১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


বাবার মন ছুঁয়ে

-

সাফিনের বয়স দশ। হালকা-পাতলা শরীর। ছিমছাম স্বাস্থ্য। পাঞ্জাবি পরলে তাকে অসম্ভব সুন্দর দেখায়। রাজপুত্র রাজপুত্র একটা ভাব চলে আসে। সাফিন মাদরাসায় পড়ে। মোমেনশাহী দারুল উলুম নিযামিয়ায়। হেফজ বিভাগে। তার সবচেয়ে একটি ভালো গুণ হলো সে পড়ার সময় কারো সাথে গল্প করে না। ক্লাস টাইমে মনোযোগী হয়ে হুজুরের লেকচার শুনে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সাথে সাথে নোট করে নেয়। কেউ যদি তার সাথে গল্প করতে চায় তাহলে সে বিনয়ের সাথে বলে ভাইয়া! আমি হুজুরের লেকচার শুনছি। তুমি ডিস্টার্ব করো না তো!
সাফিন পড়ালেখায় ভালো। শুধু যে ভালো তা না। অত্যন্ত ভালো। খুব মনোযোগী। ভালো ছাত্র বলে মাদরাসা মহলে তার প্রচুর নামডাক। হুজুররা তাকে খুব স্নেহ করে। মাঝে মাঝে ডেকে নিয়ে এটা ওটা কিনে দেয়। আদর করে। একদিন সাফিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক বছরে পুরো কুরআন শরিফ মুখস্থ করে ফেলল। সহপাঠীদের মাথায় হাত। তাদের বিশ্বাস হতে চায় না। দিপু একদিন ক্লাসের ফাঁকে হিংসার চোখে বলল, পুরো কুরআন থেকে প্রশ্ন করলে বলতে পারবি? সাফিন বলল, হ্যাঁ, পারব। তুই ধর! দিপু একটা একটা প্রশ্ন করে সাফিন পটাপট উত্তর দেয়। আটকাতে পারে না। দিপুর চোখ কপালে উঠে গেল। সাফিনের তুখোড় মেধার সামনে দিপু ওই দিন কিছু বলতে পারল না।
দশম রোজার দিন সাফিনকে দেখতে তার বাবা মাদরাসায় এলো। তিনি খুশিতে আটখানা। ছেলে হাফেজ হয়েছে এই জন্য তিনি আনন্দ ধরে রাখতে পারেন না। গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। জলিল সাহেব মাদরাসায় আসার সময় মোমেনশাহী শহর থেকে আধমণ মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। ইফতারের সময় সবার মাঝে বিতরণ করবেন। ছাত্রদের মাঝে কানাঘুষা। হইহুল্লোড়। কে আগে মিষ্টি নিবে। সাফিনের বাবা ইফতারের সময় সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করলেন। এক ফাঁকে দিপু বলল, আংকেল! আমি একটা মিষ্টি ভাঙা পেয়েছি। সাথে সাথে সবছাত্র ফিক করে হেসে দিলো। সাফিনের বাবা খুশি হয়ে তাকে আরেকটি মিষ্টি দিলেন।
রাতে তারাবি নামাজের পূর্বে হুজুর সাহেব সাফিনকে কামরায় ডাকলেন। সে উপস্থিত হলে হুজুর মিষ্টি করে বলল, সাফিন! আজ কিন্তু তোমার তারাবি নামাজ পড়াতে হবে। সাফিন হতবাক! কী বলবে বুঝতে পারছে না। তার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। এতবড় একটা দায়িত্ব! সাফিন ভেবে পায় না। মাথা চুলকায়। হুজুর নরম করে বলল, তুমি চিন্তা করো না। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবো। তুমি নামাজ পড়াবে। ভয়ের কিছু নেই। সাফিন সাহস পেল এবং হুজুরকে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানাল।
সাফিন যখন আলিফ লাম মিম বলে খতম তারাবি শুরু করল তখন মুসল্লিরা অবাক! বাচ্চা একটা ছেলে! কী সুন্দর তেলাওয়াত! যেন মুখ থেকে মুক্তা ঝরছে। দিপু দেখল সামনে কাতারে মাঝ বয়সী একটা লোক নিঃশব্দে কাঁদছে। কান্নায় তার বুক ভেঙে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হেঁচকির মতো করুণ শব্দ করছে। দিপু বুঝতে পারল এ ভদ্রলোক সাফিনের বাবা। জলিল সাহেব। সন্তানের পেছনে তারাবি নামাজ পড়ার আবেগ তাকে ছুঁয়ে গেছে। তিনি অতি আনন্দে কাঁদছেন। দিপু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সেও একদিন তাড়াতাড়ি হাফেজ হয়ে তার বাবাকে কাঁদিয়ে দিবে। কুরআনের মধুর স্বরে বাবাদের মন ছুঁয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement