সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও নির্যাতন বন্ধের দাবি বিএফইউজে-ডিইউজের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ মে ২০২৪, ১৭:৫৯
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিয়ে কর্মহীন সাংবাদিকদের কাজের নিশ্চয়তা বিধান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাই বন্ধ, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের দাবি এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) মহান মে দিবস পালন করছে।
বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের উপস্থাপনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: দিদারুল আলম দিদার, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রফিক লিটন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য মোদাব্বের হোসেন, নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আবু হানিফ, আবুল হোসেন খান মোহন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য মো: আবদুল্লাহ মজুমদার, নির্বাহী সদস্য কাজী ফখরুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক দফতর সম্পাদক ডি এম আমীরুল ইসলাম অমর, বাবুল তালুকদার, এম এ মোনায়েম, সাখাওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘শ্রমিকের রক্ত, শ্রম ও ঘামে গড়া আধুনিক সভ্যতা। কিন্তু আজ এই শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সাংবাদিকরা আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতীত। কথায় কথায় আজ সাংবাদিক নির্যাতন ঘটছে। কোনো প্রতিকার নেই। উল্টা রাষ্ট্র তাদের (নির্যাতনকারীদের) পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কোনো বিচার নেই। শুধু তাই নয়, সরকার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে একের পর এক কালাকানুন তৈরি করছে। বর্তমানে দেশে নয়টি আইন রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। আরো তিনটি আইন চূড়ান্ত খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের বিষয়টি ধরলে এমন আইনের সংখ্যা হবে ১৩টি। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া বারবার দেখতে চাওয়া সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কাউকে দেখতে দেয়া হয়নি।’
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আজ দেশে গণতন্ত্র নেই,মানুষের ভোটাধিকার নেই। মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, ন্যায়বিচার নেই, ভাতের ব্যবস্থা নেই। বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র জগতে ওয়েজবোর্ডের কোনো বালাই নেই। বেশিভাগ পত্রিকায় নবম ওয়েজবোর্ডতো দূরে থাক সপ্তম, অষ্টম ওয়েজবোর্ডও কার্যকর হয়নি। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, দিনকাল বন্ধ করা হয়েছে।’
তিনি নয়া দিগন্ত সম্পাদককে হুমকিদাতাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘অন্যথায় সাংবাদিকরা মাঠে নামতে বাধ্য হবে।’
ব্যাংক বিটের সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও দাবি জানান তিনি।
প্রধান বক্তা কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘মে দিবস হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর শ্রমজীবী সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করার দিন। শ্রেণী-বৈষম্যের বেঁড়াজালে যখন তাদের জীবন বন্দী ছিল তখন মে দিবসের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খুলে যায় তাদের শৃঙ্খল। এ ফলে আস্তে আস্তে লোপ পেতে লাগলো সমাজের শ্রেণী-বৈষম্য। পুঁজিবাদের দুর্বল দিকগুলোকে পুঁজি করা অবৈধ অর্থলোভীদের আগ্রাসী দংশন থেকে রেহাই পেল কোটি কোটি শ্রমিক। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত একটি সমাজ গোটা বিশ্বকে উপহার দিলো এই মে দিবস। মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকের যে উঁচু-নিচু সম্পর্ক ছিল মোর্দা কথায় যদি বলি মুনিব আর দাসের যে সম্পর্ক ছিল তা সমতলে আসলো শুধুমাত্র মে দিবসের স্বীকৃতির ফলেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যাই অধিক। কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষেরা এখনো তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বন্ধ হয়নি শ্রমিক শোষণ। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, তারা সবচেয়ে বেশি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের এখনো আট ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হয়। সে অনুযায়ী তাদের মজুরি ও বেতন-ভাতা নেই। মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও বাংলাদেশে শ্রমিকেরা বেতন-বৈষম্যের শিকার। দুই-একটি খাত ছাড়া শ্রমিকদের কর্মপরিবেশও নাজুক। বিশেষ করে জাহাজভাঙা শিল্প, পরিবহন শিল্প,ইমারত নির্মাণশিল্পে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। আবার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বাড়তি সময় কাজ করিয়ে নিলেও ন্যায্য মজুরি দেয়া হয় না। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প হলো তৈরি পোশাকশিল্প। যা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। এ দেশের অর্থনীতির বিরাট একটা অংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে। অথচ এ পোষাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেয়া হয় না। এ শিল্পখাতে শ্রমিকদের ৮০ ভাগই নারী হলেও এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হয়। পোশাকশ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের মজুরি, বেতন-ভাতা পায় না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি তিনটি। কৃষি,গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স। এই তিনটিই পরিচালিত হচ্ছে শ্রমিকদের দিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান শ্রমিকদের। অথচ আজ সেই শ্রমিকরা আজ শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত।’
বিএফইউজে মহাসচিব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, সকল শ্রমিকের জন্য বীমা চালু, কর্মক্ষেত্র কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা নিশ্চিত করা, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক ও শ্রমিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের নামে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, সকল গণমাধ্যমে নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের রক্তের বিনিময়ে মহান মে দিবস পালিত হচ্ছে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। সেদিন তারা আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টার দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তাদের দাবি তারা আদায় করছিল। কিন্তু বাংলাদেশে শ্রমিকদের বেলায় তা পালন করা হচ্ছে না। দেশে রাষ্ট্রীয় ও প্রাকৃতিক দু’ধরনের বিপর্যয় বিদ্যমান। কোনো জনপথের শাসক জালেম হলে, তখন এরকম বিপর্যয় নেমে আসে। আমাদেরকে মে দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আমরা শিগগিরই বসে একটি আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবো।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি