১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


রজনী পোহালো তবে

-

দুই পরিবারের ইতিবাচক মতামতের মাধ্যমে ইকবাল আর স্বপ্নার বিয়ের কথা ফাইনাল হয়েছে। এখনই বিয়েতে স্বপ্নার মত ছিল না। সে চেয়েছে পড়ালেখা শেষ হলে তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। কিন্তু বাবা-মা পাত্র হিসেবে ইকবালকে উপযুক্ত ভেবেছেন। বিয়েতে প্রথমে স্বপ্নার অমত থাকলেও পরে ইকবালকে দেখার পর স্বপ্না নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন ছেলেকে হাতছাড়া করা বোকামি হবে। ইকবাল দেখতে সুপুরুষ। ভালো বেতনের চাকরি। ন¤্র-ভদ্রতায়ও অনেকের থেকে আলাদা। তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে স্বপ্না ইকবালকে হবুবর হিসেবে মেনে নেয়। এক শুক্রবারে ইকবালের বাবা-মা এসে স্বপ্নাকে আংটি পরিয়ে যায়। দুই পরিবারের আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ইকবাল স্বপ্নার বিয়ে আরো চার মাস পর সম্পন্ন হবে। ততদিনে স্বপ্নার অনার্স কমপ্লিট হবে।
আংটিবদলের পর ইকবাল আর স্বপ্না ফোনকলে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। রোজ রাতে দু’জনের ফোনালাপ জমতে থাকে। ওপার থেকে ইকবালের সহজসরল বাচনভঙ্গি স্বপ্নাকে দিন দিন মুগ্ধ করে। এমন একটি ছেলের সাথে কিছু দিন পর বিয়ে হবে, এটা ভাবতেই স্বপ্না বেশ শিহরিত হয়।
কিন্তু কিছু দিন পর ঘটে এক অঘটন। দেশজুড়ে যখন মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চলছে, সারা দেশ থেকে ইয়াবাসহ সমস্ত মদ-গাঁজা পাচারকারীদেরকে একে একে জেলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের দল, তখনই একদিন রাস্তা থেকে ইকবালকে ইয়াবাপাচারকারী সন্দেহে আটক করে পুলিশ। সোজা নিয়ে যায় হাজতে। কারাবন্দী ইকবাল পুলিশ কর্মকর্তাদের বোঝাতে পারে না সে ইয়াবা কারবারি নয়। নিজের পক্ষে এটা প্রমাণ করতে পারে না সে। তার চার বছরের জেল হয়।

২.
হবুবরের এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে স্বপ্না। তার সাজানো স্বপ্ন যেন ভেঙে গেল। চার বছর জেল খাটতে হবে, এটা স্বপ্না স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও স্বপ্নার বাবা মা মানতে নারাজ। তারা আংটি ফিরিয়ে দিতে চায় ইকবালের পরিবারকে, কিন্তু স্বপ্না বাবা মায়ের এমন সিদ্ধান্তে রুখে দাঁড়িয়ে সাফ জানায়, ‘আমি ইকবালের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। ইকবাল ছাড়া জীবনে আর কাউকে ভাবতে পারব না।’ মেয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ক্ষণিকের আবেগময় পাগলামি ভাবেন স্বপ্নার বাবা-মা। কিন্তু দিন যেতে যেতে তারা বুঝতে পারেন এটা স্বপ্নার পাগলামি নয়, বরং দীর্ঘ অপেক্ষার যাত্রা। তারা দিনরাত বোঝান মেয়েকে। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকা স্বপ্না বাবা-মায়ের কথাকে গুরুত্ব দেয় না। ইকবাল যে তার জীবনের সাথে মিশেই গেছে।
এক বছর কেটে যায়। এই এক বছরে নতুন নতুন অনেক বিয়ের সম্বন্ধ আসে স্বপ্নার জন্য। সবই ভালো ফ্যামেলি থেকে আসা প্রস্তাব, কিন্তু কোনোভাবেই স্বপ্নাকে রাজি করানো যায় না। কৌশলে সে একে একে সব সম্বন্ধ বাতিল করে দেয়। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয় স্বপ্নার ওপর।
এরই মধ্যে অনেকবার স্বপ্না ইকবালকে দেখতে জেলখানায়ও গিয়েছে। কারাবন্দী ইকবালের হাত ধরে সে অঝোরে কেঁদেছে প্রতিবার। ইকবাল ব্যথিত গলায় জানায়, ‘এমনটি হবে কখনো ভাবিনি গো। তুমি আমার জন্য চারটা বছর অপেক্ষা করো। যতই ঝড় আসুক, আমাকে ভেবে মোকাবেলা করো।’ স্বপ্না ইকবালের কথায় আরো শক্তি পায়। জীবনের আলো ঝলমলে সূর্যবেলায় হঠাৎ করে আঁধার নেমে এলো। এই আঁধার রাত পোহানো পর্যন্ত স্বপ্না অপেক্ষা করবে ইকবালের জন্যে।
৩.
আজ বুধবার। ইকবালের কারাবন্দীর চার বছর শেষ হলো। স্বপ্নার অপেক্ষার রাত পোহাল। বড় খুশি খুশি লাগছে স্বপ্নার। আনন্দে কেঁদেও ফেলেছে একবার। কারাগার থেকে আজ চার বছর পর বাড়ি যাবে ইকবাল। ইকবালের বাবা-মা মাইক্রোবাস নিয়ে জেলখানায় এসেছে ছেলেকে বাড়ি নেবে বলে।
স্বপ্না কাঁদছে। বাবা-মা মেয়ের পাশে এসে বসেন। মেয়ের এমন অপেক্ষার চারটি বছর তাদেরকেও কষ্ট দিয়েছে, যদিও তারা চেয়েছেন স্বপ্নাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে ততদিনে সংসারি করাতে। কিন্তু স্বপ্নার কঠিন সিদ্ধান্তের কারণে তারা তা পারেননি। আজ তাদের মেয়ের অপেক্ষার দিন শেষ। ইকবাল মুক্তি নিয়ে বাড়ি যাবে।
স্বপ্নার বাবা সিদ্ধান্ত নেন তিনি এখন জেলখানায় যাবেন। ইকবালের এই মুক্তির শুভদিনে তার পাশে থাকলে ইকবাল খুশিই হবে। স্বপ্না বাবার এই পরিকল্পনায় আবারো আনন্দে কেঁদে ফেলে বলল, ‘এখনই যাও বাবা। ও খুশি হবে।’
দুপুরে নিরস মুখে বাবাকে বাড়ি ফিরতে দেখে স্বপ্না দৌড়ে এলো। আকুল হয়ে জানতে চাইলো ইকবালের কথা। কিন্তু বাবা ভয়ঙ্কর এক খবর শুনিয়ে গলা ফাটিয়ে কেঁদে বললেন, ‘হাজত থেকে মাইক্রোবাসে করে বাড়ি যেতে রোড অ্যাক্সিডেন্টে ইকবালসহ ওর পুরো পরিবার মারা গেছে। আমি পথে ওই ছিন্নভিন্ন লাশগুলো দেখে এসেছি। বাবার কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল স্বপ্নার। একি শোনালো বাবা! ইকবাল মারা গেছে! দীর্ঘ অপেক্ষার প্রতিদান এই তবে! অপেক্ষার রজনী পোহানোর পর এ কোন অশুভ সংবাদ শুনল স্বপ্না! স্বপ্নার মাথা ঘুরছে ক্রমশ। উঠানের পাশে কদমগাছে একটি কাক জোরে কা কা করে ডাকছে। ছোটবেলায় স্বপ্না দাদীর কাছে শুনেছে বাড়িতে কাক ডাকলে নাকি অশুভ সংবাদ আসে! স্বপ্না কদমগাছের সেই কাকটাকে দেখছে আর কাঁদছে।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী দুমকীতে হত্যা মামলার আসামি বাবা-ছেলে গ্রেফতার ১২ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি : যেখানে আপত্তি ইসরাইলের পথশিশুদের জন্য ছায়াতলের স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত মিরসরাইয়ে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী নিহত মালয়েশিয়ায় বিএমইটি কার্ডের নামে ফাঁদ! সতর্ক করল দূতাবাস ভোলায় বার্জের সাথে মাছ ধরার ট্রলারের ধাক্কা, জেলে নিহত সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে দালাল চক্র, ৪৮টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন সব বিভাগেই বৃষ্টি হতে পারে মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে পাইলট আসিম জাওয়াদের লাশ ‘বল এখন সম্পূর্ণভাবে’ ইসরাইলের কোর্টে : যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাস

সকল