৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলা : ফের যুদ্ধের শঙ্কা

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার দৃশ্য : ইন্টারনেট -


ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি হত্যার একদিন পরেই পুনরায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বিমানবাহিনী। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি ওই এলাকায় প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এর জেরে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গাজার স্থানীয় সংবাদদাতা আলজাজিরাকে জানায়, শুক্রবার সকালে আল মাগাজি রিফিউজি ক্যাম্পের মধ্যবর্তী স্থানে কমপক্ষে ১৩ বার বিমান হামলা করা হয়। গাজা শহরের দক্ষিণে আল-জাইতুন আশপাশের এলাকাসহ উত্তর গাজার বেইত হানুনের পূর্বে একটি খোলা জায়গাতে এই বিমান হামলা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, গাজা উপত্যকার উদ্দেশে প্রথমে ইসরাইলি ড্রোন বিমান থেকে দুইটি মিসাইল নিক্ষেপ করার পরেই ফাইটার বিমান দ্বারা হামলা চালানো হয়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, শরণার্থী শিবিরটিতে বসে সন্ত্রাসবাদীরা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের ধরতেই অভিযান চালায় ইসরাইল। তবে এর সাথে কিছু ঐতিহাসিক বিষয়ও জড়িত। গত বছর পর্যন্ত সেখানে ইসরাইলের অভিযান বাড়ছিল এবং নতুন প্রজন্মের সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সাথে প্রায়ই তাদের সংঘর্ষ হচ্ছিল। অনেকেই ২০০২ সালের এপ্রিলের পরিস্থিতির সাথে তুলনা করে এটিকে দ্বিতীয় ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করছিলেন।
ওই সময় ইসরাইল একটি পূর্ণ সামরিক অভিযান চালায়, যা জেনিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ওই যুদ্ধে অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি ও ২৩ ইসরাইলি সৈন্য মারা যান। এর জেরে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলে অনেকবার আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। জেনিন শিবিরের বড় অংশই তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে। গত বসন্তে ব্রেক দ্য ওয়েভ নামে অপারেশন শুরু করে ইসরাইল।


এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে কথিত আইএস সমর্থকরা। বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীও মারা যান, যাদের মধ্যে রাদ হাজেমও ছিলেন। হাজেম তেলআবিবের একটি বারে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ফলে জেনিন আবার আলোচনায় আসে এবং ইসরাইলের তল্লাশি, গ্রেফতার ও অভিযান বেড়ে যায়।
তবে পুরো পশ্চিম তীরে মৃত্যুর ঘটনা আরো বেশি। গত বছর সেখানে অন্তত দেড় শ’ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের অনেকেই কেবল সামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছিলেন। কেউ কেউ হয়তো নিরীহ পথচারীই ছিলেন। জাতিসঙ্ঘ ও কিছু মানবাধিকার সংস্থা বরবরই ইসরাইলকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। সেখানকার শহরগুলোতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসনক্ষমতাও সীমিত হয়ে এসেছে। তারা এরই মধ্যে জেনিন ও নাবলুসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফিলিস্তিন সরকার নব্বইয়ের অসলো শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আব্বাসের দল ফাতাহ পার্টির প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে হামাস। এ অবস্থায় ফিলিস্তিন সরকার ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করছে। যার অর্থ হলো, তারাই কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছে। যদিও প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, জেনিনে হামলার কারণে নিরাপত্তা সমন্বয় তারা বন্ধ করে দেবেন।


মূলত জেনিন ও নাবলুসের নতুন প্রজন্মের যোদ্ধারা মাহমুদ আব্বাসের সরকারকে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা সশস্ত্র হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। তারা নিজেদের ‘জেনিন ব্যাটালিয়ন’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আর নাবলুসে তাদের পরিচিতি ‘লায়নস ডেন’ হিসেবে।
এসব যোদ্ধা জর্দান থেকে চোরাচালান হয়ে আসা, না হয় ইসরাইলি ঘাঁটি থেকে চুরি বা বিক্রি হওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে। ইসরাইলি সেনাদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক সাংবাদিক বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা। এসব লোক লড়াই করতে চায়। তারা প্রাণ দিতে আগ্রহী। ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যদের ওপর হামলা প্রতিরোধ করছে। ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের দাবি, জিহাদীদের টেরর স্কোয়াড ইসরাইলে হামলা করতে চাইছে। এর মধ্যেই জেনিনে রক্তক্ষয়ী হামলায় পরিস্থিতি আরো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই সোমবার ইসরাইল গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।


আরো সংবাদ



premium cement