২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩ কাশ্মিরিকে ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যার অভিযোগ

সন্ত্রাসের সাথে দূরতম সম্পর্ক ছিল না নিহতদের; ২ জেলায় চালু হচ্ছে ৪জি
-

সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত তিন কাশ্মিরি তরুণের ঘটনা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অতীতের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়। নিখোঁজ ওই তিন কাশ্মিরির পরিবার অভিযোগ করেছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সাজানো অভিযানে তারা নিহত হয়।
পরিবারটি জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই দক্ষিণ সোফিয়ান জেলায় অভিযানের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া ছবি দেখে তারা নিহত স্বজনদের শনাক্ত করে। নিহত এক তরুণের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ সংবাদ সংস্থা এপিকে জানান, উগ্রবাদের সাথে নিহতদের কোনো দূরতম সম্পর্কও ছিল না। তিনি জানান, তার ছেলে সর্বশেষ ১৭ জুলাই তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছিল এবং পরের দিন থেকে তিন কাজিনের (চাচাতো ভাই) মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউসুফ নিহতদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তাদের কল রেকর্ডগুলো যাচাই-বাছাই ও তাদের অতীত সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার আবেদন জানান। অথচ ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে বলেছিল, নিহতরা পাকিস্তানি সন্ত্রাসী। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে শতাধিক কাশ্মিরি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
নাসিব খাতানা জানান, তার তিন চাচাতো ভাইÑ আবরার খাতানা (১৮), ইমতিয়াজ আহমদ (২১) ও আবরার আহমদ (২৫) ১৬ জুলাই কাশ্মির উপত্যকায় কাজের সন্ধানে দক্ষিণ জেলা রাজৌরির নিজ বাড়ি ছেড়েছিলেন, কিন্তু একদিন পরই পরিবারের সাথে তাদের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। খাতানা বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই এবং তাদের লাশ আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই। পরিবারটি ডিএনএ পরীক্ষারও দাবি জানিয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ২০১৯ সালের আগস্টে এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার পর থেকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বেশির ভাগ অঞ্চলই কড়া লকডাউনের আওতায় রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়ার পর এই অঞ্চলের হাজার হাজার রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং নেতাকর্মীদের কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়। যাদের মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং ভারত সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করে এমন সব পদক্ষেপ রুখে দিতে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত রোববার ওই পরিবার নিহতরা বিদ্রোহী নয়, অভিবাসী শ্রমিক ছিল উল্লেখ করে একটি নিখোঁজ প্রতিবেদন দাখিলের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী পরদিন সোমবার বলেছে যে, তারা সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে।
কাশ্মিরে স্থানীয়ভাবে ভুয়া এনকাউন্টার হিসাবে খ্যাত বিচারবহির্ভূত হত্যার স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এ মৃত্যুর বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। ২০১০ সালে তিন শ্রমিককে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন সেনা কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাসব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভে শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।
জম্মু ও কাশ্মিরের দুই জেলায় আলাদাভাবে আগামী ১৫ অগাস্টের পর পরীক্ষামূলকভাবে ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর অনুমতি দেয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বলা হয়েছে, বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেইসাথে দেশটির শীর্ষ আদালতকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সীমান্ত এলাকা বা নিয়ন্ত্রণ রেখাসংলগ্ন কোনো অঞ্চলে এই ইন্টারনেট পরিষেবা এখনই চালু করা হবে না।
দেশটির সরকারের তরফ থেকে আরো বলা হয়েছে, যেসব অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তীব্রতা কম, সেগুলোতেই ৪জি পরিষেবা ফের চালুর অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আগামী দুই মাস পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল জানান, আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে জম্মু ও কাশ্মিরের কিছু কিছু এলাকায় হাই স্পিড ইন্টারনেট চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement