ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও পর্যালোচনা
- মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ
- ০১ মার্চ ২০২০, ২০:২৬
পয়লা ফেব্রুয়ারি হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সাধারণত নির্বাচন শেষ হলে সব দল বা প্রার্থী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিসাব করে থাকেন। কেউ নিজের ভোট সংখ্যা বা সমর্থন নিয়ে আশাবাদী হন। কেউ বা ভুলগুলো খুঁজে বের করেন পরে ভালো করার জন্য। কারো অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে, সেটি কতখানি পূরণ হলো তার হিসাব করেন। হিসাব করা হয় রাজনৈতিকভাবে কে কতটুকু কাজে লাগাতে পারলেন নির্বাচনকে।
নির্বাচনে রাজধানীর দুই সিটিতেই বিজয়ী শাসকদলীয় প্রার্থী। তাই হিসাব অনুযায়ী ‘শতভাগ সফলতা’ আওয়ামী লীগের। অন্য দিকে, নির্বাচনে হেরে প্রার্থীরা মনোকষ্ট পেলেও দল হিসেবে বিএনপির খুব বেশি হারানোর কিছু নেই। কারণ, অনেক দিন থেকে রাজনীতির মাঠে ‘ফর্মে নেই’ তারা। তাই হয়তো চেষ্টা করেছে এ নির্বাচন থেকেও ভালো কিছু খুঁজে বের করতে। নিজেরাই নিজেদের হিসাব বের করে সান্ত্বনা লাভের চেষ্টা করবে।
সিটি নির্বাচনের আলোচনার একটি বড় জায়গা দখল করে থাকবে ইভিএম। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিসহ অনেক দল বিরোধিতা করে আসছিল ইভিএম পদ্ধতির। এর পেছনে সবার শঙ্কা কাজ করেছিল এর ব্যবহার নিয়ে। ভোট কারচুপি এবং আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার যে অভিযোগগুলো প্রতিনিয়ত তারা করে আসছিলেন; ভয় ছিল হয়তো ইভিএমের মধ্য দিয়ে তা সুকৌশলে করার চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীন দল। এর সুবিধা ভোগ করবে আওয়ামী লীগ এমনটাই ভাবনা ছিল তাদের। তাইতো এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনেক দাবি জানিয়ে আসছেন বিরোধীদলীয় নেতারা।
অন্য দিকে, সরকারি দলের ইচ্ছার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল এবং নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণেরও জোর দেয়া এরই অংশ। বিভিন্ন সময় পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হলেও ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রথম সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হলো। এখন ইভিএম ব্যবহারের ফল নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া বা অন্য কেউ ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ করার পাশাপাশি এ যন্ত্রের দক্ষতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলেনি স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ রাজনীতিতে বহুল পরিচিত ব্যক্তিদেরও। তাই সারা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এ মেশিন কতটা সুবিধাজনক, সামনে আসে ওই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন এবং এর পক্ষে কথা বলা মানুষদের জন্য এ প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেয়া বেশ কঠিন। তবু ইভিএম ব্যবহারের সফলতার হারে নির্বাচন কমিশনের দিকে পাল্লা ঝুঁকে আছে বলে অনেকে মনে করেন। ইভিএমে ভোট হওয়ায় নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতির সঠিক হার উঠে এসেছে। ফলে কমেছে ভোটের হার। যেটাকে নাগরিকরা ভোট দিতে যাচ্ছেন না বলে প্রমাণের সপক্ষে ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলো। একই সাথে আগের নির্বাচনের ভোটের হারের সাথে তুলনা করে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার একটা সুযোগও পেয়েছেন তারা। বিগত নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে এবারের ভোটের হারকে পেশ করছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হচ্ছে। তাইতো ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে দেখা যাচ্ছে সে দলের নেতাদের। সেই ব্যাখ্যায় অংশ নিতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকেও। আগের কয়েক বছরের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারি দলের বক্তব্য এবারের ভোটার উপস্থিতির হারকে গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
বিএনপি হারলেও নির্বাচন উপলক্ষে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মাঠে সরব করতে পারা একটা সফলতা হিসেবে দেখবে। এই সময়ে নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পেরেছেন। রাজধানীতে তাদের সরব থাকতে পারাও কম কথা নয়। এটা আগামী আন্দোলনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে দলটির।
অন্য দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করলেও নিজেদের প্রাপ্ত গণসমর্থন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ‘গণফ্রন্ট’ মনোনীত প্রার্থী মাছ প্রতীক নিয়ে ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। লাল পতাকার প্রতি মানুষের এ সমর্থন ইতিবাচকভাবে দেখছে দলটি। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটিতে এবারের নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আগের নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীর চেয়ে ৭ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। এটাও বাম রাজনীতির জন্য ‘শুভ সঙ্কেত’ মনে করছেন তারা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ইমেইল : munjurulnahid@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা