২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ছিল ষড়যন্ত্রমূলক : মেয়র আইভী

নাসিক নির্বাচন নিয়ে সিপিডির ভার্চুয়াল সংলাপ; নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ছিল নিকৃষ্টমানের: ড. বদিউল আলম
-

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, এই নির্বাচনটি আমার জন্য খুব টাফ (কঠিন) ছিল, কারণ নির্বাচন ঘিরে ঘরে বাইরে বিভিন্ন দিক থেকে ষড়যন্ত্র হয়েছে। নির্বাচনটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। নারীরা যাতে ভোট দিতে না পারে তার জন্য কোনো অজ্ঞাত কারণে তাদের বুথ কেন্দ্রের তিন-চারতলায় করা হয়েছিল। ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘সেøা’ করে দেয়া হয়। তৈমূর কাকা যাদের সাথে হাত মিলিয়ে ছিলেন তারা ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিল।
গতকাল শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন : জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞতা শীর্ষক’ এক ভায়াল সংলাপে এসব কথা বলেন আইভী। তিনি জানান, ষড়যন্ত্রে পড়লেও জনগণের আস্থা আর ভালোবাসার কারণে সেখান থেকে বের হতে পেরেছেন তিনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আইভী বলেন, ‘ তিনটি মেয়র নির্বাচন করেছি। তিন নির্বাচনের ফ্লেভার তিন রকম ছিল। কোনো নির্বাচনেই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিলাম না। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নির্বাচন করেছি। যদিও আমার দল আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল; কিন্তু প্রতিবারই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে সাধারণ জনগণকে আস্থায় এনে নির্বাচনে জিততে হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে আইভী জানান, হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার কর্মীরা মানব বর্ম তৈরি করে আমাকে বাঁচিয়েছে। তার পরও আমি কোনো বাহিনী তৈরি করেনি। কারণ আমার আস্থা আমার জনগণ। আমার লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। তাই সারাক্ষণ মানুষের সাথে মিশে কাজ করেছি। আমি কখনো কারো কাছ থেকে বেনিফিট নেইনি।
ইভিএমে ভোট কম পড়েছে বলে জানান আইভী। তিনি বলেন, এমন না যে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। আমার অসংখ্য ভোটার ফেরত গেছে।’
নারী ভোটার প্রসঙ্গে তিনবারের মেয়র আইভী বলেন, ‘আমি এবার একটি বিষয় দেখলাম, নারী ভোটারদের তিন-চার তলায় নেয়া হয়েছে। কী কারণে নেয়া হলো, আমি জানি না। অনেক ভোটকেন্দ্রে বুথ কমিয়ে দেয়া হয়েছে রহস্যজনকভাবে। কেন করা হলো আমি জানি না। আরো কিছু কারণ আছে, যা আমি এখানে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি না।’
নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার যাদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন তারা ভোটে ভয়াবহ কাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তৈমূর আলম বিএনপি থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। কিন্তু উনার সব উইং কাজ করেছে। বিএনপি কাজ করবে- এটা সত্য। কিন্তু বিহাইন্ডে তিনি যাদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন, তারা ভোটে ভয়াবহ ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। সেটা কাউন্সিলরদের মধ্যে বা নিজেদের মধ্যে করার চেষ্টা হয়েছে। এমনটি হলে স্থানীয় নির্বাচন আর উৎসবমুখর হবে না।
ধর্মীয় উসকানি দিয়েও অনেক অপপ্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে নাসিক মেয়র বলেন, আমি নাকি মসজিদের জায়গা ভেঙে দিয়েছি, আমি নাকি ‘জয় বাংলা’ পড়ে মরতে চাই, কালেমা পড়ে নয়- এসব কথা ছড়ানো হয়েছে। আমি মসজিদের জায়গা ভাঙিনি, বরং সাতটা মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছি। মন্দির করেছি, শ্মশান করেছি, গির্জা করেছি। আমি ঘোমটা কেন দিলাম না, এ নিয়েও অপপ্রচার হয়েছে। আমার কাছে অবাক লাগে- উনারা এত লেখাপড়া করা মানুষ, এত মিথ্যা কথা কিভাবে বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। উন্নয়নও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে।
সুজনের ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার এখন দেশে ও দেশের বাইরে চাপে রয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে তা ছিল নিকৃষ্ট মানের। এই ইভিএম ১১ গুণ বেশি দাম দিয়ে কেনা হয়েছিল। জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এই এভিএম কেনার সময় নথিতে স্বাক্ষর করেনি। এই ইভিএমে কাগজের কোনো ব্যাকআপ নেই। তাই এখানে কারচুপি হয়েছে বা হয়নি কোনো কিছু প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই খরার সময় মানুষ একটি সৎ নেতৃত্ব পেয়েছেন। আইভী আওয়ামী লীগ ছাড়েননি। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতৃত্ব থেকে বিযুক্ত হয়েছেন। তিনি নাসিক নির্বাচন ‘ভোটিং বিহেভিয়ার’ নিয়ে গবেষণার জন্য আহ্বান জানান।
তৈমূর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেনি উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিএনপি দেখেছে তৈমূর নির্বাচনে জয়ী হয় কি না। জয়ী হলে তাকে বহিষ্কার করা হতো না। সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননও একই কথা বলেন। তিনি নির্বাচন কমিশন আইনের মাধ্যমে কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।


আরো সংবাদ



premium cement