২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভার্চুয়াল সংলাপে বিশিষ্টজনরা

প্রশাসনের মনোভঙ্গিই এখন ভূমি আইন বাস্তবায়নের প্রধান বাধা

-

সরকারের সদিচ্ছা ও অর্পিত সম্পত্তি আইনের সংশোধনী হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের মনোভঙ্গির কারণে মাঠপর্যায়ে আইনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রান্তিক নারী, ধর্মীয়, জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চিন্তায় ও আচরণে পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, নারী ও কৃষকদের শ্রমে দেশের খাদ্যচাহিদা পূরণ হলেও তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার।
নারী ও সংখ্যালঘুদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ক গতকাল এক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সংলাপটির আয়োজন করে। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ডরিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) তসলীমুল ইসলাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম, রানী ইয়েন ইয়েন, চাকমা রানী। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সভাপতিত্ব করেন নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশী কবির।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নারীর ভূমি তথা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড তৈরির দাবি তোলা হলেও এ বিষয়ে সরকারের আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। এ ছাড়াও প্রান্তিক আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়াকে দায়ী করেছেন তারা। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ভূমি কমিশন গঠিত হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের অভাবে এবং বিধিমালা না হওয়ার কারণে কমিশন কাজ করতে পারছে না।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সদয় আগ্রহের কারণে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়। এ ছাড়াও আদালতের রায় পাওয়ার পরও প্রশাসনের ইতিবাচক মানসিকতার অভাবে ভুক্তভোগীরা তাদের জমির মালিকানা ফেরত পাচ্ছেন না। ‘খ’ তফসিল বাতিল হওয়ার পরও ভূমি প্রশাসন থেকে নামজারি হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আট দফা নির্দেশনাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি মনিটরিং সেল খোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। সরকার যেহেতু এসডিজি পূরণে আন্তরিক, তাই এর মূলমন্ত্র অনুযায়ী পিছিয়ে থাকা সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষিবান্ধব একজন মানুষ। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তিন ফসলাজমি কোনোভাবেই কাউকে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে আমরা দুই ফসলি কৃষিজমি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একই নীতি ব্যবহার করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান আগেও ছিল, ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীর উত্তরাধিকার নির্দিষ্ট আছে। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা সম্মিলিতভাবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ভূমিবিষয়ক মামলা, সহিংসতা ও জটিলতা দূরীকরণে সরকার ভূমি দখলিস্বত্ব আইন সংশোধনের কাজ করছে। আগামী জুলাই মাস থেকে অনলাইনে ভূমির খাজনা পরিশোধ কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি খাস জমি উদ্ধার ও ভূমিহীনদের মাঝে তা বিতরণের বিষয়টি মনিটরিং করছে। ভূমিবিষয়ক তথ্যভাণ্ডারও খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যদি সঠিক সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়, আর সেটা যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো। আইনের শাসন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সমাজের দুর্বলতম অংশের জন্য। সিস্টেম যদি ঠিক করা যায় তাহলে এখানে ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের প্রত্যাশাটা যেন প্রশাসনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। তারা যেন সেটা ধারণ করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement