করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ‘কঠোর লকডাউন’। জনশক্তি প্রেরণ খাতকে এই লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন জনশক্তি রফতানিকারক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা।
লকডাউনে কোনোভাবেই যেন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ না করা হয় এবং এই সেক্টরকে জরুরি সেবা খাত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়, এই দাবি জনশক্তি ব্যবসায়ীদের। এ জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে অনুরোধও জানিয়েছেন কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। লকডাউনের মধ্যেও যাতেকরে বিদেশগামি কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্টসহ প্রয়োজনীয় জায়গায় যাতায়াত করতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম, টিপু সুলতান ও মহাসচিব আরিফুর রহমান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জনশক্তি রফতানি খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি লকডাউনে এ খাতকে আওতামুক্ত করার দাবি জানান।
চিঠিতে তারা বলেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে জনশক্তি প্রেরণ খাত তথা রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ শত শত কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিতে পতিত হয়েছে। ২২ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী জনশক্তি প্রেরণ খাতকে জরুরি সেবা খাত ঘোষণা করে বিদেশগামী রেমিট্যান্সযোদ্ধা ও রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহকে লকডাউন আওতামুক্ত রাখা খুবই জরুরি।
চিঠিতে পাঁচটি বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো-
ইতোমধ্যে হাজার হাজার কর্মীর টিকেট ও কোয়ারেন্টাইন বাবদ হোটেল বুকিং অফেরতযোগ্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকার অধিক প্রদান করা হয়েছে।
গার্মেন্টস তথা আরএমজি সেক্টরকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, আমরা মনে করি গার্মেন্টসের চাইতেও জনশক্তি প্রেরণ খাত দেশ ও জাতির স্বার্থে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
লকডাউনে জনশক্তি প্রেরণ খাত বন্ধ থাকলে লক্ষাধিক ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীর বিদেশ যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং ছুটিতে আসা হাজার হাজার ভিসা, ইকামা, ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে কর্মীদের সংশ্লিষ্ট দেশে গমন অনিশ্চিত হওয়াসহ কর্মী গ্রহণকারী দেশ আর নতুন ডিমান্ড ইস্যু করবে না। ভবিষ্যতে এই খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশ করোনার মধ্যেও যত দিন কর্মী নিতে চাইবে তত দিন পর্যন্ত দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সচল রেখে কর্মী প্রেরণ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
রেমিট্যান্সযোদ্ধা তথা জনশক্তি প্রেরণ খাতকে বাঁচাতে জরুরি সেবা খাতের আওতাভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরি।
এদিকে, রিক্রুটিং এজেন্সি ওয়েলফেয়ার অর্গানিজশন অফ বাংলাদেশ (রাওব) সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মী তাদের ভিসা, এয়ার টিকিট, ইন্স্যুরেন্স, কোয়ারেন্টাইনের জন্য অফেরতযোগ্য হোটেল বুকিং নিশ্চিত করে শুধুমাত্র ফ্লাইটের দিনক্ষণের জন্য অপেক্ষায় আছেন। অধিকন্তু হাজার হাজার কর্মীর অনেকের ভিসা স্ট্যাম্পিং, অনেকের আবার বহির্গমণ ছাড়পত্রও (স্মার্ট কার্ড) সম্পন্ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ ও কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে কোনোভাবেই যেন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ না করা হয় এবং এই সেক্টরকে জরুরি সেবা খাত হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা দরকার। বৃহত্তর স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদের এবং তাদের সেবা প্রদানের জন্য সীমিত পরিসরে হলেও বিএমইটি ও রিক্রুটিং এজেন্সীকে লোকডাউনের আওতাবহির্ভুত রাখার জন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন বায়রা’র সাবেক এই অর্থসচিব।
অন্যদিকে, জনশক্তি প্রেরণ খাতকে জরুরি সেবা খাতভুক্ত করে লকডাউনে এই খাতের সকল কার্যক্রম আওতামুক্ত করতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে শনিবার চিঠি দিয়েছে বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণকারীদের সংগঠন ফিমেল ওয়ার্কার রিক্রুটিং এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফোরাব)। সংগঠনের সভাপতি আব্দুল আলীম ও মহাসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন করোনাকালে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ না করার দাবি জানান।
তারা বলেন, বিমানের টিকিট অনলাইনে কাটা যাচ্ছে, তাই বিদেশগামী কর্মী যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্ট থেকেই টিকিট সংগ্রহ করে বিমানে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই বলেই চলে। আপনার অনুমোদন (প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী) সাপেক্ষে বিদেশগামী কর্মী তার সুবিধাজনক স্থানের বিএমইটির ডেমো অফিস থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট করার সুযোগ পেলে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সার্বিক ঝুঁকির মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
আব্দুল আলীম বলেন, জনশক্তি রফতানি খাতের অর্জিত রেমিট্যান্স সম্পূর্ণটাই নেট রেমিট্যান্স হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুতরাং দেশের সার্বিক স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদের এবং তাদের সেবাপ্রদানের জন্য সীমিত পরিসরে বিএমইটি ও রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহে লকডাউনের আওতামুক্ত করার জন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের সহযোগিতা কামনা করেন।