২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করে নাকো ফোঁস্ফাস্ মারে নাকো ঢুশঢাশ

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিদেশের প্রভাবশালী পত্রপত্রিকাগুলোতে এবারের নির্বাচনের প্রসঙ্গে অনেক সমালোচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। জাপানি রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে বিগত নির্বাচনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবও নির্বাচন সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এসব কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মর্যাদা কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের ভাবমর্যাদা কতটা উজ্জ্বল বা ম্লান হয়েছে তা সবার কাছে স্পষ্ট।
এ দিকে, সংসদীয় বিরোধী দল নিয়েও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলো। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টকে যদি এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি আসন দিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে নেয়া যেত, তাহলে হয়তো সমস্যা হতো না। জাতীয় পার্টিকে কোনো মন্ত্রিত্ব না দিয়ে এবার সরাসরি ‘বিরোধী দলে’ বসানো হয়েছে। এই পার্টির তো মন্ত্রিত্ব পাওয়া বা বিরোধী দলে যাওয়ার ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছায় কিছু করার এখতিয়ার নেই। জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণের সুতো যথারীতি আওয়ামী লীগের হাতেই রয়ে গেছে। অনেকের মতে, দলটি বর্তমান অবস্থা হয়েছে এরশাদ আমলের ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’-এর মতো। ইতিহাসের যেন পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কী দোর্দণ্ড প্রতাপে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বাইরে রেখে সমমনা আরো কয়েকটি পার্টিকে নিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন। আর আজ তাকেই জাতীয় পার্টির কাণ্ডারি হয়ে আওয়ামী লীগের ‘সহযোগী বিরোধী দল’ ধরনের পরিচিতি নিয়ে সংসদে বসতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় রাজনীতির বাস্তব চিত্রটা কী? আসলে কারা বিরোধী দল? বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যোগ না দিয়ে এবং গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভোট সন্ত্রাসের কারণে হেরে গিয়ে সংসদ থেকে ছিটকে পড়েছে সত্যি; কিন্তু এর ফলে তাদের বিরোধীদলীয় পরিচয়ের ‘সার্টিফিকেট’ বাতিল না হয়ে বরং ‘রিনিউ’ হয়ে গেছে বলেই জনগণ মনে করে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট যে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধীপক্ষ, তা ক্ষমতাসীনেরা তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ক্রমাগত প্রমাণ রেখে চলেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো কেবল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধেই প্রত্যেক দিন কিছু না কিছু বলেন। প্রধানমন্ত্রীও বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের কেউ জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। আবার জাতীয় পার্টিও কখনো সরকারের বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না এবং কোনো আন্দোলন করার শক্তি বা সাহসও রাখে না। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাত্র ৫০টি আসন চেয়েছিল। তাদের শেষ পর্যন্ত ২২টি আসন ‘দেয়া হলো’। জাতীয় পার্টি এর প্রতিবাদ করতে পারেনি। এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা, বিচারাধীন সব মামলার নিষ্পত্তি এ পর্যন্ত হয়নি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন করার শক্তি নেই। এই হচ্ছে বর্তমান জাতীয় সংসদের ‘প্রধান বিরোধী’ দলের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। অপর দিকে, বিএনপিকে সংসদে আসনের মাপকাঠিতে বিরোধী দল হিসেবে যতই অবজ্ঞা বা অস্বীকার করা হোক না কেন, বিরোধীমত দমনের সব কার্যক্রম কিন্তু বিএনপি ও তার জোটের বিরুদ্ধেই হয়েছে এবং হচ্ছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে আটক আজও। অনেক নেতাকর্মী খুন গুম হয়েছেন। অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত জেলে পুরে রাখা হয়েছে। তার ইচ্ছানুযায়ী চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। অপরিসর সাবজেলে কোর্ট বসিয়ে তার বিচার করা হচ্ছে। আইনের ফ্যাঁকড়ায় ফেলে বিগত নির্বাচনে তাকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সাথে অবর্ণনীয় অমানবিক আচরণ করা হলো। এর নজির অতীতের কোনো নির্বাচনে নেই। গত এক দশক বিএনপির ওপর যে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে, তা দেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর ফলে মহাজোট সরকারকে বিগত পাঁচ বছর ‘অসাংবিধানিক’ অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হয়েছে। এবার তাই সংসদের বাইরে ও ভেতরে গণতান্ত্রিক আবহ বজায় রাখার জন্য এক বা একাধিক ‘বিরোধী’ দলের দরকার। সে কারণেই সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের মতো গতবারের ‘ক্ষমতার কাফেলার অন্তরঙ্গ সাথী’দের জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিরোধী দলের আসনে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের বাছাই করা এসব ‘বিরোধীদলী’য় এমপিদের পক্ষে সরকার নির্ধারিত এজেন্ডায় সরকার নির্দেশিত মাত্রা বজায় রেখে সরকারবিরোধী ভূমিকা পালন করা সম্ভব হোকÑ এটাই ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা।
সরকার এমন একটা অনুগত বিরোধী দল আশা করছে, যারা হরতাল আন্দোলন করবেন না। সরকারের সব কর্মসূচিতে চোখবুজে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন। বিষয়টা অনেকটা যেন সুকুমার রায়ের ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ ছড়াটির সেই বালকের নির্বিষ-নিরাপদ সাপের আবদারের মতো। ...ছোটে নাকো হাঁটে না/কাউকে যে কাটে না/ করে নাকো ফোঁস্ফাস্/মারে নাকো ঢুশঢাশ/সেই সাপ জ্যান্ত/গোটা দুই আন তো/ তেড়ে মেরে ডাণ্ডা/করে দেই ঠাণ্ডা; ছড়ার সেই সাপের মতো গোবেচারা বিরোধী দল হয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা আসল বিরোধী দল হিসেবে রাজপথেই থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টিসহ অনেকেই নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাকে বহাল রাখার ফিকিরে কথিত বিরোধী দলে রূপান্তরিত হয়েছে। এমন নজির আর কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে আছে বলে মনে হয় না। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
ডাসারে শিশু খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে নিখোঁজ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের শরবত বিতরণ কর্মসূচি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের শতাধিক স্পটে জামায়াতের খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক বাধা দূর করতে সম্মত ভুটান ও বাংলাদেশ চরমোনাই পীরের অসুস্থ ভাইকে দেখতে গেল জামায়াতের প্রতিনিধি দল ব্যাঙ্কিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা গাজীপুরে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ল নেপাল, সতর্ক সংকেত বাংলাদেশের জন্যও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা : ১ মে ‘এ' ইউনিটের ফল, ১ আগস্টে ক্লাস শুরু শায়েস্তাগঞ্জে নদীতে গোসলে নেমে এক ভাইয়ের মৃত্যু, নিখোঁজ আরেকজন রোববার থেকে চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

সকল