে বসে বিষয়টা নিয়ে ভাবছে। ঠিক তখন এক দৈত্য এলো কাঠুরিয়ার সামনে। বিশাল আকারের দেহ! যে কেউ দেখে প্রথমে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কাঠুরিয়া দৈত্যটাকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেল। কাঠুরিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেই। দৈত্য কাছে গিয়ে ডাকে ও কাঠুরিয়া ওঠো; আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে তুমি এভাবে পড়ে আছো কেন? কাঠুরিয়া তো অজ্ঞান, তাই দৈত্যের কোনো কথা শুনতে পায়নি। দৈত্য মন্ত্র পাঠ করে বনের একটা পুকুরের কাছে নিয়ে যায়। তারপর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে দেয়ার পর কাঠুরিয়ার জ্ঞান ফেরে। কাঠুরিয়া আবার চেঁচামেচি করে বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দাও; আমি আর এই বনে কাঠ কাটতে আসব না। দৈত্য বলে, তুমি কেন আর কাঠ কাটতে আসবে না?
কাঠুরিয়া বলে, বনের সব পশুপাখি তোমাকে ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করছে। তাই আমিও ভয় পেয়েছি তোমাকে। আমাকে চেড়ে দাও, আমার কিছু হলে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে দুটো অনাহারে মারা যাবে। দৈত্য বলে, আমি কি এতটাই খারাপ, যার জন্য সবাই আমাকে ভয় পায়। কাঠুরিয়া বলল, তুমি এই বনের সবচেয়ে বড় প্রাণী। তাই দেখতে ভয় লাগে। দৈত্য কাঠুরিয়াকে বলে, আমি কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছি? কাঠুরিয়া বলে, এখনো করনি!
দৈত্য বলে, আমার দেহ দেখে হয়তো ভয় পাচ্ছ। কিন্তু আমি কারো ক্ষতি করি না। আমি পূর্বে করতি জঙ্গলে থাকতাম। সেখানে আমার উস্তাদ ছিল, তার কাছেই থাকতাম। সে বজ্রপাতে মারা যাওয়ার কারণে সেই জঙ্গল ত্যাগ করে এখানে চলে এসেছি কয়েক দিন আগে। কাঠুরিয়া এখন নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করল, দৈত্যটা যে কারো ক্ষতি করে না; তাই দৈত্যের প্রতি কাঠুরিয়ার ভালোবাসা জন্মেছে মনে। দৈত্য বলে, কাঠুরিয়া আমার জীবনে অনেক কষ্ট তুমি শুনলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। কাঠুরিয়া বলে, তোমার আবার কিসের কষ্ট? তোমার অনেক শক্তি আছে আবার যখন যেটা মনে আসে সেটাই করতে পারো। এটা তো বড় একটা গুণ। আমার তো এমন কোনো কিছু নেই। কাঠুরিয়ার সাথে দৈত্যের বেশ ভালো বন্ধত্ব গড়ে ওঠে অল্প সময়ের মধ্যেই। কারণ দৈত্যটা ছিল খুব ভালো ও মিশুক টাইপের। দৈত্য কাঠুরিয়ার সাথে মনের সব কথা শেয়ার করল। কাঠুরিয়াও এক এক করে জীবনের সব গল্প শুনাল। কাঠুরিয়া দৈত্যকে বলে, বন্ধু অনেক কথাবার্তা বললাম। এখন কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে বাড়িতে চাল-ডাল নিয়ে যেতে হবে। দৈত্য বলে, সূর্য তো কিছুক্ষণ পর ডুবে যাবে। এত কম সময়ের মধ্যে কিভাবে এত কাজ করবে? কাঠুরিয়া উত্তর দিলো, বিধাতা সহায় থাকলে আমি ঠিক সময়েই সামলে নেবো। তুমি চিন্তা করো না কেমন!
দৈত্য বলে, আচ্ছা, আমিও আছি তোমার কাছেই, বিপদ হলে ডেকো। কাঠুরিয়া বলে ঠিক আছে বন্ধু। কাঠুরিয়া দু’চার মিনিট বনে হেঁটে কোনো মরা বৃক্ষ পেল না। সন্ধ্যা হতেও বেশি সময় বাকি নেই। কাঠুরিয়া পাগলের মতো খুঁজে চলছে, কিন্তু কোনো মরা বৃক্ষের সন্ধান পেল না। কাঠুরিয়ার কুড়ালটি লোহার ও পুরনো বলে তাজা বৃক্ষ কাটে না কুড়াল ভেঙে যাবে বলে। এটাই সম্বল, এটা ভেঙে গেলে না খেয়ে মরতে হবে Ñ এসব কথা ভেবে বাধ্য হয়ে কাঠুরিয়া দৈত্যকে ডাক দিলো, দৈত্যও হাজির ডাক দেয়ার সাথে সাথে। কাঠুরিয়া বলে, বন্ধু কোনো মরা বৃক্ষ পেলাম না। তাই আজকে কাঠ কাটাও হবে না; চাল-ডালও বাড়িতে নেয়া হবে না। আজ রাতটুকু উপোস থেকে কাটাতে হবে। দৈত্য বলে, আমার জন্য আজ এমন হয়েছে। আমি কি তোমার কোনো সাহায্য করতে পারি? কাঠুরিয়া বলে, তোমার জন্য কিছু হয়নি! তুমি কেন সাহায্য করবে? দৈত্য চমৎকার একটা উত্তর দিলো, বন্ধুর বিপদে তো বন্ধুকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমি তোমার বন্ধু, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। কাঠুরিয়া খুব খুশি হয়েছে দৈত্যের কথা শুনে। দৈত্য বলে, বন্ধু কী সাহায্য লাগবে? কাঠুরিয়া বলল, বন্ধু আজকে কিছু চাল-ডাল দিয়ে দাও, আর একটা লোহার নতুন কুড়াল; যাতে বড় বৃক্ষগুলো কাটতে পারি। দৈত্য জাদু দিয়ে কাঠুরের কথামতো চাল-ডাল ও কুড়াল দিলো। কাঠুরিয়া এসব পেয়ে দৈত্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খুশি মনে বাড়িতে চলে আসে। এভাবেই দৈত্যের সাহায্যে ধীরে ধীরে কাঠুরিয়ার অভাবের দিন দূর হয়ে গেল।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সখীপুরে স্কুল খোলা থাকলেও নেই শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা বিজয়ের সেঞ্চুরিতে ডিপিএলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন আবাহনী বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নয়, মা গলা টিপে হত্যা করেন শিশু মাইশাকে গরমে ঢাকার হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপ, শিশু ওয়ার্ডে আসন সঙ্কট প্রকট এ জে মোহাম্মদ আলীর রূহের মাহফিরাত কামনায় সুপ্রিম কোর্টে দোয়া চৌগাছায় দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল কৃষকের ১ বিঘা জমির পানের বরজ সেলফি তুলতে চাওয়ায় ভক্তের ওপর চটেছেন সাকিব, চেপে ধরলেন ঘাড় টিভি চ্যানেলের অবৈধ সম্প্রচার বন্ধে কার্যক্রম শুরু যেখানে অবৈধ পাথর খনির মিহি গুঁড়াতে ভরে ওঠে ফুসফুস শিবপুরে গৃহবধূর আত্মহত্যা : স্বজনদের দাবি হত্যা, স্বামী আটক

সকল