২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যু ছুঁয়েছে দুই শ’র ঘর

-

ডেঙ্গুতে ভুগে মৃত্যুর রেকর্ড গতকাল দুই শ’র ঘর ছুঁয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন মারা গেছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর বড় রকমের প্রাদুর্ভাবেও এত মানুষের মৃত্যু হয়নি। অন্য দিকে নভেম্বরের ১২ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর এখনো বহু মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকায় শীত না পড়লেও দেশের অন্যান্য স্থানে শীত শুরু হয়ে গেছে; তবুও ডেঙ্গু সংক্রমণ চলছে সমান তালে। সরকারি হিসাবেই গতকাল শনিবার সারা দেশে ৯১৮ জন ডেঙ্গুতে শনাক্ত হয়েছে। সামনে আরো কয়েকদিন ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে যাবে।

২০১৯ সালে চিকিৎসাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘লেনসেট’ বলেছিল, বাংলাদেশে নজিরবিহীনভাবে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সে বছরও এত বেশি মৃত্যু হয়নি। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৬৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণের ৭৫ শতাংশই এশিয়ায় ঘটে থাকে। এর মধ্যে দ্য ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি না হলেও আরো কয়েকদিন এডিস মশার উপদ্রব থাকবে ঢাকা শহরে। এর মধ্যে চলতি মাসে আরেকটি নিম্নচাপ সংঘটিত হলে এবং কিছু বৃষ্টি হলে আবার এডিস মশার উৎপাদন হবে এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে ডেঙ্গুর কিছু প্রাদুর্ভাব ছিল; কিন্তু ২০০০ সালেই প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু মহামারী আকারে শুরু হয় বাংলাদেশে।

২০১৯ সাল থেকেও চলতি বছর ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও শনাক্তের দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত সারা দেশে ৮১ হাজার ৮৩২ জন শনাক্ত হয়েছিল। অন্য দিকে চলতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৯২ জন। এরপর অক্টোবরে ২১ হাজার ৯৩২ জন এবং নভেম্বরের ১২ দিনে ৯ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।

লেনসেট ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য সেরুটাইপ-৩কে দায়ী করলেও চলতি বছর ডেঙ্গুর সবগুলো সেরুটাইপ সংক্রমণের জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। চলতি বছর আরো কিছুদিন ডেঙ্গু সংক্রমণ চলতে পারে বলে জানিয়েছেন ড. মঞ্জুর। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, নভেম্বরেই দেশের উচ্চ তাপমাত্রা নিচে নেমে যাবে। এটা ঠিক যে, ঠাণ্ডায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমে যায়। চলতি মাসে আরো কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব খুব বেশি বাড়বে না। ঠাণ্ডায় এডিস মশার বংশবিস্তার কমে যায়। কারণ নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই শীত পড়ে যাবে। তবে বিভিন্ন স্থানে এডিস মশা যে ডিম পেড়ে রাখবে তা আগামী বছর বৃষ্টি এলে তা থেকে বংশবিস্তার করবে। আমরা সবাই জানি এডিস মশার ডিম প্রকৃতিতে এক বছর পর্যন্ত থেকে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে যে ৯১৮ জনের শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩০ জনই ঢাকা মহানগরীর ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। উল্লেখ্য, ডেঙ্গু আক্রান্ত যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদেরই স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকায় রাখা হয়। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বার থেকে ডাক্তার দেখিয়ে যারা ডেঙ্গু চিকিৎসা করাচ্ছেন তাদের নাম তালিকায় নেই। তাই এটা বলা যায় যে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই তালিকাটি আংশিক।
ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হলে কয়েকদিন থাকতে হয় সুস্থ হতে। ফলে রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ২৭৫ জন ভর্তি ছিল। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ৬৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।

রাজশাহীতে ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরো দু’জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মারা যাওয়া রোগীরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সামেনা (৩৯) ও পাবনার সুজানগর উপজেলার কামরুল (২৮)।

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১২ জন রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে চারজন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৩ জন। গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মোট পাঁচজনের মৃত্যু হলো।


আরো সংবাদ



premium cement