৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনাযুদ্ধে বিরামপুরের তিন সম্মুখযোদ্ধা

করোনাযুদ্ধে তিন সম্মুখযোদ্ধা - ছবি : নয়া দিগন্ত

চলতি বছরের ৩০ মার্চ। সোমবার সকাল ৮টা। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম তপসি। নিত্যদিনের কোলাহলপূর্ণ গ্রামে সেদিন নিস্তব্ধ নীরবতা নেমে আসে। গ্রামে কুমিল্লা ফেরত এক যুবকের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়ায় কেউই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে দু-একজনকে ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিতে দেখা গেলেও সবার চোখেমুখে যেন এক অজানা আতঙ্কের ছাপ।

মৃত যুবকের লাশ পড়ে আছে বাড়ির বাইরের খুলিতে চৌকির উপর। বাড়ির দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মৃতের স্ত্রী চম্পা বেগম, কোলে ছয় মাস বয়সের ছেলে সন্তান। পাশে দাঁড়িয়ে যুবকের মা, দাদীর হাত ধরে কাঁদছে যুবকের রেখে যাওয়া আট বছরের শিশুকন্যা। কেউ কাছে আসছেন না। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে লাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে সন্দেহে মৃতের গ্রামটি কড়া নিরাপত্তায় রেখেছে গ্রামপুলিশের সদস্যরা।

মৃতের বাড়িতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টিম এসেছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। টিমের সবার সামনের একজনের হাতে নমুনা সংগ্রহের ‘সোয়াব স্টিক’। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি ইপিআই) মাসুদ রানা। তিনি স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব ধরণের উপকরণ শরীরে নিয়ে সাহসের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত যুবকের কাছে। নমুনা নিয়ে সংরক্ষণ বক্সে রাখা হলো। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বললেন, ধন্যবাদ মাসুদ সাহেব।

উপজেলায় আরো দু’জন সাহসী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি ল্যাব) ইয়াসিন আলী ও আল ইমরান রাজু। প্রথম প্রথম করোনা সন্দেহভাজন রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহে ওই তিনজন নিযুক্ত থাকায় তাদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে তারা পরিবারের স্বজনদের ছেড়ে কর্মজীবনে দায়িত্ববানের পরিচয় দেন। পরে কমপ্লেক্স চত্বরে নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন হলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রোগীর বাড়িতে ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বুথ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা সংগ্রহে আন্তরিক হয়ে কাজ করেছেন এই তিন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনজনের প্রত্যেকেই এ পর্যন্ত গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আর এ দুঃসাহসিক কাজের জন্য তারা উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল স্টাফের নিকট থেকে অনেক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।

এ বিষয়ে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট মাসুদ রানা বলেন, ‘দাদা ও বাবার মুখে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করার কথা শুনতাম। সে সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারায় নিজের খুব আফসোস হত। কিন্তু দেশের এ ক্রান্তিকালে করোনাযুদ্ধে সম্পৃক্ত করতে পেরে নিজেকে একজন সত্যিকারের যোদ্ধা মনে করছি। আমার মত লক্ষ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী দেশের করোনাযুদ্ধে লড়ছেন এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান হোসেন মেহেদী বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে করোনা যেখানে একটি আতঙ্কের নাম, সেখানে আমাদের এই স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন তা নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর এসবের পেছনে সবচেয়ে বড় উৎসাহ হচ্ছে আমাদের ‘সমন্বিত টিম’। দেশে যতদিন এ করোনা সমস্যা থাকবে ততদিন আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ মানবিক কাজগুলো করে যাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, তারপরও লোডশেডিং বড় চমক ছাড়াই প্রস্তুত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, আটক ১ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের দাবি সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ২ প্রার্থী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন : শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম, কার্যকর বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

সকল