০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পুলিশসহ আরো পাঁচ শ্রমিক আহত

মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে ২ ভাইকে হত্যা

-

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে বাঁশ, লাঠি, পেরেক দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে আপন দুই ভাইকে হত্যা এবং অপর পাঁচজনকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। খবর পেয়ে হতাহতদের উদ্ধার করতে মধুখালী উপজেলার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও জিম্মি করে রাখা হয়। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব প্রায় ৫ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। দুর্বৃত্তরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আসাদুল (১৫)। আহতদের ২ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও ৩ জনকে মধুখালী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে জেলার একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সেখানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জানা গেছে, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ওয়াশ রুমের নির্মাণ কাজ করছিল ওই শ্রমিকেরা। সন্ধ্যায় একটি নসিমন থেকে রড নামানোর সময় তাদের ওপর হামলা করা হয়। পঞ্চপল্লী গ্রামের তপতি মন্ডল নামে এক গৃহবধূ বলেন, তিনি স্কুলঘরের পাশে কালীমন্দির সন্ধ্যাবাতি দিয়ে গোবরের ঘোসি পরিষ্কার করতে এসে চিৎকার চেচামেচি শুনতে পান। এসে দেখেন মন্দিরের কালী মূর্তিটি একদম পুড়ে গেছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তবে মন্দিরে কিভাবে আগুন লেগেছে তিনি তা দেখেননি বলে জানান।

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে হতাহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরের মধ্যে পিঠমোড়া করে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে জড়ো হওয়া লোকজন রাখে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে নির্মাণ শ্রমিকদের বেদমভাবে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে হতাহত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার অতিরিক্ত র‍্যাব ও পুলিশের বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, এখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিল। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি স্বয়ং খবরাখবর রাখছেন।
এদিকে বিকেলে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কেনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদি হয়ে হত্যা মামলা ছাড়াও পুলিশের কাজে বাধাদান ও তাদের আহত করার ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। এদিকে বিকেলে নিহত দুই শ্রমিকের জানাযা শেষে তাদের দাফন করা হয়েছে। সেখানে পরিবারের স্বজনদের কান্নায় এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

নিহতদের জানাজায় গ্রামবাসীর ঢল: গতকাল শুক্রবার বাদ আসর মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। জানাজায় জেলা প্রশাসক মো: কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমসহ ইউএনও, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নিহতের বাড়িতে পরিদর্শনে যান ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারফ হোসেন সরদার। এর আগে তিনি ঘটনাস্থল মধুখালী উপজেলার ডোমাইন গ্রাম পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক মো: কামরম্প আহসান তালুকদার নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে আপনাদের ন্যায়বিচার দেয়া হবে।

আমরা মন্দিরে আগুন দেইনি বললেন শ্রমিকরা : পঞ্চপল্লীতে কালীমন্দিরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে স্কুলের উন্নয়ন কাজে নিযুক্ত নির্মাণ শ্রমিকদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, নিছক সন্দেহের বশে তাদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিকরা। নান্নু মণ্ডল বলেন, মন্দিরে কীভাবে আগুন লেগেছে, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। এই শ্রমিক বলেন, 'মন্দিরে আগুন লাগার পরে আমাদের দোষারোপ করে মারধর শুরু করে এলাকার হিন্দুরা। আমরা মন্দিরে আগুন দিইনি, আমরা কেন আগুন দিতে যাব?'
এ দিকে, বিকেলে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদি হয়ে হত্যা মামলা ছাড়াও পুলিশের কাজে বাধাদান ও তাদের আহত করার ঘটনায় পৃথক
মামলা দায়ের করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement