২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রাবিতে ৪৮ কোটি ৭ লাখ টাকার অডিট আপত্তি

- ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অডিট আপত্তি দিয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদফতর। যেখানে ৪৮ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার টাকার অনিয়ম দেখানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কেউই এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।

উপ-ভিসি দেখিয়ে দেন কোষাধ্যক্ষকে, আবার কোষাধ্যক্ষ দেখিয়ে দেন জনসংযোগ দফতর প্রশাসককে। তবে কেউই বলতে পারেননি এত টাকার অডিট আপত্তির কারণ।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অডিট আপত্তিগুলো দুই ধরনের। এর একটি সাধারণ, অন্যটি অগ্রিম। রাবির বিরুদ্ধে সাধারণ আপত্তি ১২টি, আর অগ্রিম আপত্তি চারটি। অগ্রিম আপত্তির চারটিতে ২ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার এবং সাধারণ আপত্তির ১২টিতে জড়িত টাকার পরিমাণ ৪৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮৫ হাজার।

শিক্ষা অডিট অধিদফতরের সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, বিভিন্ন সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অডিট আপত্তিগুলো দেয়া হয়েছে, তার বেশিভাগ গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, যা ধরন হিসেবে ‘অগ্রিম’ উল্লেখ করা হয়েছে। এ আপত্তিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করেছে শিক্ষা অডিট অধিদফতর।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। ওই সময় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫৩টি। এর মধ্যে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অর্থ বছরে মোট ১ হাজার ২৭৬ কোটি ২৫ লাখ ২২ হাজার টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিয়মের তথ্য পেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদফতর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম হয়েছে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থ ও হিসাব বিভাগের অডিট শাখা কর্তৃক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বিএসআর-এর ওপর লিখিত মন্তব্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অডিট অধিদফতর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো বিবরণী থেকে এই তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অডিট আপত্তি দেখানো হয়েছে সেটি ২০২০-২০২১ সালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-ভিসি অধ্যাপক ড. মো: সুলতান-উল-ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘অর্থের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে কোষাধ্যক্ষ স্যারকে জিজ্ঞেস করতে হবে। অর্থ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় তিনি দেখভাল করেন। অডিট আপত্তির বিষয়ে তিনি ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’

এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: অবায়দুর রহমান প্রামানিক বলেন, ‘অডিট আপত্তিগুলো কোন কোন খাত থেকে গেছে তা আমি জানি না। বর্তমানে মনে নাই, সব দেখতে হবে। এসব তথ্যের জন্য আমাদের যিনি দায়িত্বে আছেন প্রেস-প্রকাশনার, বিভিন্ন জায়গায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারাই উত্তর দেয়। এ বিষয়ে জনসংযোগ দফতর আপনাদের তথ্য দিবে।’

এ বিষয়ে জনসংযোগ দফতর প্রশাসক বলেন, ‘এটা তো জনসংযোগ দফতরের কোনো পার্ট না। এটা তো আমাদের কোনো দায়িত্ব না। এটা হিসাব শাখার দায়িত্ব।’

অডিট আপত্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুল আরেফিনকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সামনাসামনি দেখা করেন, তখন কথা বলব। আমি এখন ভাইভা বোর্ডে আছি। এখন বলা যাবে না। পরদিন তার সাথে কথা বলতে অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।’


আরো সংবাদ



premium cement