২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শেষ হলো দুর্গাপূজা

বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন : নয়া দিগন্ত -

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা ৯৭ মিনিটে যথারীতি দশমীবিহিত পূজা শুরু হয়, যা বিকেল পর্যন্ত অশ্রুসিক্ত দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। সনাতন ধর্মমতে, প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গা এ মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরেছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, সকালে দশমীবিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন শুরু হয় সারা দেশে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১২টায়। কেন্দ্রীয় এই মন্দিরে বিহিত পূজা এবং পূজায় অংশ নেন হাজারো পুণ্যার্থী। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানাতে ভক্তরা মত্ত হন সিঁদুর খেলায়। এরপর বিজয়ার শোভাযাত্রা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জন শেষে শান্তিজল নিয়ে ঘরে ফেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
এ ছাড়া অন্যান্য মণ্ডপে সকাল থেকে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, ভোগ-আরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। পাঁচ দিন ধরে সারা দেশে দুর্গোৎসব উপলক্ষে মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রতিমা বিসর্জন করতে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে গতকাল বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হয়। এতে যোগ দিতে ঢাকার ২৪১টি মণ্ডপ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ঢাকঢোল পিটিয়ে পলাশী মোড়ে জড়ো হয়।
এখান থেকে সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা যায় সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এরপর চলে প্রতিমা বিসর্জন, যা দুর্গাপূজার শেষ আনুষ্ঠানিকতা। রাজধানীর অর্ধশতাধিক মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় বুড়িগঙ্গার বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটসহ পাঁচটি ঘাটে। এ ছাড়া মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তুরাগ নদীতেও প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। সড়ক ও বিসর্জন ঘাটে ছিল পুলিশের টহল।
নদীতে ছিল নৌ পুলিশের টহল। দায়িত্বে ছিল ফায়ার সার্ভিসের টিমও। এ ছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত ছিল র্যাব। কোস্টগার্ডসহ সাদা পোশাকেও ছিলেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
পুুলিশ বলছে, ওয়াইজঘাট, বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট ছাড়াও পুরান ঢাকার আরো তিনটি ঘাটে এবার প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। ঘাটগুলো হলো- লালকুঠি ঘাট, মিলব্যারাক ঘাট ও পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট। নি-িদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঘাটগুলোতে সম্পন্ন হয়েছে প্রতিমা বিসর্জন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবারের দুর্গোৎসব হয়েছে। এবার কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছি।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। বঙ্গভবনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। করোনার কারণে আয়োজনটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে করা হয়। এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা।
ঢাকের বাদ্য, খোল-করতাল ও গান বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, নেভাল-২, অভয় মিত্রঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে দুপুরের পর থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সনাতন ধর্মীদের ঢল নামে।
পাশাপাশি অভয় মিত্রঘাট, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এ বছর চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জে এম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৮২টি পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাহফুজুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকায় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement