২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্ম র ণ : অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

-

২৮ মার্চ, ২০০৮। আমাদের সবার প্রিয়, শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্যারের অনন্ত যাত্রার দিন। নরসিংদীর শিববাড়িতে জন্ম নেয়া এ মহান পুরুষের জীবন রূপকথার মতো। ছাত্রজীবনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র। শিক্ষকতার ব্রত শুরু হয় নটর ডেম কলেজে প্রভাষক হিসেবে। সত্তরের দশকে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে দায়িত্বশীলতার সাথে নিযুক্ত করেছিলেন নিজেকে। আসাদুজ্জামান লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। চারবার সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন, ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের তিনি শ্রেণিকক্ষে আলোচনায় উৎসাহ দিতেন। পরীক্ষক হিসেবে তার মূল্যায়ন ছিল সৎ।
আসাদুজ্জামান স্যার ছিলেন তার ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী ও অনুসারীদের জন্য অনুপ্রেরণার আধার। উচ্চপদে আসীন থেকে এবং সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হয়েও তিনি মানুষের মেধা ও নিজস্ব অর্জনকে রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন মতের মেধাবী প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রকৃত শিক্ষকের আদর্শ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দান করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করেছেন; জীবননাশের হুমকি উপেক্ষা করেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের কর্তব্যপালনের শুরুতেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগ : উন্নয়ন অধ্যয়ন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, শান্তি ও সংঘর্ষ এবং পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগকে নিয়মিতকরণ করেছেন।
পারিবারিক জীবনে ছিলেন এক সুখী মানুষ। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার ছিল অনন্য পরিবার। খেতে ভালোবাসতেন, তারচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন অন্যদের আপ্যায়ন করতে। ছেলেমেয়েদের আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছেন।
বিনীত হতে শিখিয়েছিলেন নিজের বিনয় দিয়ে। স্যার আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু আমাদের চিন্তা, চেতনা ও ভালোবাসার মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন। তার স্মৃতি ও আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ‘অধ্যাপক আসাদুজ্জামান ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন ও উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে তার নামে বৃত্তি চালু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের ‘অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সামাজিকবিজ্ঞান ভবন’ হিসেবে নামকরণের দাবি তার সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের।
ড. তৈয়েবুর রহমান


আরো সংবাদ



premium cement