২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবি ছাত্রী ইলমার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হয়নি এক মাসেও

ইলমা চৌধুরী মেঘলা - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৬) মৃত্যুর রহস্য এক মাসেও উদঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় ইলমার পরিবার বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত স্বামী ইফতেখার গ্রেফতারের পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

কিন্তু ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ইলমার লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়ার অজুহাতে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্তকারী পুলিশ অনেকটাই নীরব ভূমিকায়। এ অবস্থায় ইলমার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আদৌ জানা যাবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কিত পরিবার। তাদের অভিযোগÑ ইলমার স্বামীর পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে।

বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া জানান, নিহতের স্বামী ইফতেখারকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তিনি বলেন, অপর দুই আসামি ইলমার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমরা তাদের বাসায় ও সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়েছি। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি এখন তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আশা করি, শিগগিরই প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।
এ দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, নিহতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো পৌঁছেনি। শিগগিরই রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করেন। মর্গ সূত্র জানায়, পোস্টমর্টেমের সময় ইলমার লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্নহ্ন পাওয়া গেছে। তার গলায়ও ফাঁসের মতো জখম পাওয়া গেছে।

গত ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর বনানীর ২ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর বাড়িতে স্বামীর বাসায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলমা। পুলিশ ওই বাসা থেকে ইলমার লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তার গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। এ ছাড়া গলায় কালো জখম ছিল। ঘটনার পর থেকেই পরিবার ও সহপাঠীরা এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করছেন।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদি হয়ে ১৫ ডিসেম্বর বনানী থানায় হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, তার মা শিরিন আমিন ও ইফতেখারের পালক বাবা মো: আমিনকে আসামি করা হয়েছে।

ইলমার মা শিল্পী চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, এটি আমরা নিশ্চিত। তার শরীরে আমরা আঘাতের চিহ্নহ্নহ্ন দেখেছি। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টেও আত্মহত্যার কোনো আলামত উল্লেখ নেই; কিন্তু প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা চলছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে পুলিশ এখন অনেকটাই নীরব। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইলমার স্বামী ইফতেখারের বাবা-মা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এ জন্য পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। অথচ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ইলমার মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ইলমার মা বলেন, ইফতেখার ও তার পরিবার তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। ফ্রান্সে বিয়ের বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়নি। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মেয়েটাকে পরিকল্পিতভাবে তারা হত্যা করেছে। তিনি বলেন, মেয়েটার শরীরে যে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট যে, তাকে হত্যা করেছে তারা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ইলমার সাথে বিয়ের তিন-চার মাস পর স্বামী ইফতেখার কানাডা চলে যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় ইলমাকে সন্দেহ। ইফতেখারের ধারণা ছিল- ইলমার কারো সাথে পরকীয়া রয়েছে। এই সন্দেহে ইলমার ওপর শুরু করে মানসিক নির্যাতন। তাকে কারো সাথেই যোগাযোগ করতে দিত না। এমনকি পরিবারের সাথেও না। ইফতেখার বিদেশ থেকেই তাকে হুমকি দিতÑ দেশে আসার পর তাকে শিক্ষা দেবে।

এ দিকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে স্ত্রীকে পেটানোর কথা শিকার করেছেন কানাডা প্রবাসী স্বামী ইফতেখার আবেদীন; কিন্তু কী কারণে তিনি মারধর করেছেন সে বিষয়টি খোলাসা করেননি পুলিশের কাছে। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে ইফতেখারকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে শুনানি শেষে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম।

এর আগে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইলমাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ইফতেখার। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক তথ্য দিয়েছেন। ইফতেখার তার প্রথম স্ত্রী ফ্রান্স প্রবাসীকে নির্যাতনের বিষয়েও মুখ খুলেছেন। প্রথম স্ত্রী ছাড়াও তিনি আরো অনেক নারীর সাথে পরকীয়া করতেন। তার পরকীয়া ছাপিয়ে ইলমাকে সন্দেহ করতেন। এসব কারণে ইলমার বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের সাথে চলাফেরা নিষেধ করা হয়। এমনকি ইলমার বাবার বাড়িতে থাকতেও পছন্দ করতেন না তিনি। এসব বিষয় নিয়ে ইলমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে গত ১২ ডিসেম্বর কাউকে কিছু না জানিয়েই কানাডা থেকে হঠাৎ দেশে চলে আসেন।

সূত্র আরো জানায়, ইফতেখার দেশে ফিরেই ইলমার সাথে কথাকাটাকাটির জেরে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ইলমা তার বাবার বাড়ি ফিরে যেতে চাইলে তাকে সেখানে যেতে দেননি। রিমান্ডে ইফতেখার বলেন, ওই সময় ইলমাকে তার বাবার বাড়ি যেতে না দিয়ে বলেছেন, তার লাশ যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement