০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নেতানিয়াহু

‘ইরানের হামলার জবাব কিভাবে দেবে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে’

- ছবি - ইন্টারনেট

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরনকে বলেছেন যে ইরানের হামলার জবাব কিভাবে দেয়া হবে ইসরাইল 'নিজেই তার সেই সিদ্ধান্ত' নেবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের সরকার 'আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে'।

ইসরাইলে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর থেকেই নেতানিয়াহু বার বার পাল্টা জবাব দেয়ার কথা বলে আসছেন।

ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনতে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে ইসরাইল সফরে যাওয়া লর্ড ক্যামেরন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে ইসরাইলের জবাব হতে হবে ‘স্মার্ট’ এবং সীমিত।

নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের পর জেরুসালেমে সাংবাদিকদের ক্যামেরন বলেন, ইরানের দুঃখজনক হামলার পর তিনি ‘সংহতি প্রকাশের জন্য’ ইসরাইলে এসেছেন।

তিনি বলছিলেন, ‘আমরা আশা করি ইসরাইল যেটাই করুক তা হবে সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী এবং যতটা সম্ভব স্মার্ট।’

‘কেউই উত্তেজনা দেখতে চায় না এবং এটাই ইসরাইলে সবার সাথে আলোচনায় আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি।’

বৈঠকের পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই। আমরা নিজেরাই আমাদের সিদ্ধান্ত নেবো এবং ইসরাইল রাষ্ট্র নিজের সুরক্ষায় যা দরকার তার সবই করবে।’

নেতানিয়াহুর মন্তব্য এখন পশ্চিমাদের মধ্যে এ বিশ্বাসই আরো জোরদার করবে যে ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এবং সংযমের জন্য পশ্চিমাদের ঘন ঘন পরামর্শ সম্পর্কেও তাদের একটি বার্তা দিচ্ছে ইসরাইল।

ওই অঞ্চলে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল ইসরাইল।

অন্যদিকে, পশ্চিমা নেতারাও এটা ভেবে স্বস্তি পেতে পারেন যে ইরানের হামলার পর পাওয়া কূটনৈতিক সমর্থনকে ইসরাইলি নেতারা কাজে লাগাতে চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার অঙ্গীকার করেছে।

আর একটি প্রতিশোধমূলক জবাব দিয়ে ওই অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে সেই সমর্থন হয়ত নেতানিয়াহু হারাতে চাইবেন না- তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

লর্ড ক্যামেরন পশ্চিমা কয়েকজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন যারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা ঠেকানোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরাইল সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরাইলের সরকার বার বারই ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে আসছে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবকও আলোচনার জন্য বুধবার জেরুসালেমে এসেছেন।

নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের আগে লর্ড ক্যামেরন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজগ এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাৎজের সাথে আলোচনায় মিলিত হন।

এর আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দখলিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফার সাথে সাক্ষাত করেন।

এদিকে, জি-সেভেন মন্ত্রীরা ইতালিতে সমবেত হচ্ছেন যেখানে লর্ড ক্যামেরন ইরানের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চেষ্টা চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ‘অতিমাত্রায় ক্ষতিকর কার্যকলাপের পেছনে’ থাকার জন্য ইরানকে দায়ী করেছিলেন এবং ওই অঞ্চলে ইরানে প্রভাবে রাশ টেনে ধরার জন্য অন্য দেশগুলোর প্রতি দরকারি পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

আর ইসরাইল চাচ্ছে তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করুক।

গত শনিবার ইরান ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শ’র বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর থেকে ইসরাইলের সরকার ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে আসছে।

তবে ইসরাইল জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং জর্ডানের সহায়তায় ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সব ভূপাতিত করেছে।

ইরান গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় তাদের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর হামলার জবাবে ইসরাইলে এ হামলা চালিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেন এবং সতর্ক করেন যে অতিমাত্রায় উত্তেজনা ওই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতাকেই কেবল গভীর করবে।

‘এখন শান্তির দিকে যাওয়ার সময় এসেছে,’ তিনি বলেন।

লর্ড ক্যামেরন তার সফরে সুনাকের আহ্বানই পুনর্ব্যক্ত করেন এবং গাজায় আরো মানবিক সহায়তার সুযোগ দিতে ইসরাইলের নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক পথে ধরেই এগুবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে ক্যামেরন ইসরাইলকে বিশেষ কোন চাপ দেবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।

সেজন্যই তিনি হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের বিষয়ে এবং ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলবেন।

এখন জেরুসালেমে তার উপস্থিতি ইসরাইলের প্রতি দেশটির সমর্থন ও সংহতির প্রকাশ।

তবে একই সাথে এটা আঞ্চলিক উত্তেজনার বিষয়ে ইসরাইলি নেতাদের সতর্ক করারও একটি বার্তা- যে কোনো ধরণের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিশ্ব ও তাদের নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই যেতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল