২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাহাড়ের চূড়ায় আজান : অতঃপর গ্রেফতার!

-

ইসলাম শান্তিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা। সাম্য ও মৈত্রীর অনন্য নজির স্থাপনকারী কালজয়ী আদর্শ। মুক্তির শাশ্বত গ্যারান্টি যে আদর্শে মুগ্ধ হয়ে আজও অমুসলিমরা স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে এ আদর্শের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ। শক্তি প্রয়োগ নয়, উদার ও উন্নত চারিত্রিক মাধুর্যই সবাইকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা: দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই (২. সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৬)। হজরত সাফওয়ান বিন সুলাইম (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: জেনে রাখো, যে মুসলমান কোনো চুক্তিবদ্ধ (অর্থাৎ অমুসলিম) নাগরিকের ওপর জুলুম করবে অথবা তার অধিকার হরণ করবে অথবা তার ওপর তার সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি বোঝা চাপাবে কিংবা তার কোনো জিনিস বলপূর্বক ছিনিয়ে নেবে, সেই মুসলমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগে আমি আল্লাহর আদালতে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষে দাঁড়াবো (আবু দাউদ)।

মহাত্মা গান্ধীর মন্তব্য : ইসলাম নিজের সোনালি যুগে একগুঁয়েমি ও বৈষম্যবাদ থেকে পবিত্র ছিল। ইসলাম সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, তখন প্রাচ্যে এক নক্ষত্রের উদয় হয় যার আলোকে অন্ধকার পৃথিবী আলোকিত হয়ে ওঠে। ইসলাম কোনো মিথ্যা ধর্ম নয়। হিন্দু ভাইদের তা অধ্যয়ন করা দরকার। তা হলে তারাও আমার মতো ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। (অন্যদের চোখে আমাদের প্রিয় নবী; মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী পৃষ্ঠা: ৬৯)।

চন্দ্রনাথ পাহাড়। চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ একটি স্থান, যা সীতাকুণ্ড পাহাড় নামেও পরিচিত কেননা তা ওই এলাকায় অবস্থিত।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, চন্দ্রনাথ পাহাড় বা সীতাকুণ্ড পাহাড় হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন পূর্বাঞ্চলীয় অংশ। এই পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে। চট্টগ্রাম অংশে ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে ইকো পার্ক। যে পার্কে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকেরা ছুটে যায় সেই সৌন্দর্য অবলোকন করতে।

জানা যায় যে, ২৭ আগস্ট ২০২১ একটি ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান কিছু ট্যুরিস্ট নিয়ে সেখানে বেড়াতে যায়। তাদের সাথে ছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসার দুইজন ছাত্র। গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন একজন ট্যুরিস্ট। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত অবস্থায় আজান দেন এবং এর ছবি ধারণ করেন। পরবর্তীতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আর অন্যজন তা শেয়ার করেন। স্ট্যাটাসটি ছিল এরকম : ‘চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আজান দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। ইনশাআল্লাহ অতি শিগগিরই সেখানে ইসলামের পতাকা উড়বে।’

অভিযোগ, স্ট্যাটাসটি বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতির নজরে আসে এবং তিনি এ ঘটনায় থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন যার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ আগস্ট রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর থেকে মাদরাসার শিক্ষার্থী দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিবেকবান মানুষের উদ্দেশে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা নৈতিক দায়িত্ব মনে করেছি।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এটা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় একটি তীর্থস্থান। বহুকাল থেকে তাদের কাছে ‘শক্তিপীঠ’ হিসেবে তা স্বীকৃত। খেয়াল করুন- এক. মাদরাসা ছাত্রের স্ট্যাটাসে মন্দিরের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য কিংবা কটূক্তি করা হয়নি। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ের একটি অংশজুড়ে আছে মন্দিরের অবস্থান। পুরো এলাকায় তা বিস্তৃত নয়। আজ নতুন নয়; দীর্ঘকাল থেকে মুসলিম যারাই ঘুরতে যান, সালাতের সময় তারা আজান দেন এবং সালাত আদায় করে থাকেন। কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি এতে। কোনো বিদ্বেষ ছড়ায়নি। দুই. আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ গোটা দুনিয়ায় সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ হিসেবেই পরিচিত। এখানে সব ধর্মের অনুসারীরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কাজ পরিচালনা করছেন। তাই প্রশ্ন জাগে, এ বিষয়ে উল্লিখিত পদক্ষেপের কি কোনো বিকল্প ছিল না? তিন. বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ এর ১ এর ক ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। সুতরাং দ্বীনি অনুভূতি থেকে হয়তো ভাইটি এমন কাজ করেছেন। তার স্ট্যাটাসের মধ্যে কোনো আক্রোশ কিংবা প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। যা হোক, কারাবন্দী মাদরাসা শিক্ষার্থীদ্বয়ের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই।

প্রিয় দেশে সবার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকুক। আমরা একে অপরকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না। মিলেমিশে সুন্দর একটি বসুন্ধরা গড়তে চাই। আমাদের প্রত্যাশা- মুসলিম ভাই-বোনেরা অমুসলিম কাউকে কষ্ট দেবেন না। আশা করি, তারাও যে কোনো নেতিবাচক ভূমিকা থেকে দূরে থাকবেন।

লেখক : সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন


আরো সংবাদ



premium cement